চট্টগ্রাম দক্ষিণ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় গরুর বাজার কক্সবাজার সদরের খরুলিয়া বাজার। কালের পরিক্রমায় বাজারটির ইজারামূল্য এতো বেশি বেড়েছে; যে কারণে লোভাতুর দৃষ্টি পড়েছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্রের। ইতিপূর্বে এমনকি ষড়যন্ত্র করে অতি সুক্ষ্ম কৌশল খাটিয়ে বাজারটির ইজারা যোগ্যতাও নস্যাত করা হয়েছে কয়েকবার। কিন্তু খরুলিয়া বাজার থেকে সরকার গত দুই বছর প্রায় পাঁচ কোটি টাকার রাজস্ব পেয়ে থাকলেও আগামী বাংলা সনে উল্লেখযোগ্য রাজস্ব পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে আসছে। সম্প্রতি বাজারটি টার্গেট করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের স্থানীয় ১৮ জনের একটি সক্রিয় সিন্ডিকেট বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এমনকি সিন্ডিকেটটির বাইরে গিয়ে শিডিউল জমা দিতে যাওয়া রফিক নামের এক যুবককে জনসম্মুখে তুলে নিয়ে গিয়ে মারধরের পর জিম্মি করে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে মুক্তিপণ আদায় করার মত ঘটনাও ঘটেছে। এই সিন্ডিকেটটি ইজারাপ্রার্থীদের কাউকেই আবেদন জমা দিতে না দেওয়ায় এই আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হতে যাচ্ছে রাজস্ব খাত।গেল বছর সর্বশেষ বাজারটির ইজারা মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ২ কোটি ১০ লাখ টাকায়। উপজেলা প্রশাসনের মতে- প্রায় আড়াই থেকে তিন কোটি টাকা মূল্যের এই বাজার আগামী সনের জন্য ৩৫ টি ফরম কিনলেও দু’য়েকজন ছাড়া কোনো বৈধ ইজারাদার ফরম জমা দেননি। যারা জমা দিয়েছেন তাদেরও অনেকটা প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হয়েছে। রহস্যজনকভাবে এতগুলো ফরম ক্রয় করা ইজারাদার উদাও হয়ে যাওয়ার পেছনে ১৮ জনের এই অপরাধী চক্র কাজ করেছে বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। অথচ পূর্বের সব ইজারাদার নির্দিষ্ট ডাক মূল্য পরিশোধ করেও আর্থিকভাবে হয়েছেন স্বাবলম্বি।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খরুলিয়া বাজারের পূর্বের ইজারা সংশ্লিষ্ট চিহ্নিত এই সিন্ডিকেটের যোগসাজসে পরিকল্পিতভাবে চলতি সনে বাজারটির দরপত্র সংগ্রহকারীদের হুমকি কিংবা নানা প্রলোভনে আবেদনপত্র জমা দিতে বাধা সৃষ্টি করে ফরম হাতিয়ে নিয়েছেন। যার ফলে বাজারটি ইজারা বঞ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এভাবেই একটি প্রতিষ্ঠিত বাজারের ইজারা ডাক নষ্ট করে দিয়ে ভূমি অফিসের অধীনে খাস কালেকশনে নিতে অপচেষ্টা চালাচ্ছে চক্রটি। পূর্ব পরিকল্পনা মাফিক উপজেলা প্রশাসন ভূমি অফিসের উপর বাজারটির খাস কালেকশনের দায়িত্ব গেলে লোকবল সংকটের দেখিয়ে এবং খরুলিয়া বাজার ঘিরে গড়ে উঠা সিন্ডিকেটের লুটপাটের কারণে ওই খাস কালেকশনও আদায় করা হবেনা ঠিক মতো। এমন আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টা।বাজারটিকে ঘিরে তৎপর সিন্ডিকেটটির অঘোষিত আয়নাবাজি ইজারা কার্যক্রমের মতো লুটপাটের চিত্রও উঠে এসেছে। শুধু তাই নয়, তিন কোটি টাকার বাজারটি খাস কালেকশনে নিয়ে যেতে আঁড়ালে বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীদের একটি চক্র আগের মতোই টাকা উত্তোলন করে ভোগ করতে নানা রূপরেখা সাজিয়ে ফেলেছেন ইতিমধ্যে। একারণে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক কিংবা সামাজিক বিরোধে জেরে দ্বন্দ্বে থাকা ব্যক্তিরাও “বাঘে-মহিষে”র মতে এক ঘাটে জল খেতে দেখা গেছে। সব মিলিয়ে- ইজারা প্রক্রিয়ার এ চিত্রই বলে দিচ্ছে, এবার চট্টগ্রাম দক্ষিণ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় বাজার খরুলিয়া বাজারের ইজারা নস্যাত করতে সিন্ডিকেটটি আটঘাট বেঁধে মাঠে নেমেছেন। ফলে এবারও এই বাজার থেকে ন্যূনতম রাজস্বও সরকারি কোষাগারে জমা না পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।