By: Daily Janakantha
বর্ষায় ত্বকের নানাবিধ রোগ
আপনার ডাক্তার
21 Jun 2022
21 Jun 2022
Daily Janakantha
বাংলা সাহিত্যে বর্ষাকালের নানা রূপ-সৌন্দর্যের বর্ণনা থাকলেও বাস্তব অবস্থায় এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া কিন্তু মানবদেহে প্রবল! ত্বকের নানাবিধ সমস্যার পাশাপাশি কিছু দীর্ঘমেয়াদী রোগের প্রকোপ এ সময়টাতেই বেশি হয়ে থাকে।
বর্ষাকালে বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকায় ত্বক আবহাওয়ার সঙ্গে তাল মেলাতে বেশ বেগ পেতে হয়। এ সময়টাতে সবচেয়ে বেশি দেখা দেয় ছত্রাক বা ফাংগাসজনিত নানা ইনফেকশন। স্যাঁতসেঁতে আব হাওয়ার কারণে আমাদের শরীরের স্বাভাবিক অধিবাসী কিছু জীবাণু হঠাৎ করেই দ্রুত বংশবৃদ্ধি করে শক্তিশালী হয়ে ওঠে, সৃষ্টি করে নানা রকমের ত্বকের রোগ।
মূলত শরীরের ভাঁজগুলোতে ছত্রাক জন্মায়। এটাকে Tinea Corporis বা দাউদ বলে। প্রচন্ড রকম চুলকানির পাশাপাশি কখনও কখনও দীর্ঘমেয়াদী ক্ষত তৈরি করে। মূলত গলা, মুখ, কুচকি, মলদ্বার এবং বুকে ও পিঠে এটি বেশি দেখা যায়। সাধারণত ছোট গোল ক্ষত থেকে বাড়তে বাড়তে এটি মানচিত্রের রূপ নেয়। অনেক সময় নানারকম ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতিতে এটিতে পুঁজি হতে পারে। ফাংগাস শরীর ছাড়াও মুখে, ঠোঁটে এমনকি মাথার ত্বকেও হতে পারে। শরীরের বিভিন্ন স্থানে এরা ভিন্ন ভিন্ন নামে পরিচিত। মাথায় হলে এটাকে ঞরহবধ ঈধঢ়রঃরং, কুচকিতে হলে ঞরহবধ Cruris বা Jokes Itch, হাতে- পায়ে হলে Tinea Manum ও Tinea Pedis যথাক্রমে।
সেবোরিক ডারমাটাইটিস
বর্ষাকালে এ রোগের প্রাদুর্ভাব ব্যাপক। মাথার ত্বক, ভ্রু, মুখমন্ডল, নাকের দুইপাশ, বুকের ও পিঠের মাঝখানে ছোট ছোট দানার মতো দেখা দেয় যা অনেকটাই তৈলাক্ত ও হলুদাভ। প্রচন্ড চুলকানির সঙ্গে মাথার চুল পড়া বেড়ে যাওয়া, ত্বকে জ্বলুনি ও ফুস্কুড়ি দেখা দেয় যা স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত করে। মূলত Yeast নামক এক ধরনের ছত্রাক যা দ্রুত বংশবৃদ্ধি করে এবং বিরূপ আচরণ শুরু করে। ফলাফল, খুসকি, চুলকানি, জ্বলুনি, লাল হয়ে যাওয়া ইত্যাদি যা কেড়ে নেয় শরীরের সমস্ত স্বস্তি।
Scabies বা পাচড়া
Sarcopties Scabie নামক এক ধরনের পরজীবী যা দেখতে অনেকটা অতি ক্ষুদ্র কচ্ছপের মতো শরীরের বিভিন্ন স্থানে দানা দানা সৃষ্টি করে যার চুলকানির তীব্রতা রীতিমতো ভয়ঙ্কর। চুলকানির তীব্রতা সাধারণত রাতে মারাত্মক হয়।এটি এত বেশি ছোঁয়াচে যে একজনের হলে সমস্ত পরিবার আক্রান্ত হয়।শিশুদের ক্ষেত্রে চিকিৎসা সময়মতো না হলে সহজেই কিডনি জটিলতার সৃষ্টি করে। পরিবারের সবাইকে (আক্রান্ত না হলেও) একই সঙ্গে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।
ব্রণ
মূলত বয়সন্ধিতে হলেও বর্ষাকালে এটা বয়স্কদের মাঝেও দেখা দেয়। যাদের তৈলাক্ত ত্বক, মুখমন্ডল নিয়মিত পরিষ্কার করেন না, দীর্ঘসময় ধরে প্রসাধনী ব্যবহার করেন বা চর্ম রোগের ভুল ওষুধ খেয়ে গেছেন বুঝে শুনে তাদের মাঝে এর প্রকোপ বেশি। মুখমন্ডল ছাড়াও এটি বুক ও পিঠের মাঝখানটায়, গলায়, দুই বাহুতে দেখা দেয়। ত্বকের নিয়মিত অধিবাসী এক ধরনের জীবাণু Propiono bacterium অপহব অনুকূল পরিবেশ পেয়ে দ্রুতই বংশবৃদ্ধি করে প্রদাহ করে যা লোমকূপ আক্রান্ত করে দানা বা ক্ষত তৈরি করে।
