By: Daily Janakantha
ভাল কাজের হোটেল থেকে খাবার যাচ্ছে দুর্গত এলাকায়
শেষের পাতা
22 Jun 2022
22 Jun 2022
Daily Janakantha
মোরসালিন মিজান ॥ ভাল কাজের হোটেল সম্পর্কে ঢাকার অনেকেই এখন অবগত। বহু বছর ধরে রাজধানীতে চালু আছে এই হোটেল। হোটেল বলতে, ভ্রাম্যমাণ একটি রেস্তরাঁ। মানবিক বোধ সম্পন্ন একদল তরুণ রেস্তরাঁটি পরিচালনা করছেন। অসহায় ক্ষুধার্ত ছিন্নমূল মানুষ কোন টাকা ছাড়াই খেতে পারেন এখানে। তবে দিনে অন্তত একটি ভাল কাজ করতে হবে। এর বিনিময়ে জুটবে আহার। ‘ভাল কাজের হোটেল’ নামকরণ করার এই হচ্ছে কারণ। বছরের প্রত্যেক দিন ঢাকার তিনটি উন্মুক্ত স্থানে রান্না করা খাবার বিতরণ করে আসছে ভাল কাজের হোটেল। তবে বর্তমানে উদ্যোগটি শুধু ঢাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। কাজ করছে বন্যাকবলিত সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলায়। দুটো জেলাই যখন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন, যখন পানির ঢলে সব ভেসে যাচ্ছে ঠিক তখন দুর্গত এলাকার দিকে রওনা দেন স্বেচ্ছাসেবীরা। তার আগে শুরু হয়েছিল শুকনো খাবার সংগ্রহের কাজ। প্রতি একজনের জন্য ১৩ রকমের শুকনো খাবার দিয়ে একটি ফুড প্যাকেজ প্রস্তুত করা হয়েছিল। পরে ট্রাক ভর্তি খাবার নিয়ে সিলেটের উদ্দেশে যাত্রা করে ভাল কাজের হোটেল। দুর্গত এলাকায় পৌঁছানো অনেক বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। চ্যালেঞ্জে যথারীতি জয়ী হয়েছেন তারা। এখনও কাজ করছেন বন্যাকবলিত এলাকায়।
সিলেটে বর্তমানে তাদের দুটি টিম কাজ করছে। একটি সিলেট সদরে অবস্থান করে আশপাশের এলাকায় কার্যক্রম পরিচালনা করছে। অন্যটি হোটেল পরিচালনা করছে গুয়াইন ঘাটের সীমান্তবর্তী এলাকায়। এলাকাটি যারপরনাই দুর্গম। কেউ সেখানে পৌঁছতে পারছে না বলে খবর আসছিল। তবে ভাল কাজের হোটেল বুধবার সেখানে গিয়ে পৌঁছেছে।
হোটেলের এক কর্মীর নাম শাওন। ঢাকা থেকে ফোনে যোগাযোগ করে অভিজ্ঞতা জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি আমরা। পাহাড়ী ঢল প্রথম এসে এখানে আছড়ে পড়েছিল। স্রোতে অধিকাংশ বাড়ি ঘর ভেসে গেছে। এমনকি পাকা বাড়ি ¯্রােতে বিলীন হয়ে গেছে। দেখে মনে হয় যুদ্ধ বিধ্বস্ত এলাকা। মানুষ সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, আমরা একটি মাদ্রাসায় ভাল কাজের হোটেল চালু করেছি। এখানে খাবার রান্না করে ক্ষুধার্তদের মাঝে বিতরণ করেছি। এখনও বহু জায়গায় খাবার পৌঁছেনি। চাহিদার তুলনায় খাবার একেবারেই অপ্রতুল জানিয়ে আরও মানুষকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
ভাল কাজের হোটেলের প্রধান উদ্যোক্তা আরিফুর রহমানও দুর্গত এলাকা ঘুরে এসেছেন। তিনি জানান, তাদের মূল সংগঠনটির নাম ইয়ুথ ফর বাংলাদেশ। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিভিন্ন সেবামূলক কর্মকা- পরিচালনা করে। সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য তিনটি স্কুল করা হয়েছে। আর ক্ষুধার্তদের মাঝে খাবার বিতরণের উদ্যোগটির নাম ভাল কাজের হোটেল। হোটেল থেকে প্রতিদিন ঢাকার তিনটি স্থানে খাবার বিতরণ করা হয়। পাশাপাশি বন্যা দেখা দেয়ায় সিলেট ও সুনামগঞ্জে কার্যক্রম সম্প্রসারিত করা হয়েছে।
তিনি জানান, নিজেদের সংগ্রহ করা অর্থ এবং সাধারণ মানুষের অনুদানের টাকায় এই কার্যক্রম চলছে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অসংখ্য তরুণ উদ্যোগের সঙ্গে সারা বছরই কাজ করেন। তাদের একটি অংশ এখন বন্যাকবলিত এলাকায় কাজ করছে। বৃষ্টিতে ভিজে কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ছে। জ্বর আসছে গায়ে। তাও সেবাকাজ ছেড়ে তারা আসতে চাইছেন না। ঢাকা থেকে যাওয়া স্বেচ্ছাসেবীদের সঙ্গে তাদের সিলেট অঞ্চলের স্বেচ্ছাসেবীরাও কাজ করছেন বলে জানান তিনি।
আরিফ জানান, পানি কিছুটা নামতে শুরু করেছে। তার পর আরও অনেক সমস্যা সামনে আসবে। এসব বিবেচনায় আমরা এখন নৌকাও বিতরণ করছি। নৌকার অভাবে সেখানে জরুরী যোগাযোগও বন্ধ হয়ে গেছে। এ খবর পেয়ে সাভারে ছোট ছোট নৌকা তৈরি করছি আমরা। সেখান থেকে ট্রাকে করে এসব নৌকা চলে যাচ্ছে বন্যায় তলিয়ে যাওয়া এলাকাগুলোতে। প্রতিটি নৌকার দৈর্ঘ্য ১৮ ফিট। প্রস্ত ৪.৫ ফিট।
তিনি বলেন, কোন কোন পরিবারের জন্য এই নৌকাই বড় সম্পদ হয়ে উঠবে। তেমন পরিবার খুঁজে নিয়ে তাদের মধ্যে নৌকাগুলো বিতরণ করা হচ্ছে। এভাবে বাস্তব পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করার জন্য অন্য সবার প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।
The Daily Janakantha website developed by BIKIRAN.COM
Source: জনকন্ঠ