By: Daily Janakantha
প্রসঙ্গ ইসলাম ॥ পবিত্র হজ ও বদলি হজ প্রসঙ্গ
উপ-সম্পাদকীয়
23 Jun 2022
23 Jun 2022
Daily Janakantha
ইসলাম ধর্মের পঞ্চ স্তম্ভের অন্যতম স্তম্ভ হজ। হজ মানে আল্লাহ তায়ালাকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে শরিয়তের নিয়ম অনুসারে নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট স্থান তথা বায়তুল্লাহ শরীফ এবং সংশ্লিষ্ট জায়গাসমূহ নির্ধারিত কাজের মাধ্যমে জিয়ারত করা। একজন সামর্থ্যবান মুসলমানের জীবনে পবিত্র হজ সম্পাদন করা ফরজ ও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। এর ফযিলত, মাহাত্ম্য ও তাৎপর্য অপরিসীম। বিখ্যাত রাসূল-প্রেমিক সাহাবী ও হাদিস বর্ণনাকারী হযরত আবু হুরায়রা (রাদি.) হতে বর্ণিত আছে- তিনি বলেন, আমি প্রিয়নবী হযরত রাসূলে আকরাম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার উদ্দেশ্যে হজ করল এবং যৌনাচার ও কবিরাহ গুনাহ হতে বিরত থাকল, সে মাতৃগর্ভ হতে সদ্য প্রসূতের ন্যায় নিষ্পাপ হয়ে প্রত্যাবর্তন করল।’-(বুখারী শরীফ)।
আউলিয়ায়ে কেরাম, ইমামগণ, মুসলিম-অমুসলিম গবেষকগণ সকলে একবাক্যে হজের সফরকে পরজগতের সফরের সঙ্গে তুলনা করেছেন। কেননা মানুষ যখন হজের উদ্দেশ্যে বের হয় তখন আত্মীয়-স্বজন, ঘরবাড়ি, বন্ধু-বান্ধব সবাইকে ছেড়ে যেন পরকালের সফরে বের হন। যানবাহনে আরোহন একজন হাজীকে জানাজার খাটিয়ায় সাওয়ার হওয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। ইহরামের দুই টুকরা শ্বেতশুভ্র কাপড় হজযাত্রীর মনে কাফনের কাপড়ের কথা জাগ্রত করে দেয়। আরাফাতের ময়দানে লাখো লাখো মানুষের অবস্থান হাশরের ময়দানের নমুনা বলে অনুভূত হয়। সূর্যের প্রচ- তাপের মধ্যে আশা ও ভয়ের এক করুণ দৃশ্যের অবতারণা হয় এই ময়দানে।
হজ একটি ফরজ ইবাদত। এর ফরজ হওয়া কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমাহ দ্বারা প্রমাণিত। আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে- মানুষের মধ্যে যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে আল্লাহ তায়ালার উদ্দেশ্যে তার ওপর পবিত্র ঘরের হজ সম্পন্ন করা ফরজ এবং কেউ প্রত্যাখ্যান করলে সে জেনে রাখুক আল্লাহ বিশ্বজগতের মুখাপেক্ষি নন।-(৩ : ৯৭)।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাদি.) হতে বর্ণিত : তিনি বলেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেছেন- ইসলামের ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে পাঁচটি বিষয়ের উপর- ১. আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং নিশ্চয়ই মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহ রাসূল-এ কথার উপর সাক্ষ্য দান। ২. নামাজ কায়েম করা ৩. যাকাত প্রদান করা। ৪. হজ করা এবং ৫. রমজান মাসে সিয়াম সাধনা করা।’-(বুখারী শরীফ)।
