By: Daily Janakantha
প্রাণ বাঁচানোর লড়াই
প্রথম পাতা
20 Jun 2022
20 Jun 2022
Daily Janakantha
সালাম মশরুর, সিলেট অফিস ॥ বন্যাকবলিত এলাকায় এখন চলছে প্রাণ বাঁচানোর লড়াই। দুর্গত এলাকায় দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। নৌকা, স্পীডবোট, ট্রলার দেখলেই মানুষ উৎসুক দৃষ্টিতে উদ্ধারের আকুতি প্রকাশ করছেন। যেমন খাবারের প্রয়োজন তেমনি নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার দরকার। নৌকা, ট্রলারসহ জলযানের অভাবে বন্যাকবলিতদের উদ্ধার অভিযান কঠিন হয়ে পড়েছে। স্থানীয় নৌকা ও ট্রলার মালিকরা ভাড়া আদায়ের নামে ডাকাতের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। সিলেটে সুরমা নদীর পানি ধীরে ধীরে কমতে শুরু করলেও বাড়ছে কুশিয়ারা নদীর পানি। তবে সুরমা নদীর পানি সামান্য কমলেও জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। প্লাবিত এলাকার বেশিরভাগ এখনও পানির নিচে। নগরীর নিম্নাঞ্চলের বাসাবাড়ি ও রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে রয়েছে। উপশহরের প্রধান সড়কে এখনও কোথাও হাঁটুপানি, কোথাও কোমর পর্যন্ত ডুবে যায়। চলমান এ বন্যার মধ্যেই সপ্তাহব্যাপী সিলেটে ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। এতে বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার আশঙ্কায় ভোগছেন বানবাসি মানুষ। সোমবার আবহাওয়া অধিদফতরের পক্ষ থেকে বলা হয়, আগামী ৮-৯ দিনেও সিলেটে বৃষ্টি কমার কোন সম্ভাবনা নেই।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, রবিবার সন্ধ্যা থেকে সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে ১৮ সেন্টিমিটার ও সিলেট (নগরী) পয়েন্টে ১ সেন্টিমিটার কমেছে। একই সময়ে কুশিয়ারা নদীর পানি শেরপুর পয়েন্টে কমলেও ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ৫ সেন্টিমিটার বেড়েছে। অবশ্য সারি ও লোভাছড়া নদীর পানি কমেছে। সোমবার বেলা ১১টার দিকে সুরমা নদীর সিলেট পয়েন্টে বিপদসীমার দশমিক ৫৫ সেন্টিমিটার ও কানাইঘাটে ১ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। অন্যদিকে কুশিয়ারা নদীর অমলসিদ পয়েন্টে ১ দশমিক ৮৪ সেন্টিমিটার,
শেওলা পয়েন্টে বিপদসীমার দশমিক ৬৩ সেন্টিমিটার ও ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমার দশমিক ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সিলেটে পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী একেএম নিলয় পাশা জানান ‘কুশিয়ারা নদীর পানি বাড়ার কারণে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার কিছু এলাকা নতুন করে প্লাবিত হতে পারে। তবে তা মারাত্মক কিছু হবে না।’ এ ছাড়া গোয়াইনঘাট, কোম্পানিগঞ্জ, জৈন্তাপুর, সদর, কানাইঘাট, জকিগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, বিশ্বনাথ, ওসমানীনগর, বালাগঞ্জে প্লাবিত এলাকার পানি ধীরে ধীরে কমছে বলে জানান তিনি।
এদিকে নদীর পানি কমতে থাকায় নগরীতে প্লাবিত এলাকাগুলোর পানিও কমতে শুরু করেছে। তবে উপশহর, তালতলা, তেররতন, ঘাসিটুলাসহ বিভিন্ন এলাকায় এখনও পানি রয়েছে। নগরীর বেশিরভাগ এলাকায় বিদ্যুত সরবরাহ চালু হলেও প্লাবিত এলাকার মানুষ এখনও অন্ধকারে রয়েছেন। এসব এলাকায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় চরম সঙ্কটে রয়েছেন নগরবাসী।
