চট্টগ্রাম ফটিকছড়ি উপজেলার হারুয়ালছড়িতে মোঘল আমলের ফকিরপাড়া জামে মসজিদ চত্বরে তরুণ-তরুণীর ধারণ করা একটি নাচের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। আর এ নিয়ে শুরু হয়েছে তীব্র সমালোচনা। প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে সমাজের নানান স্থরের মানুষ, জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় মুসল্লিদের মাঝেও।তবে নাচে অংশ নেওয়া তরুণ-তরুণীদের ধরতে অভিযান চলছে বলে জানালেন ভুজপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহবুবুল হক। তিনি বলেন, ভিডিওটি দেখেছি। তরুণ-তরুণীদের পরিচয় এখনও অজানা। এলাকায় সমালোচনার ঝড় দেখে বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। এটি ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত। ভিডিওতে দেখা গেছে, মসজিদের সিঁড়ি বেয়ে নিচে সামনের খোলা জায়গায় বাংলা একটি গানের সঙ্গে দুই তরুণ-তরুণী নানা অঙ্গভঙ্গি করে নাচছেন। তবে ভিডিওটি কবে ধারণ করা হয়েছে এবং কারা করেছেন তা এখনো জানা যায়নি।পাইন্দং গ্রামের বিশিষ্ট ব্যবসয়ী মো. নাছির উদ্দিন চৌধুরী নিজের ফেসবুকে ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, ‘এই মসজিদে অনেক মানুষ হৃদয়ের পরিতৃপ্তির আশায় নামাজ আদায় করেন। অপরিণামদর্শী তরুণ-তরুণীর এরূপ আচরণে মসজিদের পবিত্রতা নষ্ট হয়েছে। ভিডিও ধারণকারী তরুণ-তরুণীদের বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা দরকার।’ভূজপুর জামিয়া আবু বক্কর সিদ্দীক (রা.) আল-ইসলামিয়া মাদ্রাসার নির্বাহী পরিচালক মাওলানা মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘পবিত্র স্থান মসজিদের সামনে বেআদবী কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায়না। অবিলম্বে ওই তরুণ-তরুণীকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।’এলাকার পঞ্জেগানা নামাজ আদায়কারী মুসল্লী মো. শফিউ আলম বলেন, ‘এটি ঐতিহ্যবাহী মোগল আমলের মসজিদ। মসজিদের স্থাপত্যশৈলী, নয়নাভিরাম দৃশ্য এবং ঐতিহ্যবাহী মসজিদ বলে এখানে বহু দুর-দুরান্ত থেকে দীর্ঘদিন ধরে পঞ্জেগানা নামাজ আদায় করতে আসেন। এছাড়াও দর্শনার্থীরা এটি ঘুরে দেখেন, জিরান এবং ছবি তুলে নানান মিডিয়ায় প্রচার করেন। এটি অবশ্যই ইতিবাচক। কিন্তু মসজিদের সামনে এভাবে নাচ-গানের দৃশ্যায়ন ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত। ভবিষ্যতে এখানে দর্শনার্থীদের আনাগোনায় সতর্কতা এবং বিধিনিষেধ আরোপের দাবী জানাচ্ছি।’হারুয়ালছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও মসজিদ কর্তৃপক্ষ মো. ইকবাল হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘আসলে নয়নাভিরাম মসজিদটি দেখতে দুর-দুরান্ত থেকে প্রতিদিন হাজারো মানুষ আসে। কে, কখন-কি করছে সেটি দেখার মতো কোন স্কোফ কারো কাছে নেই। যেহেতু এটি একটি পবিত্র স্থান সেহেতু এটির মান মর্যাদা রক্ষা করা ধর্মপ্রাণ সবার দায়িত্ব। আমি আশা করবো সকলের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে। এ ধরনের গর্হিত কাজ থেকে সকলে বিরত থাকবে।’উল্লেখ্য, উপজেলার হারুয়ালছড়ি গ্রামে ফটিকছড়ি-বারৈয়ারঢালা সড়ক লাগোয়া চৌধুরী বাড়ি সংলগ্ন অন্তত সাত’শ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যের স্মারক মোঘল আমলের ফকিরপাড়া শাহি জামে মসজিদ। এটি ফকিরপাড়া গায়েবি মসজিদ নামেও এলাকায় সমাদৃত। গত ২০১৫ সালে এলাকার ধনাঢ্য ব্যবসায়ী মো. দিদারুল আলম চৌধুরী নিজস্ব অর্থায়নে নতুন নকশায় নয়নাভিরাম মসজিদটি পূণ:নির্মাণ করা হয়।
Source: সময়ের কন্ঠস্বর