উল্লেখ্য, কোন মুসলমানের ওপর হজ ফরজ হওয়ার জন্য সাতটি শর্ত রয়েছে- প্রথমত, মুসলমান হওয়া, দ্বিতীয়ত, জ্ঞানবান হওয়া, তৃতীয়ত, বালেগ হওয়া, চতুর্থত, আযাদ হওয়া, পঞ্চমত, আর্থিক দিক থেকে হজ পালনে সক্ষম হওয়া, ষষ্ঠত, হজ ফরজ হওয়ার ইলম থাকা এবং সপ্তম শর্ত হলো- হজের সময় হওয়া।-( ফতোয়া শামী-২)। একইভাবে পবিত্র হজ আদায় ওয়াজিব হওয়ার কিছু শর্তাবলী রয়েছে। যে সব শর্ত পাওয়া গেলে হজ আদায় করা ওয়াজিব হয় তা ৫টি (১) শারীরিক সুস্থতা (২) রাস্তাঘাট নিরাপদ হওয়া (৩) কারাবন্দী না হওয়া (৪) মহিলাদের জন্য স্বামী অথবা অন্য কোন মাহরম সঙ্গে থাকা। (৫) মহিলাদের ইদ্দত পালনের অবস্থা হতে মুক্ত হওয়া।-(প্রাগুক্ত)।
যার উপর হজ ফরজ করা হয়েছে এবং আদায় করার সময় পাওয়া সত্ত্বেও আদায় করেননি- এমন ব্যক্তি যদি পরবর্তী সময়ে হজ আদায় করতে দৈহিকভাবে অপারগ হয়ে যান তবে তার ওপর অন্য কারও দ্বারা হজ করানো ফরজ। একে বলা হয় বদলি হজ। যে ব্যক্তি এমন অপারগতার সম্মুখীন তিনি জীবদ্দশায় অন্য কারও দ্বারাই হজ করানোর অসিয়ত করে যাবেন। মৃত্যুর পূর্বে এভাবে অসিয়ত বা অন্তিম উপদেশ দিয়ে যাওয়া তার ওপর ওয়াজিব। যদি অসিয়ত না করে তবে গুনাহগার হবে। একইভাবে যদি শর্তানুযায়ী কারও ওপর হজ ফরয হয় আর তিনি আদায় করার সময় না পান অথবা হজের পথে মারা যান; তাহলে তার ওপর থেকে ফরয হজ মাফ হয়ে যায়। তার পক্ষ হতে হজ আদায় করার জন্য কাউকে অসিয়ত করে যাওয়া ওয়াজিব নয়।-(ফতোয়া আলমগীরি)-১)। বদলি হজ অর্থ অন্যের দ্বারা হজ করানো। যিনি অন্যের দ্বারা হজ করাবেন তাকে ‘আমির’ (আদেশদাতা) এবং যিনি অন্যের আদেশে বদলি হজ করবেন তাকে ‘মামুর’ বা আদিষ্ট ব্যক্তি বলা হয়।
বস্তুত নিজের আমলের সাওয়াব অন্য ব্যক্তিকে বকশিশ করা জায়েজ আছে। সে আমল নামাজ, রোজা, হজ, কুরআন তিলাওয়াত, তাসবীহ-তাহলিল ইত্যাদি যা কিছু হোক না কেন।
উল্লেখ্য, ইবাদত তিন প্রকার- ১. ইবাদতে মালী (আর্থিক ইবাদত) যেমন- যাকাত, সাদকায়ে ফিতর ইত্যাদি। এ জাতীয় ইবাদত প্রতিনিধির মাধ্যমে করানো জায়েজ। যে প্রয়োজনের কারণে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হোক, অথবা বিনা প্রয়োজনে নিয়োগ করা হোক। ২. ইবাদতে বদনি (দৈহিক ইবাদত) : যেমন- নামাজ, রোজা ইত্যাদি। এ জাতীয় এবাদত প্রতিনিধির মাধ্যমে করানো কখনও জায়েজ হবে না। ৩. ইবাদতে বদনি ও মালী (দৈহিক ও আর্থিক সমন্বিত ইবাদত) যেমন- ফরজ হজ। এ জাতীয় ইবাদত তখনই প্রতিনিধির মাধ্যমে করানো জায়েজ হবে, যখন কোন ব্যক্তি নিজে সে ইবাদত সম্পন্ন করতে দৈহিকভাবে অপারগ হবে। যদি নিজে আদায় করতে সক্ষম থাকে, তবে অন্যের দ্বারা আদায় করানো জায়েজ হবে না।-( ফতোয়া আলমগীরি-১)। অবশ্য, নফল হজ ও নফল ওমরাহ সর্বাবস্থায় অন্যের মাধমে আদায় করা জায়েজ। (ফতোয়া শামী, খ–২)।
বলাবাহুল্য, ফরজ হজ অন্য কারও দ্বারা করাতে হলে এর জন্য কতিপয় শর্ত রয়েছে যা পাওয়া না গেলে অন্যের দ্বারা বদলি হজ করানো হলেও তা আদায় হবে না। এ বিষয়ে আমরা আগামীতে আলোকপাত করার চেষ্টা করব।
লেখক : অধ্যাপক, টিভি উপস্থাপক ও জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত খতিব
mi_rafiq@yahoo.com
The Daily Janakantha website developed by BIKIRAN.COM
Source: জনকন্ঠ