চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় অবস্থিত রাষ্ট্রীয় অংশীদার প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেড (এসএওসিএল) এ দুর্নীতির জাল ফেঁদে অর্থ আত্মসাতের এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা ফাঁস হয়েছে। প্রায় এক দশক আগের এই জালিয়াতির খুঁটিনাটি অনুসন্ধানে উদ্ঘাটিত হওয়ার পর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) রাষ্ট্রীয় অর্থ আত্মসাতের দায়ে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছে।দুদকের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এসএওসিএল এর তিন কর্মকর্তা যোগসাজশ করে ৯০ লাখ ৩ হাজার ৫০০ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। প্রথম ঘটনায় চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানিকৃত লুব্রিকেন্ট অয়েল খালাসের নামে ৭৮ লাখ টাকা খরচ দেখিয়ে আত্মসাৎ করা হয়, আর দ্বিতীয় ঘটনায় প্রতারণার মাধ্যমে ১২ লাখ ৩ হাজার ৫০০ টাকা লোপাট করা হয়।অভিযুক্তদের মধ্যে আছেন, এসএওসিএল এর ম্যানেজার (এডমিন) বেলায়েত হোসেন (৫৭), ব্যবস্থাপক (উৎপাদন) কামরুল হোসেন (৫২) এবং উপব্যবস্থাপক (নিরীক্ষা) আতিকুর রহমান (৪৫)। তাদের সহায়তা করেছেন বিভিন্ন ব্যবসায়ী, যার মধ্যে রয়েছেন এমআই চৌধুরী অ্যান্ড কোং-এর পরিচালক মোসাম্মৎ ফেরদৌস আরা (৫২), প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ফাইয়াজ ফারহান (৩৪), ফেমাস ইলেক্ট্রিক অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক্সের প্রোপাইটর হারিছ উদ্দিন, সদরঘাট এলাকার নারায়ণ চক্রবর্তী ও তার স্ত্রী রীতা চক্রবর্তী।২০১৪ সালের ১৬ জুন চট্টগ্রাম বন্দরে এসএওসিএল এর আমদানিকৃত লুব্রিকেন্ট অয়েল খালাসের জন্য ৭৮ লাখ টাকা ব্যয়ের একটি ভাউচার তৈরি করা হয়। কিন্তু নিয়মবহির্ভূতভাবে উক্ত ভাউচারে অনুমোদনকারীর স্বাক্ষর ছিল না। বরং অভিযুক্ত কর্মকর্তারা নিজেরাই স্বাক্ষর দিয়ে ব্যাংকের মাধ্যমে তিনটি চেকে সেই টাকা উত্তোলন করেন এবং নিজেদের মধ্যে বণ্টন করেন।দুদকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, এই টাকার বিল পরিশোধ করা হয় ফেমাস ইলেকট্রিক অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স নামে একটি প্রতিষ্ঠানের নামে। এসএওসিএল-এর তিন কর্মকর্তা বেলায়েত, কামরুল ও আতিকুর নিজেদের স্বাক্ষরেই পেমেন্ট অর্ডার প্রস্তুত করে ব্যাংক এশিয়া লিমিটেডের ইপিজেড শাখার মাধ্যমে তিনটি চেকের মাধ্যমে অর্থ উত্তোলন করেন।প্রথম চেক: ফেমাস ইলেকট্রিক অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স এর নামে ২৬ লাখ টাকা।দ্বিতীয় চেক: রীতা চক্রবর্তীর নামে ২৬ লাখ টাকা।তৃতীয় চেক: নারায়ণ চক্রবর্তীর নামে ২৬ লাখ টাকা।এরপর এই অর্থ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন একাউন্টে হস্তান্তর করা হয় এবং আত্মসাৎ করা হয়।এছাড়াও, আলাদা আরেকটি ঘটনায় এসএওসিএল এর এই তিন কর্মকর্তা প্রতারণার মাধ্যমে ১২ লাখ ৩ হাজার ৫০০ টাকা আত্মসাৎ করেন। এই ঘটনায় কোনো ব্যবসায়ীর সংশ্লিষ্টতা না থাকলেও, রাষ্ট্রীয় অর্থ লোপাটের প্রক্রিয়া একই ছিল।দুর্নীতি দমন কমিশনের চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয় -১ এর সহকারী পরিচালক রাজু আহমেদ বাদী হয়ে গতকাল সোমবার মামলাগুলো দায়ের করেন। বিষয়টি সময়ের কণ্ঠস্বর-কে নিশ্চিত করেছেন দুদকের চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়-১ এর উপ-পরিচালক সুবেল আহমেদ।তিনি বলেন, কমিশনের নির্দেশে মামলা দুটি দায়ের করা হয়েছে। তদন্তের মাধ্যমে অন্য কারও সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে সেটিও আমলে নেওয়া হবে।দুদকের দায়ের করা মামলায় বেলায়েত হোসেন, কামরুল হোসেন এবং আতিকুর রহমানকে উভয় মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা শুধুমাত্র বড় অঙ্কের অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় অভিযুক্ত হয়েছেন।এই ঘটনা চট্টগ্রামের ব্যবসায়িক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের ভেতরে দুর্নীতির এমন নিখুঁত নেটওয়ার্ক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরে আসার পরই বিষয়টি তদন্তের আওতায় আসে।বিশ্লেষকরা বলছেন, দুর্নীতির এই ভয়াবহ চিত্র কেবল এসএওসিএল-এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। যদি সঠিকভাবে তদন্ত করা হয়, তাহলে হয়তো আরও বহু প্রতিষ্ঠানেই এমন জালিয়াতি ধরা পড়বে।এসআর
Source: সময়ের কন্ঠস্বর