কুড়িগ্রামের উলিপুরে তিস্তা নদীর ধুধু বালুচরে বিস্তৃর্ণ চরে স্ট্রবেরি ক্ষেত। বেলে ও দোআঁশ মাটির সংমিশ্রণে তিস্তার চরে দেশের বৃহৎ স্ট্রবেরি চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তরুণ উদ্যোক্তা আব্দুর রাজ্জাক ও হারুনুর রশিদ। তারা দুজনে প্রবাস ফেরত। চরে বাণিজ্যিকভাবে স্ট্রবেরি চাষ করে কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি দেশে বসেই বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের লক্ষ্য ছিল তাদের। কিন্তু সঠিক জাতের চারা না পাওয়ায় সেই স্বপ্ন ভেস্তে যেতে বসেছে। অপার সম্ভাবনার কৃষি এই ফলনে বড় বাধা হয়েছে চারা জাত। ফলে প্রায় দেড় কোটি টাকা বিনিয়োগ করে পুঁজি হারাতে বসেছেন তারা।সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার বজরা ইউনিয়নের তিস্তা নদীর বালু চরে দেশের বৃহৎ স্ট্রবেরির চাষ করা হয়েছে। প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে ১২ একর জমিতে স্ট্রবেরি চাষ হয়েছে। বিস্তৃর্ণ ধুধু বালু চরে সবুজের সমারোহ। কোথাও কোথাও লাল ফলে আবৃত হয়ে আছে। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে গত নভেম্বর মাসে ৬টি জাতের সাড়ে তিন লাখ স্ট্রবেরি চারা লাগিয়েছে অ্যাসেট অ্যাগ্রো নামের একটি প্রতিষ্ঠানের এই দুই উদ্যোক্তা। স্ট্রবেরি চাষের শুরুতে চমক সৃষ্টি করলেও বর্তমানে হতাশায় ভুগছেন তারা। প্রায় সাড়ে তিন লাখ স্ট্রবেরি গাছ থাকলেও ফলন না আসায় লোকসান গুণতে হচ্ছে।তরুণ উদ্যোক্ত আব্দুর রাজ্জাক বলেন, অনেক স্বপ্ন নিয়ে এখানে স্ট্রবেরি চাষ শুরু করি। সুস্বাদু ও পুষ্টিকর এই বিদেশি ফল জেলার চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করার ইচ্ছা ছিল। এই ফল খুচরা বিক্রি হয় ৭০০ হতে ৮০০ টাকা কেজি। চরে আলু, গম, ভুট্টার চেয়ে স্ট্রবেরিতে অনেক লাভ। চারা রোপণের ৪৫ হতে ৬৫দিনের মাথায় ফলন আসতে শুরু করে। প্রতি একরে ১০টন করে ফলন লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও তা অর্জন করা সম্ভব হয়নি। চারার গুণগত মান খারাপ হওয়ায় সে আশায় গুড়ে বালি। এখন লাভ তো দূরের কথা দেড় কোটি টাকা বিনিয়োগ করে পাঁচ লাখ টাকার ফলন উৎপাদন করা সম্ভব হবে না বলেও জানান এ উদ্যোক্তা।চরের বাসিন্দা আব্দুল মজিদ, আব্দুল হামিদ, ও মিনহাজ আলী জানান, শুরুতে তারা বজরা ইউনিয়নের সাতালস্কর চরে এসে জমি নির্বাচন করে। প্রতিদিন এই চরের বেশ কিছু কৃষক স্ট্রবেরি ক্ষেতে শ্রম দিতেন। মজুরি হিসেবে দৈনিক ৫০০ টাকা করে পেতেন। আমরা তিনজন এখানে মাসিক ১৫ হাজার টাকা বেতনে কাজ শুরু করি। অনেক আশা নিয়ে স্ট্রবেরি চারা গাছগুলো লালন পালন করি। কিন্তু সঠিক সময়ে কাক্সিক্ষত ফলন না আসায় লোকসান গুণতে হচ্ছে। কিন্তু এবার স্ট্রবেরি চাষে লাভবান হলে এ অঞ্চলে ব্যাপক এই ফল চাষাবাদে হতো। কৃষি বিভাগের দায়িত্বহীনতা আর চারা নির্বাচনে ভুল হওয়ায় বিশাল ক্ষতি হয়েছে বলেও দাবি করেন তারা।কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণের উপপরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, উলিপুরের বজরায় তিস্তা নদীর চরে ১২ একর বালু জমিতে স্ট্রবেরি চাষ করেছে অ্যাসেট অ্যাগ্রো নামে একটি প্রতিষ্ঠান। আমরা উপজেলা কৃষি বিভাগের মাধ্যমে তাদেকে কারিগরি সহায়তা ও পরামর্শ দিয়েছি। শীত মৌসুমে স্ট্রবেরি চাষ হয় এবং কুড়িগ্রামের আবহাওয়া স্ট্রবেরি চাষের জন্য উপযোগী। তারা যদি সাফল্য পায় তাহলে জেলা জুড়ে স্ট্রবেরি চাষ সম্প্রসারণের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হবে।এমআর
Source: সময়ের কন্ঠস্বর