By: Daily Janakantha
পদ্মা সেতুর নাটবোল্ট খোলা অন্তর্ঘাত ॥ সিআইডি
প্রথম পাতা
27 Jun 2022
27 Jun 2022
Daily Janakantha
স্টাফ রিপোর্টার ॥ পদ্মা সেতুর নাটবোল্ট খোলার ঘটনায় বিশেষ সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া পদ্মা সেতুর নাটবোল্ট হাত দিয়ে খোলা সম্ভব নয়। তবে নাটবোল্ট এখনও উদ্ধার করা হয়নি। গ্রেফতারকৃত বায়েজিদ তালহা যে প্রাইভেটকারে পদ্মা সেতুতে গিয়েছিল, সেখানে বসে থাকা তার বন্ধু মোবাইল ফোন ধারণকারী কায়সারকে খোঁজা হচ্ছে। এদিকে বায়েজিদকে শরীয়তপুরের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ৭ দিনের রিমান্ডে দিয়েছে। সোমবার মালিবাগে সিআইডির সদর দফতরে এক সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির সাইবার ইন্টেলিজেন্স এ্যান্ড রিস্ক ম্যানেজমেন্ট বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার রেজাউল মাসুদ এসব কথা জানান। এদিকে গ্রেফতারকৃত বায়েজিদকে সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
বিশেষ পুলিশ সুপার রেজাউল মাসুদ বলেন, পদ্মা সেতুর নাটবোল্ট হাত দিয়ে খোলা সম্ভব নয়। এ বিষয়ে আমরা সেতু কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও আলোচনা করে জেনেছি, এত বড় একটা স্থাপনার নাটবোল্ট হাত দিয়ে খোলা যাবে না। এতে বোঝা যায় নাটবোল্ট হাত দিয়ে খোলা হয়নি, নাটবোল্ট খোলার জন্য বিশেষ সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়েছে। কি ধরনের সরঞ্জামাদি দিয়ে নাটবোল্ট খোলা হয়েছে, সে প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি সিআইডির এই কর্মকর্তা। তবে তিনি জানান, রবিবার বিকেলে মোঃ বায়েজিদ নামের ওই যুবককে রাজধানীর শান্তিনগর এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। অভিযুক্ত বায়েজিদের বিরুদ্ধে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা করা হয়েছে।
তিনি জানান, গ্রেফতারকৃত বায়েজিদ তালহার একটি টিকটক আইডি রয়েছে। তার আরেক বন্ধু কায়সারের টিকটক আইডি থেকে রবিবার ৩০-৩৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিও আপলোড করা হয়েছে। ভিডিওটি আপলোড হওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যে বায়েজিদকে শনাক্ত করা হয়। এরপর অবস্থান নিশ্চিত করে রাজধানীর শান্তিবাগ তাকে আটক করা হয়। রেজাউল মাসুদ জানান, রবিবার সকাল ১০টা-১১টার মধ্যে ঘটনাটি ঘটেছে। বায়েজিদ ও কায়সার দুই বন্ধু মিলে প্রাইভেটকারে করে সেতুতে যায়। বায়েজিদ ড্রাইভ করছিল। জাজিরা প্রান্তের ৩০-৩৫ নম্বর পিলারের মাঝামাঝি জায়গায় সেতুতে নামে তারা। এরপর সেখানে সেতুর রেলিংয়ের নাটবোল্ট খুলে ফেলে বায়েজিদ। এই ঘটনা ভিডিও করে তার সঙ্গী। ভিডিওতে দেখা যায়, বায়েজিদ নাটবোল্ট হাতে নিয়ে পদ্মা সেতু নিয়ে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে এবং ব্যঙ্গ করে মানুষের ফিলিংসে আঘাত করে। প্রাথমিকভাবে আমাদের মনে হয়েছে, এটা একটা অন্তর্ঘাতমূলক কাজ। এটা সাবোটাজের মতো আমাদের কাছে মনে হয়েছে। আমরা তাকে দ্রুত এ্যারেস্ট করি। সিআইডি মামলাটি তদন্ত করছে। কাজটি কীভাবে করেছে জানতে চাইলে বিশেষ পুলিশ সুপার রেজাউল মাসুদ জানান, আমরা তার কাছ থেকে ডিভাইস উদ্ধার করেছি। আরও কিছু ডিভাইস, তার আরও কিছু ভিডিও এবং আগের এক্টিভিটিজ দেখে মনে হয়েছে এটা অন্তর্ঘাতমূলক কাজ। তিনি বলেন, আমরা মনে করছি, এই জিনিসটা এভাবে খোলার কথা নয়। এত বড় স্থাপনার নাটবোল্ট হাত দিয়ে খোলার কথা নয়। ভিডিওতে আমরা সবাই দেখেছি ইজিলি (সহজে) খুলে যাচ্ছে।