নগরীর আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে খাবার সঙ্কট বিরাজ করছে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত খাবার পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন অবস্থানকারীরা। দুর্গকুমার পাঠশালায় আশ্রয় নিয়েছেন ছড়ারপাড় এলাকার বাসিন্দা লিটন মিয়া। শুক্রবার এ আশ্রয়কেন্দ্রে ওঠেন তিনি। তিনি বলেন, একদিন কেবল খাবার পেয়েছিলাম। এরপর আর কিছু পাইনি। এখানে রান্নার সুযোগ নেই। তাই খুব কষ্টে আছি। তবু তো উপোস থাকা যায় না। আমরা না হয় যে কোন কিছু খেয়ে ফেললাম। বাচ্চারা তো বুঝতে চায় না। তাই পানি ডিঙিয়ে বাসায় গিয়ে রান্না করে এখানে খাবার নিয়ে আসি। বাসায় পানি উঠলেও চুলা পানিতে ডুবেনি। একই এলাকার মোহাম্মদ আলীও উঠেছেন দুর্গাকুমার পাঠশালায়। তিনিও জানালেন তিনদিনে কোন সরকারী ত্রাণ পাননি। ব্যক্তি-উদ্যোগে কয়েকজন রান্না করা খাবার দিয়েছেন। রান্না করা খাবার তো রাখা যায় না। একবেলায় খেয়ে ফেলতে হয়। তাই একবেলা খেলে পরের বেলা উপোস থাকতে হচ্ছে। এখন পর্যন্ত কোন ত্রাণ পাননি বলে জানান সিলেট সদর উপজেলার মানসিনগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেয়া শরিফা বেগম। বলেন, বাড়ি থেকে হাঁড়ি-পাতিল কিছুই আনতে পারিনি। খাবারও আনিনি। এখানে এখন পর্যন্ত কেউ ত্রাণ নিয়েও আসেনি। তাই খুব কষ্টে আছি। আশপাশের বাসিন্দারা মাঝে মাঝে খাবার নিয়ে আসেন বলেও জানান শরিফা। শুধু এ দুটি আশ্রয়কেন্দ্র নয়, সিলেটের সব আশ্রয়কেন্দ্রের চিত্রই এমন। আশ্রয়কেন্দ্র্রগুলোতে ঠাঁই নেয়া বানভাসি মানুষেরা ভুগছেন খাবারের তীব্র সঙ্কটে। নগরে এখন পর্যন্ত সরকারী কোন উদ্যোগে ত্রাণ তৎপরতা শুরু হয়নি। নগরের বাইরে সেনাবাহিনী ও প্রশাসন ত্রাণ বিতরণ করলেও তা পর্যাপ্ত নয় বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। এদিকে নগরের ভেতরে ব্যক্তি ও বিভিন্ন বেসরকারী প্রতিষ্ঠান খাবার বিতরণ করলেও দুর্গম এলাকাগুলোতে আশ্রয় নেয়া মানুষরা রয়েছেন সঙ্কটে। নগরের মঈনুন্নেছা বালিকা বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেয়া রুহেল আহমদ বলেন, আজকে কিছু খাবার দিয়ে গেছেন কয়েকজন লোক। এর আগে দুদিন খুব কষ্টে ছিলাম। পানি ও বৃষ্টির কারণে বাইরে গিয়ে খাবার আনারও সুযোগ ছিল না। গত রাতে কেবল মুড়ি খেয়েছিলাম। বিভিন্ন স্থানে খাবারের অভাবে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়েছে। বাচ্চারাও খাদ্য সঙ্কটে ভুগছে।
সিলেট জেলা প্রশাসনের হিসাবে, জেলায় এ পর্যন্ত ৪৯৭টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এতে আশ্রিত আছেন প্রায় ২ লাখ ৩১ হাজার মানুষ ও ৩১ হাজার গবাদিপশু। আর সিলেট সিটি কর্পোরেশনের হিসাবে নগরে ৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ছয় হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। আশ্রয়কেন্দ্রে নিজের দুটি গরু নিয়ে উঠেছেন জৈন্তাপুরের চারিঘাট এলাকার আসকর মিয়া। তিনি বলেন, নিজেদের কোনমতে খাবারের ব্যবস্থা হলেও গরুগুলো তিনদিন ধরে প্রায় উপোস আছে।
সোমবার থেকে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ত্রাণ বিতরণ শুরু হবে জানিয়ে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের বিদ্যুত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী (আশ্রয়কেন্দ্রের অতিরিক্ত দায়িত্ব) রুহুল আলম বলেন, আমরা সরকারীভাবে বরাদ্দ দেয়া ২০ টন চাল পেয়েছি। এ ছাড়া কিছু প্যাকেট করা খাবারও পেয়েছি। এগুলো সোমবার থেকে বরাদ্দ হবে। সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ বিতরণ শুরু না হলেও কাউন্সিলরা ব্যক্তি-উদ্যোগে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে খাবার বিতরণ করছেন বলে জানান তিনি। এ পর্যন্ত জেলায় ৬১২ টন চাল, প্রায় আট হাজার প্যাকেট খাবার ও ৩৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিলেটের জেলা প্রশাসক মজিবর রহমান। তিনি বলেন, আমরা বন্যাকবলিত মানুষদের উদ্ধার ও সহায়তায় সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছি। সেনাবাহিনীও এ ক্ষেত্রে সহায়তা করছে। তবে নৌকা সঙ্কট ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার কারণে অনেক দুর্গম এলাকায় পৌঁছানো যাচ্ছে না। তবে আমাদের আন্তরিকতা ও চেষ্টার ঘাটতি নেই।
