সিরাজগঞ্জ কাজিপুর উপজেলার মাইজবাড়ী ইউনিয়নে বিএনপি নেতার বালু ডাইকের পানিতে স্থানীয় কৃষকের ধান পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে।বুধবার (৬ মার্চ) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঐ উপজেলার মাইজবাড়ি ইউনিয়নের কুনকুনিয়া মৌজায় একই এলাকায় ৪টি বালুমহালের বালু উত্তোলন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। স্থানীয় যমুনা নদী হতে বাল্কহেড ড্রেজারের ও পাইপের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করে আবাদি জমির নিকট স্তুপ করায় জমিতে লাগানো ধান পানিতে ডুবে নষ্ট হচ্ছে। ঐ গ্রামের কৃষক আব্দুস সামাদের এক বিঘা ধানী জমি, চান মিয়ার দুই বিঘা ধানি জমি, মোখলেছুর রহমানের আড়াই বিঘা ধানী জমি, সোনার উদ্দিনের দুই বিঘা সহ পনেরো বিশ জন কৃষকের প্রায় বাইশ বিঘা ধানী জমি পানিতে তলিয়ে যাওয়ার পথে। এর মধ্যে অপেক্ষাকৃত নিচু আট-দশ বিঘা ধানী জমি পানির নিচে পরে নষ্ট গেছে অবশিষ্ট দশবারো বিঘা উঠতি বোরধান দুই চার দিনের ভেতরে ডুবে যাবে।সরেজমিনে কুনকুনিয়া গ্রামের কৃষক খোরশেদুল আলম, আলী আহমদ, চান মিয়া, ঠান্ডা মিয়া, মকবুল হোসেন, সজীব মন্ডল, কাদের মন্ডল, সোনার উদ্দিন, আব্দুস সামাদ সহ অনেক কৃষকের অভিযোগ করেন এই প্রতিবেদকের কাছে। তারা জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওয়াবদা বাধের ভেতরে তাদের এই জমি গুলোর অবস্থান। পলি দোআশ শ্রেণীর উর্বর জমি হলেও যমুনা নদীর পানিতে সয়লাব থাকার কারনে বর্ষাকালের আবাদ করা যায় না। শুকনো মৌসুমে ইরিবোর আবাদ করেই জীবীকা নির্বাহ করে এখান কার কৃষক পরিবার গুলো। কিন্তু চলতি বছর ইরিবোরো মৌসুম শুরুর আগেই গেল জানুয়ারি মাসে বালু ব্যবসায়ীদের এসব জমির পাশে অপরিকল্পিতভাবে যমুনার বালুর স্তুপআকারে ডাইক করে রাখে বালু ব্যবসায়ীরা। বালির স্তুপ উঁচু থেকে উঁচু করার জন্য যমুনা নদী থেকে বাল্কহেড ড্রেজারের পাইপের মাধ্যমে পানি যুক্ত কাদাবালি প্রতিদিন ফেলছে ডাইকের ওপর। এতে পানি মিশ্রিত কাদা বালি থেকে পানি চুইয়ে নিচের দিকে জমিতে গিয়ে জমা হচ্ছে। এতে বোরো আবাদকৃত ফসলি জমিতে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। এক পর্যায়ে উঠতি বোরো ধান পানির নিচে পড়ে পচে নষ্ট হচ্ছে। এতে এক ফসলী জমির বোরো আবাদ নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন এখানকার কৃষক।প্রতিকারের জন্য বালু ব্যবসায়ীদের শরণাপন্ন হয়েও কাজ হয়নি। এ বিষয়ে প্রতিকার পাওয়ার জন্য ভুক্তভোগী ৩২ জন কৃষকের স্বাক্ষর সহ একটি অভিযোগ পত্র গত জানুয়ারি মাসে বরো আবাদের শুরুর দিকে কাজিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিকট জমা দিলেও এখনও কোন সুফল মেলেনি।কুনকুনিয়া গ্রামের কৃষক আব্দুস সামাদ বলেন, ধান লাগানোর আগেই বালু ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি চারটি স্তুপাকৃত বালুর ডাইক থেকে পানি চুয়ে এসে আমাদের জমি তলিয়ে যায়।পাম্প মেশিন দিয়ে পানি সেচে আমরা ধান লাগিয়েছি। এখন আবারও বালুর ডাইক চুয়ে পানিতে তলিয়ে গেছে আমাদের বোরো ধানের জমি। বালু ব্যবসায়ীরা ক্ষমতার জোরে আমাদের ক্ষতি করে তারা জমজমাট ব্যবসায় করছে।মাছ ব্যবসায়ী আব্দুল মোমিন জানান,বর্ষাকালে আমাদের এসব জমিতে পানি থাকে। আবাদ করা যায়না। তাই সব কৃষক মিলে এসব জমিতে মাছ চাষ করি। কিন্তু এ বছর বালু চোঁয়া পানিতে সয়লাব হয়ে মাছ ভেসে যায়। এতে আমাদের প্রায় তিন লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে।ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক আলী আহমেদ বলেন, হাসিনা পালানোর পরে এরা(বিএনপি) আওয়ামী লীগের চাইতে বেশি অত্যাচার কইরত্যাছে।’ এরা কারো কথাই শোনেনা।বিএনপি নেতা মজনু,স্বপন ঠাকুর, কালু ও তারা মেম্বর যমুনা নদীর পাড়ে কিছু ফসলী জমি ভাড়া নিয়ে বালুর স্তুপ বা ইয়ার্ড তৈরি করে রমরমাব্যবসা করছে। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালানোর পর নব্য প্রভাবশালী হিসেবে এরা আবির্ভূত হয়েছেন। এরা সাধারণ মানুষের তোয়াক্কাই করছেন না।এ ব্যাপারে কাজিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার দেওয়ান আকরামুল হক বলে,বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসক মহোদয় আমাকে ফোন করেছিলেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে শীঘ্রই ব্যবস্থা নেয়া হবে।এমআর
Source: সময়ের কন্ঠস্বর