ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদী সরকারের বিদায় হলেও এখনো রয়ে গেছে ছাপ। নেত্রকোনার জেলা থেকে উপজেলা গুলোর বেশিরভাগ সরকারি ওয়েবসাইটে এখনো রয়েছে পলাতক হাসিনার ছবি। আবার কিছু কিছু ওয়েবসাইটের কর্মকর্তা বদলি হলেও দুই তিন বছরেও পরিবর্তন হয়নি তার তথ্য। ছাত্র প্রতিনিধি আর রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা বলছেন এ ধরনের কার্যক্রম কোনোভাবেই কাম্য নয়। নাগরিক দুর্ভোগ কমাতে দ্রুতই ওয়েবসাইটগুলোকে সংস্কার করা হোক। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ৭মাসের বেশি সময় পার হলেও নেত্রকোনার সরকারি দপ্তরের ওয়েবসাইট গুলোতে এখনো রয়েছে ফ্যাসিবাদ চিত্র। এতদিনেও কেন ওয়েবসাইট গুলো সংস্কার হয়নি তাই এখন প্রশ্ন সবার। জেলার পরিবার পরিকল্পনা, জেলা বীজ প্রত্যয়ন অফিস, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো, জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিস, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, উপকর কমিশনের কার্যালয়, জেলা রেজিস্টার এর কার্যালয়, বন বিভাগ সহ একাধিক সরকারি ওয়েবসাইটের রয়েছে আওয়ামী লীগের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি। একই অবস্থা উপজেলা ভিত্তিক সরকারি অফিসগুলোর এর মধ্যে দুর্গাপুর, মোহনগঞ্জ কেন্দুয়া মদনসহ প্রায় সব কয়টি উপজেলার বেশিরভাগ ওয়েবসাইটে শেখ হাসিনা সহ তার পরিবারের সদস্যদের ছবি হয়ে গেছে এখনো। কোথাও কোথাও ফ্যাসিবাদ সরকারের সাবেক এমপিদেরও ছবি রয়েছে। যেগুলো ওয়েবসাইট গুলোতে এখনো দৃশ্যমান। এইতো গেল ছবির কথা দীর্ঘ ১৬ বছর আওয়ামী লীগ সরকার ডিজিটালের নামে জেলা থেকে উপজেলা প্রায় সবগুলো সরকারি দপ্তরকেই ওয়েবসাইটের আওতায় আনে। তবে এসব ওয়েবসাইটে তথ্য কবে কখন বা কারা আপডেট করেছেন তার কোন কিছুই জানেন না সরকারি অফিসের লোকজন। যার ফলে চার-পাঁচ বছর আগে সরকারি কর্মকর্তা বদলি হলেও তার নাম ফোন নাম্বার এখনো রয়ে গেছে। তালিকায় নাম থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে একটি নেত্রকোনা রেলওয়ে স্টেশন। স্টেশন মাস্টার নাজমুল হক খান দুই বছরের আগে বদলী হয়ে ময়মনসিংহ চলে গেলেও এখনো তার নাম ও ফোন নাম্বার রয়ে গেছে নেত্রকোনার রেলওয়ে ওয়েবসাইটে । ওয়েবসাইটের নাম্বারে কল দিলে নাজমুল হক খান জানান, তিনি গত দুই বছর আগে নেত্রকোনা থেকে বদলী হয়েছেন। এই নাম্বারে ফোন দিয়ে যেমন গ্রাহক বিভ্রান্ত হচ্ছেন তেমনি বিব্রত হচ্ছেন এই কর্মকর্তা নিজেও। তিনি আরোও বলেন নেত্রকোনার বর্তমান স্টেশন মাস্টার