এবারের ভয়াবহ বন্যা রেকর্ড ভেঙ্গেছে অতীতের সকল দুর্যোগের। ভয়াবহ এই বন্যায় পানিবন্দী মানুষের মধ্যে একদিকে চলছে উদ্ধারের জন্য আর্তনাদ, অন্যদিকে খাবারের জন্য হাহাকার। এই অবস্থায় সরকারী ত্রাণের পাশাপাশি বানভাসি মানুষের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন সাধারণ মানুষও। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা প্রতিদিনই ছুটছেন দুর্গতদের পাশে। ত্রাণ হিসেবে শুকনো ও রান্না করা খাবার দেয়ার পাশাপাশি পানিবন্দী মানুষদের উদ্ধার করে নিয়ে আসছেন। আশ্রয়ের জন্য সিলেট নগরীর অনেকেই নিজেদের বাসা উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। পানিবন্দী মানুষের কাছে পৌঁছাতে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে যোগাযোগ মাধ্যম। সকল রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে নৌকা। কিন্তু ইঞ্জিন নৌকার বেশিরভাগ মালিকরা মানুষের এই অসহায়ত্বকে পুঁজি করে দুর্যোগের এই সময়ে ‘ডাকাত’র ভূমিকায় অবর্তীণ হয়েছেন। আগে যেখানে ৫শ’ থেকে ১ হাজার টাকা ভাড়া ছিল, সেখানে ইঞ্জিন নৌকার মাঝিরা ভাড়া হাঁকছেন ২০ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা। কেউ কেউ সুযোগ বুঝে ভাড়া হাঁকছেন ৫০ হাজার টাকাও। ফলে সাধারণ মানুষ ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলোকে ত্রাণ নিয়ে দুর্গত মানুষের কাছে পৌঁছাতে বেগ পেতে হচ্ছে। বৈঠাচালিত ছোট নৌকা দিয়ে দুর্গত এলাকায় যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ত্রাণ দিতে যাওয়া লোকজনকে বাধ্য হয়েই বাড়তি ভাড়া গুনতে হচ্ছে। বন্যাকবলিত এলাকায় নৌকার মাঝিরা ‘গলা কাটছেন’। সিলেটের জেলা প্রশাসক মোঃ মজিবর রহমান জানিয়েছেন, নৌকার মাঝিদের অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ তিনি পেয়েছেন। কিন্তু এলাকাগুলো দুর্গম হওয়ায় মাঝিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তাদের কাছে পৌঁছানো কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে এসব মাঝির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তালিকা করা হচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ত্রাণ বিতরণ ॥ সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনাসহ দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সৃষ্ট ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনী বিভিন্ন সেবামূলক কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। সোমবার বন্যাকবলিত দুর্গম এলাকায় পানিবন্দী মানুষের কাছে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছানোর জন্য বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ইবষষ-২১২, গর-১৭ হেলিকপ্টার এবং খ-৪১০ পরিবহন বিমানের মাধ্যমে দুর্গম অঞ্চলে পানিবন্দী মানুষের মাঝে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছানো হয়।
একই দিনে বাংলাদেশ সরকারের বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মোঃ মাহবুব আলী বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য একটি অড-১৩৯ ঝবধৎপয ্ জবংপঁব হেলিকপ্টারের মাধ্যমে সিলেট, সুনামগঞ্জ অঞ্চলে গমন করেন। এর আগে বিমান বাহিনী ঘাঁটি বাশারে আয়োজিত একটি প্রেস ব্রিফিংয়ে ভারপ্রাপ্ত বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল মোঃ শফিকুল আলম বিদ্যমান বন্যা পরিস্থিতিতে বিমান বাহিনীর চলমান কার্যক্রম ও পরবর্তী পরিকল্পনা সম্পর্কে সাংবাদিকদের অবহিত করেন।