সিআইডির এই কর্মকর্তা জানান, গ্রেফতারকৃত বায়েজিদ পটুয়াখালী সদর উপজেলার বদরপুর ইউনিয়নের তেলীখালী গ্রামের আলাউদ্দিন মৃধার ছেলে। বর্তমানে ঢাকার শান্তিনগরে থাকে। তার টিকটক আইডি প্রকাশ করা ভিডিওতে দেখা যায়, সে নাটবোল্ট খুলে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে মন্তব্য করছে। তিনি জানান, তার অতীত অপরাধ-কর্মকাণ্ডসহ সব কিছু বিবেচনায় নিয়েই বায়েজিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। সব কিছু তদন্ত করা হবে। এই নাটবোল্ট কোনভাবেই হাত দিয়ে খোলার কথা নয় উল্লেখ করে রেজাউল মাসুদ বলেন, এটি অবশ্যই কোন ইনস্ট্রুমেন্ট (যন্ত্র) ব্যবহার করে খোলা হয়েছে, তাদের কোন পরিকল্পনা আছে। তবে আমরা এখনই এ বিষয়ে বলতে পারব না। তদন্ত করেই সব কিছু জানানো হবে।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার রেজাউল মাসুদ জানান, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় স্থাপনা পদ্মা সেতু। তার কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বড় ধরনের কোন দুর্ঘটনা ঘটতে পারত। সেতুতে কোন ঘটনা ঘটলে তার উচিত ছিল সেতু কর্তৃপক্ষ বা ওখানে থাকা পুলিশকে জানানো। কিন্তু সে সেটা করেনি। এটা অনেক বড় অপরাধ। এই ঘটনায় ওই যুবক তিনটি অপরাধ করেছে উল্লেখ করে বলেন, সে মানুষের অনুভূতিতে আঘাত করেছে, রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করেছে এবং অন্তর্ঘাতমূলক কাজ করেছে। এখানে তার একটি গিল্টি মাইন্ড আছে। এটা অপরাধ।
ঘটনার সময় তার সঙ্গে আরও একজন ছিল উল্লেখ করে সিআইডির এই কর্মকর্তা জানান, আমাদের কাছে অনেক তথ্য আসছে, এখন পর্যন্ত আমরা দুজনের সম্পৃক্ততা পেয়েছি। হয়তো আরও সম্পৃক্ততা আসতে পারে। তাই আমরা এখনই নির্দিষ্ট করে বলতে পারি না কতজন জড়িত। ভিডিওটি আপলোড হওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যে আমাদের মনিটরিংয়ে চলে আসে। আমরা এসব মনিটরিং করছি।
সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, ভিডিওটি মুহূর্তে টিকটকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে; যা নিয়ে বিভিন্ন অনলাইন নিউজ পোর্টালেও রিপোর্ট হয়। ভিডিওতে দেখা যায, পদ্মা সেতু নিয়ে যুবকটি তুচ্ছ তাচ্ছিল্য এবং ব্যাঙ্গাত্মক অঙ্গভঙ্গি এবং হাসাহাসি করছে। ভাইরাল ভিডিওতে দেখা গেছে, পদ্মা সেতুর রেলিংয়ের দুটি নাটবোল্ট খুলতে সে বলতে থাকে, এই হলো পদ্মা সেতু, আমাদের… পদ্মা সেতু। দেখো আমাদের হাজার হাজার কোটি টাকার পদ্মা সেতু। এই নাট খুইলা এহন আমার হাতে। এ সময় পাশে থেকে আরেক ব্যক্তি বলেন, ভাইরাল কইরা ফালায়েন না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, অনেক তথ্য আছে, তা সব সময় পাবলিকলি বলা যায় না। তদন্তাধীন বিষয় নিয়ে এখনই মন্তব্য করা ঠিক না। একজন অপরাধী অপরাধ করার পরে যা করে, সেই সব কাজ সে করেছে। তার কোন রাজনৈতিক পরিচয় আছে কিনা জানতে চাইলে সিআইডির এই কর্মকর্তা জানান, রাজনৈতিক পরিচয় থাকতে পারে। কিন্তু আমরা তার অপরাধটাকেই গুরুত্ব দিয়ে দেখছি।
মামলার এজাহারে কি কি আলামত দেখানো হয়েছে, জানতে চাইলে বিশেষ পুলিশ সুপার রেজাউল মাসুদ জানান, তার কাছ থেকে মুঠোফোন উদ্ধার করা হয়েছে, সেটা মামলার আলামত হিসেবে দেখানো হয়েছে। তবে নাটবোল্ট এখনও উদ্ধার করা হয়নি, সে কারণে মামলায় এগুলো আলামত হিসেবে দেখানো হয়। এগুলো উদ্ধার সাপেক্ষে পরবর্তী সময়ে আলামত হিসেবে দেখানো হবে।
