By: Daily Janakantha
বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি
শেষের পাতা
23 Jun 2022
23 Jun 2022
Daily Janakantha
মোরসালিন মিজান ॥ শেষ পর্যন্ত সত্যি হলো পদ্মা সেতু। নদী মাতৃক দেশে গত ৫০ বছরে ব্রিজ-কালভার্ট কম হয়নি। ছোট, বড় অনেক সেতু নির্মিত হয়েছে। কিন্তু পদ্মার কারণে দুই পাড়ের মানুষের মধ্যে যে বিচ্ছিন্নতা, সেটি আর দূর হচ্ছিল না। তিন বিভাগের ২১ জেলার সঙ্গে রাজধানীর সড়ক যোগাযোগ মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছিল। এর ফলে কত রকমের ক্ষতি! আর যাতায়াতের ভোগান্তি তো ছিলই। এ অবস্থায় বহু বছর ধরে পদ্মার ওপর সেতু নির্মাণের চিন্তাভাবনা চলছিল। কিন্তু প্রমত্তা পদ্মার ওপর সেতু করা তো যে-সে ব্যাপার নয়। বিরাট সেতু নির্মাণের জন্য বিপুল অঙ্কের টাকার প্রয়োজন। আছে আরও অনকে চ্যালেঞ্জ। সেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাস্তবেই একটা সেতু দাঁড়িয়ে যাবে, অনেকে তা কল্পনাই করতে পারেননি। অথচ আজ তাই হতে দেখো গেছে। এখনও মানুষের বিস্ময় কাটছে না বটে। তবে ঠিকই দৃশ্যমান হয়েছে পদ্মা সেতু। আগামীকাল শনিবার উদ্বোধন করা হচ্ছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। এর ফলে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে। সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের মানুষ তাই উচ্ছ্বসিত। পাশাপাশি সারাদেশের মানুষ এ প্রাপ্তি অনুভব করতে পারছেন। কারণ পদ্মা সেতু নির্মাণের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ভয়ঙ্কর এক বিরোধিতার রাজনীতিও। এই রাজনীতির কারণে মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছে কাজ। যতবার পদ্মা সেতুর নাম নেয়া হচ্ছে ঠিক ততবারই নাম আসছে বিশ^ব্যাংকের। বিরোধিতার রাজনীতির সঙ্গে এক পর্যায়ে যোগ দেয় এ ব্যাংকটিও। শেষ মুহূর্তে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে প্রকল্পটি থেকে সটকে পড়ে তারা। সে সময় চরম বিব্রতকর অবস্থার পড়ে শেখ হাসিনা সরকার। দেশে, বিদেশে চলতে থাকে দুর্নীতির আলোচনা। সমালোচকরা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা ‘বিশ^ব্যাংক বেশ করেছে’ বলার চেষ্টা করেন। অন্যদিকে, একা ‘ফাইট’ দিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ‘ফাইট’ শব্দটি ব্যবহার করার কারণ, বিশ^ব্যাংক যে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিল সেটি ছিল সর্বৈব মিথ্যা। বিরোধী রাজনীতির লোকেরা বিশ্বব্যাংককে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করেছিল আসলে। আমেরিকার মতো দেশের এক প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নিজের শক্তি আর জেদ প্রদর্শনে মরিয়া হয়ে উঠেছিল। ক্রমে এ বিষয়টি সবার কাছে পরিষ্কার হয়। অবশ্য শেখ হাসিনা অনেক আগেই তা বুঝতে পেরেছিলেন। এক পর্যায়ে শক্ত অবস্থান গ্রহণ করেন তিনি। দেশের টাকায় সবচেয়ে বড় পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের সাহসী ঘোষণা দেন। শুধু দেশের টাকায় এত বড় সেতু নির্মাণ কি আদৌ সম্ভব? নাকি এটাও রাজনীতিবিদদের হাজারো প্রতিশ্রুতির মতোই হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে? সংশয়বাদীদের মনে প্রশ্ন ছিল। সব প্রশ্নের জবাব হয়ে এখন ঠায় দাঁড়িয়ে আছে পদ্মা সেতু! এ সেতু শুধু স্বপ্নের বাস্তবায়ন নয়, বাংলাদেশের সামর্থ্য সম্পর্কে বিশ^কে স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে। সেতু উদ্বোধনের দিনটিকে তাই জাতীয় গৌরবের দিন হিসেবেই বিবেচনা করা হচ্ছে। অভিন্ন কারণে রাজধানীতেও দৃশ্যমান হচ্ছে উৎসবের রং। বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলির শহর ঢাকা এ উপলক্ষে নতুন রূপে সেজে উঠছে। প্রধান প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপ পদ্মা সেতুর ছবি সংবলিত ব্যানার, ফেস্টুন