বিজিবির ত্রাণসামগ্রী বিতরণ ॥ সোমবার সকালে বিজিবির সীমান্ত পরিবার কল্যাণ সমিতি (সীপকস)-এর উদ্যোগে বন্যাদুর্গত অসহায় বানভাসি মানুষকে ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রমের আওতায় জামালপুর সদর উপজেলার বন্যাকবলিত পাথালিয়ার চর এলাকায় পানিবন্দী অসহায়, দুস্থ ও দরিদ্র মানুষের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। এ সময় বন্যাদুর্গত ২৫টি দুস্থ ও অসহায় বানভাসি পরিবারের মাঝে ত্রাণসামগ্রী হিসেবে চাল, ডাল, আটা, তৈল, চিনি এবং ১ হাজার টাকা করে বিতরণ করা হয়।
যে যেভাবে পারছেন মানুষের কাছে গিয়ে তাদের হাতে খাবার তুলে দিচ্ছেন। গেল দু’দিন ধরে সিলেটে ত্রাণ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন আবদুল জব্বার জলিল ট্রাস্টের চেয়ারম্যান সমাজসেবী আবদুল জব্বার জলিল। তিনি বিমানবন্দর থানাধীন বিভিন্ন এলাকা ও সিলেট নগরীর প্রায় এক হাজার মানুষের কাছে ত্রাণ হিসেবে রান্না করা খাবার পৌঁছে দিয়েছেন। এর আগের দিন জালালাবাদ থানার বিভিন্ন এলাকায় পাঁচ শতাধিক পানিবন্দী মানুষের মধ্যে শুকনো খাবার হিসেবে চিড়া, গুড় ও মুড়ি বিতরণ করেন তিনি।
বন্যা শেষ না হওয়া পর্যন্ত দুর্গত মানুষের পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন আবদুল জব্বার জলিল। সিলেটের প্রাচীন প্রতিষ্ঠান লতিফ ট্রাভেলসের পক্ষ থেকেও শুরু হয়েছে বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ। নগরীর সোবহানীঘাট, মৌবন ও যতরপুর এলাকার প্রায় একহাজার মানুষের মধ্যে চিড়া, মুড়ি, গুড়, ব্রেড, বিস্কুট, মোমবাতি, দেয়াশলাইসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিতরণ করা হয়। সোমবার বন্যার্তদের মধ্যে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হয়।
বন্ধন সমাজ কল্যাণ সংস্থার পক্ষ থেকে সিলেট সদর উপজেলার সাহেববাজার স্কুল এ্যান্ড কলেজ, সাহেববাজার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সাহেববাজার মাদ্রাসা আশ্রয়কেন্দ্রের ৮শ’ বন্যার্তের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। একই আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে গত শনিবার ত্রাণ বিতরণ করেন সাহেববাজার ঈদগাহ কমিটির সভাপতি সমাজসেবী ইলিয়াস আলী।
বন্যায় সিলেটে মাছচাষে ১৪০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি ॥ মৎস্য অধিদফতরের প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, চলমান বন্যায় সিলেটে মাছচাষে ১৪০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। সুনামগঞ্জের খামারিরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রায় ৩২ হাজার ৮০২ জন খামারি ৫ হাজার ২৫৮ হেক্টর জমিতে কার্পজাতীয় মাছের চাষ করছিলেন। দেশের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের মৌসুমি বৃষ্টি ও ভারতের মেঘালয় ও অসমের ঢাল থেকে নেমে আসা পানিতে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় তাদের আর্থিক লাভের স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। সিলেটে মৎস্য অধিদফতরের বিভাগীয় উপপরিচালক ড. মোঃ মোতালেব হোসেন বলেন, এটি একটি প্রাথমিক প্রাক্কলন। খামারিদের প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও অনেক বেশি হবে। কারণ সুনামগঞ্জের প্রায় সব খামারই পানিতে ভেসে গেছে।