কি কারণে ওয়েবসাইটে তার তথ্য আপডেট করছেন না তা বোধগম্য নয়। আর বর্তমান দায়িত্বে থাকা স্টেশন মাস্টার আব্দুল আল মামুন বলছেন তথ্য আপডেট করা হবে। এদিকে সরকার কোটি টাকা ব্যয়ে দৃষ্টিনন্দন জেলা ডাকঘর নির্মাণ করলেও সরকারি ওয়েবসাইটে নেই কোন কর্মকর্তার নাম নাম্বার। নামে মাত্র ওয়েবসাইট থাকলেও অনলাইন থেকে গ্রাহকরা কোন তথ্যই পাচ্ছেন না। তবে নেত্রকোনা প্রধান ডাকঘরের সহকারী পোস্ট মাস্টার মির্জা রিফাত জানান, তথ্য আপডেটের জন্য উদ্ধতন কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে। ইতিমধ্যে ময়মনসিংহ অফিসে সকল তথ্য পাঠানো হয়েছে। এদিকে বেশিরভাগ সরকারি অফিসেই অফিস চলাকালীন সময়ে কর্মকর্তা পাওয়া যায়নি। ফলে কি কারণে ওয়েবসাইটগুলোর তথ্য পরিবর্তন হয়নি তাও জানা যায়নি। জেলা সদরের জয়নগর এলাকায় বন বিভাগের অফিসে তিনজন কর্মকর্তা থাকা সত্ত্বেও অফিস টাইমে গিয়ে একজন কর্মকর্তাকে অফিসে পাওয়া যায়নি। অনলাইনে থাকা নাম্বারে ফোন করলে জানা যায় এক বছর আগে বদলি হয়ে টাঙ্গাইল চলে গিয়েছেন ওয়েবসাইটে থাকা ফোন নাম্বারের এই কর্মকর্তা। এছাড়াও হাসপাতালে সমাজসেবা কর্মকর্তা চার বছরে তিন যুগ পরিবর্তন হলো এখনো তারা আটকে রয়েছেন ২০২১ সালে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র প্রতিনিধি আজিজুর সায়েম ও জেলা ছাত্র দলের সাধারণ সম্পাদক সারোয়ার জাহান এলিন জানান, নতুন বাংলাদেশে সরকারি সেক্টরের সর্বপ্রথম পরিবর্তন আনা প্রয়োজন ছিল। তবে কি কারণে এখনো পরিবর্তন হয়নি তা খোঁজ নিয়ে দেখার পাশাপাশি দ্রুত ওয়েবসাইটগুলোকে জনসাধারণের জন্য সহজতর করতে হবে। নেত্রকোনা কালেক্টরেট স্কুলের প্রধান শিক্ষক অমলেন্দু সরকার জানান, সবকিছুই ডিজিটালাইজেশন করা হলেও এই থেকে কতটুকু সুবিধা পাচ্ছে সাধারণ মানুষ তাই হচ্ছে বড় প্রশ্ন।আইটি বিশেষজ্ঞ ফ্রিল্যান্সার আনোয়ার হোসেন জানান, ওয়েবসাইট তথ্য পরিবর্তন করা বর্তমানে সর্বোচ্চ পাঁচ থেকে দশ মিনিটের কাজ। কিন্তু জেলার আইসিটি বিভাগ থেকে তা কেন পরিবর্তন করা হচ্ছে না তা আমার বোধগম্য নয়। জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস জানান, প্রতি মাসেই সরকারি ওয়েবসাইট গুলোর তথ্য আপডেট ও পরিবর্তনের জন্য সকল কর্মকর্তাকে বলা হয় এরপরেও যদি কেউ পরিবর্তন না করে তাহলে তার বিরুদ্ধে চিঠি ইস্যু করা হবে। জেলা প্রশাসকের সরকারি ওয়েবসাইটের সাথে বিভিন্ন দপ্তরের ওয়েবসাইট রয়েছে ৭৪ টি। এছাড়াও দশটি উপজেলা, পাঁচটি পৌরসভার সহ সব মিলিয়ে জেলায় মোট সরকারি ওয়েবসাইটের সংখ্যা প্রায় ৪৫৬টি। এসআর
Source: সময়ের কন্ঠস্বর