দিয়ে সাজানো হচ্ছে। বাঙালীর মহান নেতা শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি, বিভিন্ন স্লোগান ও প্ল্যাকার্ড শোভা পাচ্ছে। রাস্তার বিভিন্ন গাছকেও সাজসজ্জার অংশ করে নেয়া হচ্ছে। প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ের সামনের রাস্তা দিয়ে আসা-যাওয়ার সময় উচ্ছ্বাসটা বিশেষভাবে চোখে পড়ে। আজ-কালের মধ্যে ঢাকার রাস্তা ও সুউচ্চ ভবনে আলোকসজ্জা করার কথা রয়েছে। হাতিরঝিলে আয়োজন করা হবে লেজার শোর। সরকারী, বেসরকারী আরও নানা উৎসব, অনুষ্ঠান পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের মুহূর্তটিকে রঙিন করে তুলবে। সে প্রস্তুতিই চলছে এখন।
কতটা বসবাসযোগ্য ঢাকা ॥ ঢাকা শহর কতটা বসবাসযোগ্য? এ প্রশ্নের সরাসরি কোন উত্তর কেউ দিতে পারবেন না। তবে এ সংক্রান্ত কিছু তথ্য মাঝেমধ্যেই সামনে আসছে। পৃথিবীর আরও অনেক শহরের পাশাপাশি ঢাকার তথ্য দিচ্ছে ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট। তাদের সর্বশেষ গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে বিখ্যাত সংবাদপত্র গার্ডিয়ান। তাতে দেখা যাচ্ছে, বরাবরের মতোই বসবাস অযোগ্য শহরের তালিকায় রয়েছে ঢাকা। কত অযোগ্য? ১০০ ভিত্তিক সূচকে ঢাকার স্কোর মাত্র ৩৯ দশমিক ২। গত বছর স্কোর ছিল ৩৩ দশমিক ৫। অর্থাৎ বসবাস যোগ্যতার বিচারে কিছুটা উন্নতি হয়েছে পরিস্থিতির। তবে সার্বিক বিচারে অনেক পিছিয়ে, ১৬৬ নম্বরে রয়েছে বাংলাদেশ। পাঁচ সূচকের মধ্যে ঢাকা সবচেয়ে কম ২৬.৮ স্কোর পেয়েছে অবকাঠামোতে, এই সূচকে ঢাকার চেয়ে খারাপ আর কোন শহর নেই। এমনকি তালিকার তলানিতে থাকা দামেস্কও অবকাঠামোতে ৩২ দশমিক ১ স্কোর পেয়েছে। গতবার বাংলাদেশের স্কোর সবচেয়ে কম ছিল স্বাস্থ্য খাতে, এবার তা সামান্য বেড়ে ২৯ দশমিক ২ হয়েছে। সংস্কৃতি ও পরিবেশের বিচারে ঢাকাকে ৪০.৫, স্থিতিশীলতায় ৫৫ এবং শিক্ষায় ৪১.৭ স্কোর দিয়েছে ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট। ইউনিটের দেয়া এসব তথ্য শতভাগ সত্য হবে, না, এ দিব্যি কেউ দিতে পারবে না। আবার তথ্যগুলোকে উড়িয়ে দেয়ারও কোন সুযোগ নেই। অথচ সরকার বা সিটি কর্পোরেশন তথ্যগুলোর বিষয়ে একদমই নীরব থাকে। এবারও সব পক্ষ চুপ। অথচ চুপ না থেকে এই ইস্যুগুলো নিয়ে কাজ করা উচিত। এভাবে এড়িয়ে চলতে থাকলে শহরটারই হয়ত একদিন অস্তিত্ব থাকবে না। আমরা কি তাই চাই?
বানভাসিদের পাশে তরুণ প্রজন্ম ॥ সুনামগঞ্জ, সিলেট, কুড়িগ্রামসহ দেশের কয়েকটি অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। সুনামগঞ্জ জেলার প্রায় পুরোটাই তলিয়ে গিয়েছিল। সিলেট জেলার মানুষও মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন পানি কিছুটা কমতে শুরু করলেও, দুর্ভোগ কমছে না। বরং বাড়ছে। ফলে সামনের দিনগুলো নিয়ে উদ্বেগ আছে। এ অবস্থায় আশার কথা যে, ঢাকার মানবিক মানুষ পুরোদমে নেমে গেছেন ত্রাণ সংগ্রহে। সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো একরকম ঝাঁপিয়ে পড়েছে। রাস্তায় নামলেই কোন না কোন তৎপরতা চোখে পড়ছে স্বেচ্ছাসেবীদের। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মকে নিয়ে গর্ব করা যায়। অনেক আগেই ঢাকার তরুণদের বড় একটি অংশ ত্রাণ নিয়ে দুর্গত এলাকায় পৌঁছে গেছে। যেসব প্রান্তিক এলাকায় সরকারী সংস্থা এমনকি রাজনীতির লোকেরা পৌঁছতে পারেননি সেখানে দিব্যি কাজ করছে ঢাকার তারুণ্য। এর চেয়ে ভাল লাগার আর কী হতে পারে! তবে আরও বেশ কিছুদিন দুর্গত এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। মানুষগুলোকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে হবে। সে পর্যন্ত আসুন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করি। কথার লোকেরা কথা বলুক। কাজের লোকেরা কাজ অব্যাহত রাখি, আসুন।
The Daily Janakantha website developed by BIKIRAN.COM
Source: জনকন্ঠ