খোয়াই নদীর পানি বাড়ায় নতুন এলাকা প্লাবিত ॥ হবিগঞ্জ থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, টানা বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে হবিগঞ্জ জেলার খোয়াই নদীতে পানি বাড়ছে। ইতোমধ্যে বাল্লা সীমান্তে বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। নবীগঞ্জ ও আজমিরীগঞ্জের পর এবার লাখাই উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (অদা) মিনহাজ আহমেদ শোভন জানান, কুশিয়ারার পানি অব্যাহতভাবে বাড়ছে। বাঁধ উপচে পানি হাওড়ে প্রবেশ করায় নতুন নতুন গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে। সোমবার সকাল থেকে খোয়াই নদীতে পানি বাড়ছে। সকাল ৯টায় বাল্লা সীমান্তে বিপদসীমার ১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়।
মৌলভীবাজারে সার্বিক পরিস্থিতির অবনতি ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা মৌলভীবাজার থেকে জানান, মৌলভীবাজারে গত কয়েকদিনের ভারিবর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে জেলার সার্বিক পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। মনু ও কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। দুপুরের পর থেকে মনু নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যায় জেলায় ৫০ ইউনিয়নের ৫শ’ গ্রামের ২ লাখ ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দী রয়েছেন। কুলাউড়া-বড়লেখা আঞ্চলিক মহাসড়কের বিভিন্নস্থান বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখার অধিকাংশ এলাকায় বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। বন্যাকবলিত মানুষ বাড়ি-ঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্র খুঁজছেন। পানি প্রবেশ করায় ইতোমধ্যে কুলাউড়া ও জুড়ী উপজেলায় কার্যক্রম অনেকটাই বন্ধ রয়েছে।
হাকালুকি হাওড়ের তীরবর্তী ভূকশিমইল ইউনিয়নের সাদীপুর, মীরশঙ্কর, গৌরিশঙ্কর, কালেশারসহ বিভিন্ন এলাকার একাধিক বাসিন্দারা জানান, ২০ জুন সকাল থেকে পানি বাড়ার কারণে তারা অন্যত্র নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছেন। পানি ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়াতে সদ্য পাওয়া বোরো ধান, গৃহপালিত গবাদি পশু, শিশু ও বৃদ্ধদের নিয়ে আর বসত বাড়িতে থাকা যাচ্ছে না। তাই তারা আত্মীয় স্বজনের বাসাবাড়ি বা আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে ছুটছেন। অনেক স্থানে প্রধান সড়কে গরু ছাগলসহ গবাদি পশু রেখেছেন। বসত বাড়ি ও বসবাসের ঘরে কোমর পানি থাকায় রান্নাবান্না করতে না পারায় ও পর্যাপ্ত খাবার সংগ্রহে না থাকায় চরম খাবার সঙ্কটে ভুগছেন।
তিস্তা-ধরলা পারে ১৫ হাজার পরিবার পানিবন্দী ॥ লালমনিরহাট থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জাহাঙ্গীর আলম শাহীন জানান, সোমবার দুপুর ১২টায় তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ২৮ সেমি ওপর দিয়ে প্রবাহিত ও ধরলা নদীর পানি পুনরায় বিপদসীমার ৬ সেমি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে দ্বিতীয় দফায় নদী কূলবর্তী গ্রাম ও চরাঞ্চলে বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে করে তিস্তা- ধরলা পারে ১৫ হাজার পানিবন্দী পরিবার পড়েছে মহাবিপাকে। দেখা দিয়েছে নদীর পানির তীব্র স্রোত ও নদী ভাঙ্গন। বানভাসিদের আপদকালে সরকারী সহায়তা ১১ লাখ টাকা ও দেড় শ’ মেট্রিক টন ত্রাণের চাল বরাদ্দ করেছে জেলা প্রশাসন। গত ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে হাতীবান্ধার ডাউয়াবাড়ি আলহাজ আছের মামুদ সরকার গণ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়।