খুসকি বা Dandruff
সাধারণে প্রচলিত একটি ধারণা যে খুসকি শীতকালে হয়। আসলে এক ধরনের পরজীবী ছত্রাক (Yeast) এটা বরষাকালেও কারও কারও মাথায় আক্রমণ করে যা তীব্র চুলকানির পাশাপাশি কপালে, মুখে দাগ ও খতের সৃষ্টি করে।
এর সঙ্গে চুল পড়াও বাড়িয়ে দেয় অস্বাভাবিক হারে। বর্ষাষাকালে এ ধরনের সমস্যার হাত থেকে বাঁচতে হলে Personal Hygene বা ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার উপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।
এ সময়ে নিয়মিত প্রতিদিন গোসল করা, মুখমন্ডল পরিষ্কার করা জরুরী। পাশাপাশি যেহেতু রোগগুলো অতিমাত্রায় ছোঁয়াচে ব্যক্তিগত ব্যবহারের জিনিসপত্র যেমন চিরুনি, টাওয়েল, সাবান, বিছানা-বালিশ অবশ্যই আলাদা-আলাদাভাবে ব্যবহার করতে হবে।
ছত্রাক বা ঋঁহমঁং, পাচড়া বা ঝপধনরবং, খুসকি, সেবোরিক ডারমাটাইটিস ইত্যাদি না কমে বেড়ে গেলে দ্রুতই চর্ম রোগের চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। ত্বকের ধরন বুঝে শ্যাম্পু, সাবান ব্যবহার করা জরুরী। তৈলাক্ত ত্বকে Oil free GEL CLEANSER ব্যবহার করা, Oil free cleansing Toner ব্যবহার করা, মিশ্র ত্বকে সবধরণের Cleanser, Toner ব্যবহার করা যেতে পারে। মনে রাখতে হবে বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকলেও ত্বকের স্বাভাবিকতা ও সৌন্দর্য ধরে রাখতে আগেভাগেই সিরামিড ও হাইয়ালুরনিক এসিড সমৃদ্ধ ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে পারেন।
বর্ষায় অসুখ-বিসুখের যত কারণ
বৃষ্টিতে ভিজতে কারও ভাললাগে, কারও লাগে না। তবে কাজের জন্য বাধ্য হয়ে সবাইকেই বৃষ্টিতে ভিজতে হয়। বর্ষার প্রকৃতিতে জলীয়বাষ্প বেশি থাকে। ঠান্ডা-গরম মাখা আবহাওয়া দেহের জন্য স্বস্তিদায়ক নয়। গ্রাম-বাংলায় কাদা, পানি, বৃষ্টিতে ভিজে রোগবালাই নিয়ে বাড়ি ফিরতে হয়। যেভাবেই হোক না কেন, এই বৃষ্টির পানিতে জ্বর, হাঁচি, কাশি, সর্দি, মাথাব্যথা, বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, পেটফাঁপা, ডায়রিয়া, খোস-পাচড়া, ত্বকের নানা রকম অসুখ-বিসুখ শরীরে এসে ভিড় করে। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, বিশেষ করে শিশু, বয়স্করা এবং দীর্ঘদিন ধরে যারা রোগে ভুগছেন ডায়াবেটিস ও কিডনি রোগী, সহজেই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তার উপর করোনার কারণে জ্বর, সর্দি, কাশি ইত্যাদি হলেই আতঙ্ক বিরাজ করে
জ্বর, সর্দি, কাশি সাধারণত বৃষ্টির পানি এবং চারদিকে স্যাঁতসেঁতে পরিবেশের কারণে বর্ষাকালে খুব বেশি হয়। যাদের রোগ প্রতিরোধ শক্তি কম (বয়স্ক এবং শিশুরা) তারা খুব বেশি আক্রান্ত হয়। ভাইরাসজনিত হওয়ার কারণে পরিবারের একজনের এই রোগ হলে, অন্যরাও ধীরে ধীরে আক্রান্ত হয়। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সারা শরীর ম্যাজ ম্যাজ ও ব্যথা করে, বার বার হাঁচি হয়, বমি বমি ভাব হয়, চোখ লাল হয়ে যায়, মাথাব্যথা করে, জ্বর ৩-৫ দিন স্থায়ী হতে পারে। খুব বেশি সর্দি বা ঠান্ডা লাগলে এবং বেশি দিন স্থায়ী হলে ট্রাকিও ব্রঙ্কাইটিস ও নিউমোনিয়ার মতো মারাত্মক রোগ দেখা দিতে পারে। তবে, জ্বর খুব বেশি হলে এবং ৫-৬ দিনের বেশি স্থায়ী হলে অবশ্যই একজন চর্ম রোগ চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া জরুরী।