দরপত্র সংগ্রহকারীরা জানান, বাজারটির ইজারা নষ্ট করে নিজেদের পকেট ভারি করতে সিন্ডিকেটটির অভ্যন্তরে লিখিত চুক্তি হয়েছে। ইতিপূর্বে দফায় দফায় বৈঠক করেছে তারা। দরপত্র সংগ্রহকারীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে অর্থের প্রলোভন কিংবা হুমকি দিয়ে ফরমগুলো তাদের কব্জায় নেওয়ার কাজও প্রায় শেষ করেছেন। যে কয়েকজন তাদের কথা কর্নপাত করেনি; তাদের দমাতে জড়ো করেছেন ভাড়াটে সন্ত্রাসীদেরও। শুধু তাই নয়, ওই সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করে নির্যাতনের খড়গ নেমে এসেছে কয়েক জনের উপর। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাজার সংশ্লিষ্ট কয়েকজন বলেন, জামায়াত-বিএনপির একটি সিন্ডিকেট এসে আমাদের নানা প্রলোভন দেখিয়ে ফরমটি নিয়ে যায়। তবে তারা প্রতিশ্রুতি দেন বাজারটি খাস কাশেকশনে নিয়ে যেতে পারলে আমাদের এককালীন মোটা দাগের টাকা দেবেন। আবার কেউ যদি ফরম দিতে অনীহা প্রকাশ করে তাদের নানা ধরনের হুমকিও দেন বলে তারা অভিযোগ করেছেন।তাদের মতে, বাজারটির ইজারা মুল্য বেশি হলে সাধারণ ক্রেতা-বিক্রেতা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে, একারণে তারা খাস কালেকশনে নিয়ে যেতে চেষ্টা করছেন। সিন্ডিকেটটি এমন প্রচারণা চালালেও মুলত রাজস্ব লুপাট করে নিজেদের পেট মোটাতাজা করতেই তারা সংশ্লিষ্টদের বোকা বানাচ্ছেন। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন জায়গা থেকে উৎশৃঙ্খল যুবকদের জড়ো উপজেলা ভবনে ত্রাস সৃষ্টি করার পেছেনে কলকাঠি নেড়েছেন ওই ১৮ জনের সিন্ডিকেট এমন অভিযোগ করেছেন তারা। জানা গেছে, হাট-বাজার ইজারা নিয়ে গত বুধবার দিনভর সদর উপজেলা ভবনে হট্টগোল হয়েছে। এসময় ছদ্মবেশী সন্ত্রাসীদের ত্রাস সৃষ্টি করা সরব উপস্থিতি কিংবা হুমকি-ধামকিতে শিডিউল জমা দিতে ভয় পয়ে ফিরে গেছেন অনেকে। আবার অনেকে বাধ্য হয়ে সিন্ডিকেটটির হাতে ফরম জমা দিয়ে আপোষ করতে বাধ্য হয়েছেন।প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শিডিউল জমা দেওয়ার শেষ দিন উপজেলা ভবনে নানা রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের সরগরম উপস্থিতি ছিল। বেলা ১১টার দিকে হঠাৎ রফিক নামের এক যুবককে মারধর করে তুলে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। শিডিউল জমা দেওয়া নিয়ে বিরোধের জেরে তাকে মারধর করা হয় বলে দাবি করেছেন তিনি। এর মধ্যে কোনো কোনো হাট-বাজারের ইজারা প্রক্রিয়া শেষ করার সময় কয়েক দফায় অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ে উপজেলা ভবনে। উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দিতে ওই বাজারটির কার্যক্রম স্থগিত করে প্রশাসন।ভুক্তভোগী রফিক বলেন, আমার হাতে খরুলিয়া এবং বাংলাবাজারের শিডিউল ছিল। সেগুলো জমা দিতে উপজেলা বভনে ঢুকার সময় খরুলিয়া বাজারের ফরমটি নানা বাহানায় তারা নিয়ে নেন। পরে বাংলাবাজারের শিডিউলটি জমা দেওয়ার সময় কিছু উৎশৃঙ্খল যুবক আমাকে আওয়ামীলীগের দোসর আখ্যা দিয়ে মারতে মারতে তুলে নিয়ে যায়। শত শত লোকের সামনে আমার সাথে এমন আচরণ করলেও কেউ প্রতিবাদ করেনি। পরে তারা একটি টমটমে করে খুরুশকুল রোডের একটি ভবনে নিয়ে গিয়ে জিম্মি করে বৈদ্যুতিক শক দেন। পরে তাদের কথামতো লক্ষাধিক টাকা দিয়ে সেখান থেকে রক্ষা পেয়েছি আমি। মুলত বাজারের ইজারা ঘিরে এমন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে তিনি দাবি করেছেন।