By: Daily Janakantha
ব্রুনাই কিং, মিয়াজাকি, আমেরিকান পালমার চিয়াং মাই
শেষের পাতা
17 Jun 2022
17 Jun 2022
Daily Janakantha
মোরসালিন মিজান ॥ আমের নাম ব্রুনাই কিং, মিয়াজাকি, আমেরিকান পালমার, চিয়াং মাই। আরও নাম আছে। এই যেমন ইন্দো পালমার, তাইওয়ান গ্রীন, তাইওয়ান রেড ও নামডকমাই, কিউসেফ, টমি এটকিনসন্স, ভূতোবোম্বাই। না, এখানেই শেষ নয়। আরও বহু বিচিত্র নামের আম আছে। আছে মানে, বাংলাদেশেই হচ্ছে। বিদেশী জাত। বাইরের দেশ থেকে আনা। তবে বাংলাদেশের মাটি ও আবহাওয়ার সঙ্গে বেশ মানিয়ে নিয়েছে। ফলনও হচ্ছে ভাল। আমগুলোকে এখন আর বিদেশীও বলা যাবে না। কারণ, বিদেশী জাতগুলো থেকে গবেষণার মাধ্যমে নতুন জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। নামধামও যথেষ্ট উল্টেপাল্টে নেয়া হয়েছে।
বিদেশ থেকে আম ছাড়াও বহুবিধ ফল আসছে দেশে। এসব ফল নিয়ে চলছে অহর্নিশ গবেষণা। সরাকারী সংস্থা গবেষণার মাধ্যমে বিদেশী ফলকে দেশীয় করে নিচ্ছে। বাংলাদেশের আবহাওয়ায় গাছগুলো যেন ভালভাবে বাঁচে, সে ব্যবস্থা করছে। একই চেষ্টা হচ্ছে আমের বেলায়। দেশে ঢের আম হয়। তবে নতুন কোন স্বাদ পেতে তো বাধা নেই। এ কারণেই গবেষণা। অনবরত গবেষণার মধ্যে অনেক নতুন জাতের আম উপহার দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। দেশে এগুলোর চাষ হচ্ছে। সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়ারও কাজও চলমান। তবে আ¤্রপালি, ল্যাংড়া, গোপালভোগ, লক্ষ্মণভোগ ইত্যাদি যেমন সবখানে পাওয়া যায়, বিদেশী জাতগুলো সে তুলনায় কম চোখে পড়ে।
অবশ্য প্রতিবছর এসব ফল দেখার বড় সুযোগ করে দেয় জাতীয় ফলমেলা। বর্তমানে ঢাকার খামারবাড়িতে চলছে এ মেলা। আয়োজনের দ্বিতীয় দিনে শুক্রবার সেখানে গিয়ে দেখা যায়, অসংখ্য জাতের ফল। আলাদা আলাদা স্টল ও প্যাভিলিয়নে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। বিদেশী জাত থেকে উদ্ভাবিত দেশীয় ফলগুলো খুঁজে পেতে একটু সময় লাগল। তবে পাওয়া গেল একসঙ্গেই। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের প্যাভিলিয়নে এ ধরনের ফল বিশেষভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রথমেই চোখে পড়ল ব্রুনাই কিং। বেশ বড়সড় আকারের আম। লম্বাটে আমটির ওজনও সাধারণ আমের তুলনায় অনেক বেশি। এ কারণেই ‘কিং।’ আর ব্রুনাই কিং নামকরণের কারণ, এটি ব্রুনাই থেকে আনা জাত। একটি ব্রুনাই কিংয়ের ওজন ৫ কেজি বা তারও বেশি হতে পারে বলে জানা যায়।
জাপান থেকে আসা একটি জাতের নাম মিয়াজাকি। আমের আকৃতি ডিমের মতো কিছুটা। পাকলে লাল সূর্যের মতো দেখায়। তাই বাংলাদেশে উদ্ভাবিত জাতটির নামকরণ করা হয়েছে সূর্য ডিম। একইভাবে তাইওয়ানের একটি লাল আমের নাম রাখা হয়েছে তাইওয়ান রেড। চীন থেকে এসেছে হুয়াং ডং। একই দেশ থেকে আসা সরু লম্বাটে আমের নাম চিয়াং মাই।
ফিলিপিন্সের একটি আম খুব মিষ্টি হওয়ায় নাম দেয়া হয়েছে ‘ফিলিপাইন সুপার সুইট।’ একটি আম আবার এ্যাপেলের মতো গোল দেখতে। নাম তাই এ্যাপেল ম্যাংগো। আকারে অবশ্য এ্যাপেলের চেয়ে বড়। ওজন দেড় কেজি পর্যন্ত হয়। ‘থ্রি টেস্ট’ নামের আমটি আরও বিচিত্র। এক আম থেকেই পাওয়া যায় তিন তিনটি স্বাদ ও ঘ্রাণ। ভারতবর্ষ থেকে আসা আরেকটি জাতের নাম ভূতোবোম্বাই। আর আমেরিকার একটি জাতকে ‘আমেরিকান সুন্দীর’ নাম দেয়া হয়ছে। একই দেশ থেকে আসা অন্য দুটি জাতের নাম আমেরিকান তুলি ও আমেরিকান পালমার। ইন্দোনেশিয়ার আমটি আবার ইন্দো পালমার নামে পরিচিত।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের প্যাভিলিয়নে পাওয়া গেল কলার মতো দেখতে একটি আম। নাম ব্যানানা ম্যাংগো। অধিদফতরের তথ্য মতে, এটি থাইল্যাল্ডের জাত। ২০১০ সালে এ জাতের ডগা নিয়ে এসে প্রথমে গ্রাফটিং করা হয়। পরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারে দেশের আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য কাজ শুরু হয়। সাফল্য আসে ২০১২ সালে। এরপর প্রতিবছর নিয়মিত আম আসায় ২০১৫ সালে বাণিজ্যিকভাবে কৃষকদের মধ্যে এ আমের সম্প্রসারণ কাজ শুরু হয়। আলাদা দেখতে হওয়ায় সহজেই দৃষ্টি কাড়ে ব্যানানা ম্যাংগো। তবে শুধু দেখা নয়, খেতেও এটি ভাল বলে জানা যায়।
বিদেশী জাতের দেশী ফল সম্পর্কে আরও জানতে কথা হয় কৃষিবিদ মিমি তালুকদারের সঙ্গে। কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের প্যাভিলিয়নেই পাওয়া যায় তাকে। এই কর্মকর্তা বলেন, কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের আলাদা গবেষণা সেল আছে। এ সেলের উদ্ভাবিত নতুন জাতের চারা প্রথমে গাজীপুরের উদ্যান উন্নয়ন কেন্দ্রে লাগানো হয়। সমস্ত পরীক্ষা- নীরিক্ষা শেষ হলে এসব ফলের গাছ সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়। একই প্রক্রিয়ায় দেশের নানা প্রান্তে বিদেশী জাতের দেশী আম হচ্ছে। উদ্ভাবিত জাতগুলো স্বাদে-গন্ধে একটির থেকে অন্যটি আলাদা। কোনটি খুব মিষ্টি। আবার কোনটি অত মিষ্টি নয়। সুগার কম। বৈচিত্র্যপ্রেমীদের চেনা স্বাদ গ্রহণের পাশাপাশি নতুন জাতের আমের স্বাদ নেয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন এই কর্মকর্তা।
The Daily Janakantha website developed by BIKIRAN.COM
Source: জনকন্ঠ