তিস্তা রুদ্রমূর্তি ॥ স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী থেকে জানান, ভারতে তিস্তা ব্যারেজের গজলডোবা অংশের গেট খুলে দিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। এতে গর্জে উঠে তিস্তা নদী রুদ্রমূর্তি ধারণ করেছে। ফলে উজানের ঢলে নীলফামারী এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করেছে। সোমবার বিকেল ৩টা ও বিকেল ৬টায় দেশের সর্ববৃহৎ তিস্তা ব্যারাজ নীলফামারীর ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার (৫২.৬০) ৩১ সেন্টিমিটার (৫২.৯১) ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে খবর এসেছে তিস্তার পানি আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিস্তা বেষ্টিত সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। চর এলাকার আবাদি জমিগুলো তলিয়ে গেছে। ৫০ হাজার মানুষজন ঘরবাড়ি ছেড়ে উঁচুস্থানে আশ্রয় নিয়েছে।
গাইবান্ধায় ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্দী ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা, গাইবান্ধা থেকে জানান, গাইবান্ধার সবগুলো নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সোমবার বিকেল পর্যন্ত বালাসীর তিস্তামুখ ঘাট পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ৪ সেমি এবং ঘাঘট নদীর পানি বিপদসীমার ৩৪ সেমি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে তিস্তা ও করতোয়া নদীর পানি এখনও বিপদসীমার নিচে রয়েছে।
পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জেলার সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা, ফুলছড়ি ও সদর উপজেলার ২০টি ইউনিয়নের ৫৯টি গ্রাম বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। ফলে ওইসব উপজেলার চরাঞ্চলসহ নিচু এলাকার নতুন নতুন জায়গায় পানি উঠতে শুরু করেছে।
সারিয়া-ধুনটে ৩২ হাজার পরিবার পানিবন্দী ॥ স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া অফিস জানান, বগুড়ায় যমুনার পানি প্রতিদিনই বাড়ছে। সোমবার বিকেল পর্যন্ত সারিয়াকান্দির মথুরাপাড়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৫২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। বাঙালীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) প্রকৌশলীগণ বলছেন, সারিয়াকান্দি ও ধুনটের চর এলাকা ডুবে গেছে। ৯টি ইউনিয়নের ৪২টি গ্রামের প্রায় ৩২ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
যমুনার পানি বাড়ছে ॥ স্টাফ রিপোর্টার, সিরাজগঞ্জ থেকে জানান, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢল ও ভারি বর্ষণে সিরাজগঞ্জের কাছে যমুনা নদীর পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। সোমবার বিকেল ৩টায় যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ৩৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ২৪ ঘণ্টায় যমুনায় পানি বেড়েছে ১৯ সেন্টিমিটার। তবে সোমবার দুপুর ১২টার পর পানি বৃদ্ধির হার তুলনামূলক কমেছে।
এদিকে যমুনায় পানিবৃদ্ধির ফলে অভ্যন্তরীণ নদ-নদীতেও পানি বাড়ছে। এতে ধীরে ধীরে প্লাবিত হচ্ছে যমুনার চর ও নিম্নাঞ্চল। ফলে চরাঞ্চলের মানুষের মাঝে বন্যা ও ভাঙ্গন-আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বিস্তীর্ণ ফসলি জমি প্লাবিত হওয়ায় কাঁচাপাট, তিল, কাউন, বাদাম, শাকসবজিসহ বিভিন্ন ধরনের উঠতি ফসল নষ্ট হচ্ছে।