*ত্বকের রোগ
বর্ষাকালে স্যাঁতসেঁতে ও ভেজা আবহাওয়ার কারণে ত্বক বা স্কিনের খোস-পাচড়া, ফাঙ্গাল ইনফেকশন, প্যারনাইকিয়া, স্ক্যাবিজ জাতীয় কিছু ছত্রাক অসুখ হয়ে থাকে। ভিজে শরীর ভালভাবে না মুছে, ভিজে কাপড় ভালভাবে না শুকিয়ে গায়ে দেয়া, রোদ না থাকায় স্যাঁতসেঁতে ঘর ইত্যাদি কারণে বর্ষাকালে ত্বকের বেশকিছু অসুখ হয়। তাই, বর্ষার এই অসুখ থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখতে হলে সব সময় তোয়ালে, ব্রাশ, চিরুনি সবকিছু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও শুকনো রাখতে হবে। বৃষ্টির পানি শরীর এবং মাথা থেকে ভালভাবে মুছতে হবে, বিশেষ করে হাত ও পায়ের আঙ্গুল ভালভাবে ধুয়ে মুছতে হবে। প্রতিদিন অন্তত দুবার জীবাণুনাশক সাবান ও শ্যাম্পু দিয়ে গোসল করতে হবে। রাস্তার নোংরা ও বন্যার পানি এড়িয়ে চলতে হবে। একান্তই যদি চলাচল করতে হয়, তবে বাড়িতে ফিরে অবশ্যই ডেটল-মিশ্রিত পানি দিয়ে পা ও স্যান্ডেল ভালভাবে ধুয়ে শুকিয়ে নিতে হবে। তার পরও যদি এ রোগগুলো দেখা দেয়।
ডায়রিয়া, আমাশয়
বর্ষাকালে অন্য অসুখের মতো নানা ধরনের পেটের অসুখ যেমন ডায়রিয়া, আমাশয় দেখা দেয়। পানির দ্বারা এই রোগ হয় বলে এটাকে পানিবাহিত রোগও বলা যায়। শিশু ও বয়স্কসহ সব বয়সের মানুষের এই অসুখ হতে পারে। এই রোগে রেহাই পেতে হলে, বিশুদ্ধ পানি পানসহ খাওয়ার বাসনপত্র, কাপড়চোপড় পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে নিতে হবে, অনেক বেশি পানি পান করতে হবে এবং রাস্তার খোলা খাবার পরিহার করতে হবে। ডায়রিয়া হলে স্যালাইন এবং স্বাভাবিক খাবার খেতে হবে। মূলত শিশুরাই এই রোগে আক্রান্ত হয় বেশি।
কলেরার এ কাল সেকাল
ভয়ানক এই পানিবাহিত রোগটি হবার অন্যতম কারণ দূষিত পানি পান করা, অস্বাস্থ্যকর বন্যার পানিতে গোশল করা, বা ব্যবহার বা এ পরিবেশে দীর্ঘসময়ে থাকা। আধুনিক ওষুধ আবিষ্কার হওয়ার আগে এই রোগে যে গ্রাম আক্রান্ত হতো সেখানকার প্রায় সব মানুষই মারা যেত। তবে কলেরার লক্ষণ হচ্ছে তীব্র ডায়রিয়া, বমি এবং অত্যধিক দুর্বলতা।
*ম্যালেরিয়া
বর্ষাকালের সাধারণ রোগ। স্ত্রী এনোফিলিস মশাই ম্যালেরিয়া জীবাণুর বাহক। এরা জলাবদ্ধ জায়গায় বংশবিস্তার করে। সুতরাং বাড়ির আশপাশের জলাধার, ফুলের টব, পানি জমার মতো জায়গাগুলো পরিষ্কার রাখতে হবে।
ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি এখন
এ সময়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ মাত্রা ছাড়িয়ে পড়ে । এডিস মশাই এ রোগের বাহক। ডেঙ্গুর লক্ষণ হলো, জ্বর, সর্বাঙ্গে ও গিটগুলোতে ব্যথা, চামড়ায় র্যাশ বা ছোট লাল স্পট। মশার বংশবিস্তার রোধে বাড়ির জলাবদ্ধ জায়গাগুলো নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে যাতে বৃষ্টির পানি জমতে না পারে।
লেখক : (সহকারী অধ্যাপক) ত্বক, চর্ম যৌন ও ট্রান্সপ্লান্ট সার্জারি বিভাগ) শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী হাসপাতাল।
চেম্বার
ডাঃ জাহেদস এ্যান্ড স্কিনিক, হাসপাতাল। ১৫২/১/এইচ, (৬ তলা) গ্রিন রোড, পান্থপথ মোড়, ঢাকা। শুক্রবারে ছুটি। অনলাইনেও-
০১৫৬৭-৮৪-৫৪-১৯
০১৭০৭-০১-১২-০০
The Daily Janakantha website developed by BIKIRAN.COM
Source: জনকন্ঠ