প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, হাট-বাজার ইজারার দরপত্র নিয়ে বুধবার সকাল থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা জড়ো হন। দফায় দফায় মহড়া দিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করেন তারা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ইউএনও তেমন কোন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি। ফলে তিন কোটি টাকার বাজারটির ইজারা কার্যক্রম প্রস্তুত করতে পারেনি প্রশাসন। এ নিয়ে ইউএনওর কার্যালয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতারা জড়ো হয়ে উত্তেজনা দেখা দিলে ইজারা স্থগিত করে প্রশাসন।স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মতে, ইজারা যোগ্যতা নষ্ট করলে বাজারটি এখন উপজেলা প্রশাসনের হাতছাড়া হয়ে যাবে। অন্যদিকে চক্রটি যেকোন মূল্যে খাস কালেকশনে নিয়ে গিয়ে লুটপাট করারও বন্দোবস্ত করা হয়েছে। খাস আদায়ে ভূমি অফিসের লোকদের দায়িত্ব দেওয়া হলেও তাদের হাতে বাজারের ন্যুনতম নিয়ন্ত্রণ থাকবেনা। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতারা মিলেমিশে একাকার হয়ে তাদের পকেটে ভারী করবে সরকারি রাজস্বের কোটি কোটি টাকা। এ ক্ষেত্রে খাস কালেকশনের টাকা সরকারি কোষাগারে যতসামান্যও জমা পড়বে কীনা তা নিয়ে সচেতন মহলে দেখা দিয়েছে সংশয়।  নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি বলেন, আমরা মানুষের কাছে মুখ দেখাতে পারছি না। হাটের ইজারা নিয়ে নিজেদের মধ্যেকার কামড়াকামড়ি এখন ওপেন সিক্রেট। হাটে অনেক মধু আছে তা বলতে না পারলেও এটা বুঝি যে, বাজারটির সাথে জড়িয়ে অনেকে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে। ৮০০ টাকার একটি মুরগী বিক্রি করেলেও হাসিল দিতে হয় ৫০ টাকা। না হলে তারা এমন করবে কেন? খাস কাশেকশনে গেলে এই সুবিধা সাধারণ কৃষক ও ব্যবসায়ীদের ঘাড়ে পড়বেনা। উল্টো সিন্ডিকেটটির পকেট ভারী হবে।উপজেলা সূত্র জানিয়েছেন, খরুলিয়া বাজারের প্রায় ৩৫ টি শিডিউল কেনা হয়। কিন্তু একটি চক্র সাধারণ ঠিকাদারদের শিডিউল জমাদানে বাধা দেয়। অনেককে ফোন দিয়ে শিডিউল জমা না দিতে চাপ দেওয়া হয়। সবচেয়ে ঝামেলা খরুলিয়া বাজারের ইজারা নিয়ে। ওই বাজার নিয়ে তিনটি শিডিউল জমা দেওয়া হয়। বাজারের বিপরীতে প্রস্তুত প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা অন্যদের শিডিউল নিয়ে নেয়। এভাবে অন্যের শিডিউল জমাদান প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেওয়া হলে বিপাকে পড়েন অনেকে।কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক (ডিসি) হিসাবে মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, আপাতত বাজারটির ইজারা কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়েছে। তদন্ত করে পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Source: সময়ের কন্ঠস্বর

সম্পর্কিত সংবাদ
দলীয় প্রতীক না থাকায় উপজেলা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়বে: ইসি রাশেদা
দলীয় প্রতীক না থাকায় উপজেলা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়বে: ইসি রাশেদা

দৃঢ় সমন্বয়ের মধ্য দিয়ে প্রশাসনের আন্তরিকতায় একটি সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেওয়া সম্ভব।

তাপমাত্রার সঙ্গে বাড়তে পারে ভ্যাপসা গরম
তাপমাত্রার সঙ্গে বাড়তে পারে ভ্যাপসা গরম

দেশের কিছু অঞ্চলে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে Read more

অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

শিক্ষকদের চলমান আন্দোলনের কারণে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি।)

আমরা নিরপেক্ষ নই ,    জনতার পক্ষে - অন্যায়ের বিপক্ষে ।    গণমাধ্যমের এ সংগ্রামে -    প্রকাশ্যে বলি ও লিখি ।   

NewsClub.in আমাদের ভারতীয় সহযোগী মাধ্যমটি দেখুন