মহুরী নদীর বাঁধ ভেঙ্গে ১০ গ্রাম প্লাবিত ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা ফেনী থেকে জানান, ফেনীর মুহুরী নদীর দুটি স্থানে নদী রক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে ১০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে তলিয়ে গেছে ফসলি জমি, মাছের ঘের। সোমবার সকালে ফুলগাজী বাজারে পানি প্রবেশ করা সহ সদর ইউনিয়নের দৌলতপুর ও দেরপাড়ায় বাঁধ ভেঙ্গে যায়। বন্যার পানিতে সদর ইউনিয়নের উত্তর দৌলতপুরে একটি কবরস্থান ভেঙ্গে যাওয়ায় একটি কবর থেকে এক নারীর লাশ ভেসে উঠেছে। বর্তমানে মুহুরী নদীর পানি ফুলগাজী পয়েন্টে বিপদসীমার ১২৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, পানির প্রবল চাপে ভাঙ্গন দেখা দিয়ে উপজেলা বাজারসহ উত্তর দৌলতপুর ও দেড়পাড়া প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিতে তলিয়ে গেছে বাজারের দোকান-পাটসহ ফসলি জমি, গ্রামীণ সড়ক পুকুর ও বসতবাড়ি।
মাদারগঞ্জে ধসে গেছে রাস্তা, পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু॥ নিজস্ব সংবাদদাতা, জামালপুর জানান, অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে জামালপুরের বিভিন্ন নদ-নদীর পানি হুহু করে বাড়ছে। সোমবার যমুনার পানি বিপদসীমার ৪৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। বন্যায় গত কয়েকদিনে জেলার ৩২ ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ নিচু এলাকা প্লাবিত হলেও যমুনার পানি অস্বাভাবিক বাড়তে থাকায় জেলার বন্যা পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়াবহতার দিকে যাচ্ছে। জেলার ইসলামপুর উপজেলায় বন্যার পানিতে ডুবে আরিফা আক্তার (৭) নামের এক শিশু মারা গেছে। বন্যার পানির তোড়ে মাদারগঞ্জ উপজেলায় গ্রাবের গ্রামে একটি কাঁচা রাস্তার প্রায় ২০০ মিটার ভেঙ্গে গিয়ে সেখান দিয়ে বন্যার পানি হু হু করে লোকালয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
নরসিংদীতে গ্রামরক্ষা বাঁধে ভাঙ্গন ॥ স্টাফ রিপোর্টার, নরসিংদী জানান, নরসিংদী সদর উপজেলার চরাঞ্চল করিমপুর ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামের গ্রাম রক্ষা বাঁধে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। রবিবার বিকেল থেকে মেঘনা নদীর ঢেউয়ে ভাঙ্গন শুরু হয়।
মাদারগঞ্জে ধসে গেছে রাস্তা, পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু॥ নিজস্ব সংবাদদাতা, জামালপুর জানান, অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে জামালপুরের বিভিন্ন নদ-নদীর পানি হুহু করে বাড়ছে। সোমবার যমুনার পানি বিপদসীমার ৪৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। বন্যায় গত কয়েকদিনে জেলার ৩২ ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ নিচু এলাকা প্লাবিত হলেও যমুনার পানি অস্বাভাবিক বাড়তে থাকায় জেলার বন্যা পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়াবহতার দিকে যাচ্ছে। জেলার ইসলামপুর উপজেলায় বন্যার পানিতে ডুবে আরিফা আক্তার (৭) নামের এক শিশু মারা গেছে। বন্যার পানির তোড়ে মাদারগঞ্জ উপজেলায় গ্রাবের গ্রামে একটি কাঁচা রাস্তার প্রায় ২০০ মিটার ভেঙ্গে গিয়ে সেখান দিয়ে বন্যার পানি হু হু করে লোকালয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
নরসিংদীতে গ্রামরক্ষা বাঁধে ভাঙ্গন ॥ স্টাফ রিপোর্টার, নরসিংদী জানান, নরসিংদী সদর উপজেলার চরাঞ্চল করিমপুর ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামের গ্রাম রক্ষা বাঁধে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। রবিবার বিকেল থেকে মেঘনা নদীর ঢেউয়ে ভাঙ্গন শুরু হয়।
The Daily Janakantha website developed by BIKIRAN.COM
Source: জনকন্ঠ