তিনি জানান, ঘটনার কোন সিসিটিভি ফুটেজ এখন আমরা পাইনি। ফুটেজ সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। ঘটনার পর তড়িঘড়ি করে করে মামলা করে এবং নাটবোল্ট আলামত হিসেবে না দেখিয়ে আসামিকে মামলায় কোন সুবিধা দেয়া হচ্ছে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে সিআইডির এই কর্মকর্তা জানান, আমরা অনেক তথ্যই পেয়েছি কিন্তু সব তথ্য গণমাধ্যমের সামনে এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। যে তথ্যগুলো আমরা শুধু নিশ্চিত হতে পেরেছি, সেগুলো আমরা গণমাধ্যমকে বলছি। মামলাটির তদন্তাধীন রয়েছে, তদন্তে আরও অনেক তথ্য বেরিয়ে আসবে।
বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বায়েজিদ ॥ বায়েজিদ পটুয়াখালী সদর উপজেলার বদরপুর ইউনিয়নের তেলীখালী গ্রামের আলাউদ্দিন মৃধার ছেলে। তার চাচা মোঃ ফোরকান মৃধা জানান, বায়েজিদ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক এনায়েত হোসেন মোহনের চাচাত ভাই। সে মোহনের সঙ্গে বিএনপির বিভিন্ন মিছিল-মিটিংয়ে যেত। এ বিষয়ে স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক এনায়েত হোসেন মোহন জানান, বায়েজিদ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি গাজী আশফাকুর রহমান বিপ্লবের অনুসারী ছিল। বর্তমানে সে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এদিকে পটুয়াখালী জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আল-হেলাল নয়ন জানান, বায়েজিদ আগে পটুয়াখালীতে ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিল। যখন বিপ্লব গাজী ভাই ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন তখন তাকে বিভিন্ন মিছিল-মিটিংয়ে দেখা যেত। তবে সে অনেকদিন ধরে এলাকায় নেই। এখন ঢাকায় রাজনীতি করে কিনা তাও নিশ্চিত নই।
সাতদিনের রিমান্ডে বায়েজিদ ॥ পদ্মা সেতুর নাটবোল্ট খুলে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে টিকটক ভিডিও করা গ্রেফতারকৃত বায়েজিদ তালহার সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। সোমবার বিকেলে শরীয়তপুরের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মোঃ সালেহুজ্জামান তার রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ওই আদালতের পরিদর্শক মোঃ জাহাঙ্গীর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
নাটবোল্ট খুলে পলাতক মেহেদীর পিতা ডিবি কার্যালয়ে ॥
নিজস্ব সংবাদদাতা, টঙ্গীবাড়ি, মুন্সীগঞ্জ জানান, নিয়ম অমান্য করে পদ্মা সেতুতে গিয়ে সেতুর নাটবোল্ট খুলে ফেসবুকে পোস্ট দেয়া ২য় ব্যক্তি মেহেদীর (২৫) পিতা মোঃ মনির হোসেনকে জিজ্ঞাসার জন্য ঢাকায় ডিবি অফিসে নেয়া হয়েছে। মেহেদী ফেসবুকে পদ্মা সেতুর নাট খুইল্লা গেছে মন্তব্য করে ভিডিও পোস্ট ও শেয়ার করার পর তা ভাইরাল হয়। পরবর্তীতে মেহেদী বাড়িতে না এসে পলাতক হয়।
মেহেদী মুন্সীগঞ্জ জেলার টঙ্গীবাড়ি উপজেলার ধীপুর ইউনিয়নের রব নগরকান্দি গ্রামের মনির কাজীর বড় ছেলে। মনির কাজীর পৈত্রিক বাড়ি উপজেলার হাসাইলে। মনির হোসেন কাজী জানান, মেহেদীর খোঁজে সোমবার সকালে ডিবি পুলিশ তার বাড়িতে আসে। তারা মেহেদীকে হাজির করতে বলে। একই দিন সন্ধ্যায় পুনরায় ডিবি পুলিশ মেহেদীর বাড়িতে এসে তাকে না পেয়ে তার পিতাকে জিজ্ঞাসার জন্য ডিবি অফিসে নিয়ে যায়।
ধীপুর ৪ নং ওয়ার্ডের মেম্বার সামসু দেওয়ান জানান, ডিবি পুলিশ বিকেলে মেহেদীর সহযোগী মটুকপুর গ্রামের এক ছেলের খোঁজে আসে তাকে না পেয়ে মনির কাজীর বাসায় গিয়ে জিজ্ঞাসার জন্য ডিবি সাদা মাইক্রোতে করে নিয়ে গেছে।
The Daily Janakantha website developed by BIKIRAN.COM
Source: জনকন্ঠ