By: Daily Janakantha
জয়িতা ফাউন্ডেশনের এক দশক
অপরাজিতা
14 Jun 2022
14 Jun 2022
Daily Janakantha
সমতাভিক্তিক সমাজ বিনির্মাণে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে নজরকাড়া। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক প্রতিবেদনে ২০১৭, ১৮ ও ১৯ সালে বিশ্বের ১৫০টি দেশের মধ্যে আমাদের অবস্থান ৪৭-৪৯তম পর্যায়ে ওঠানামা করলেও তা নারী সমাজের এগিয়ে চলাকে নানামাত্রিক দৃশ্যমান করে তোলে। বাংলাদেশ উন্নয়নের অভিগামিতায় জোরকদমে ধাবিত হওয়া বর্তমান সময়ের এক দৃষ্টিনন্দন কার্যক্রম। সমাজে সমসংখ্যক যে কোন অংশ পিছিয়ে থাকলে সামগ্রিক উন্নয়ন দৃশ্যমান হতে আরও অনেক বেশি অপেক্ষা করতে হয়। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল রাষ্ট্রকে তেমন দুর্দশায় পড়তে হয়নি। সামগ্রিক প্রবৃদ্ধির দৃষ্টিনন্দন বলয়ে দেশের সার্বিক জনগণের জোরালো অংশীদারত্ব আজ পরিষ্কারভাবে ওঠে আসছে। প্রধানমন্ত্রীর অনন্য ক্ষমতায়নও অভাবনীয় দূরদৃষ্টির কারণে দেশ যে মাত্রায় বিশ্ব কাতারে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে সেখানে নারীদের এগিয়ে চলাও সারাদেশে সম্প্রসারিত হতে সময় লাগছে না।
বিশেষ করে ২০০৯ থেকে ২০২২ সালের যুগ পূর্তির মহাসমন্বয়ের যে দুরন্ত অভিযাত্রা সেখানে সারাদেশের সমৃদ্ধ অবয়ব ছাড়াও নারী সমাজের উন্নয়ন প্রবাহে অনন্য সম্পৃক্ততা বিশেষভাবে আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে। এক সময়ের গৃহিণী নারীরা আজ সময়ের দাবিতে ক্ষুদ্র পারিবারিক আঙিনা থেকে বৃহত্তর সামাজিক প্রেক্ষাপটে সফল পদচারণায় দেশটার উত্তরোত্তর শ্রীবৃদ্ধি ঘটিয়েই যাচ্ছে। শিক্ষক এবং চিকিৎসক হিসেবে নারীরা নিজেদের ভাবতেই শুধু নয়, তৈরি করতেও পছন্দসই পেশা হিসেবে বেছে নিত। কিন্তু বর্তমানে নারীরা সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার আসন অলঙ্কৃত করা ছাড়াও বহুমাত্রিক ঝুঁকিপূর্ণ পেশায়ও নিজেদের প্রমাণ করতে পেছনের দিকে তাকাচ্ছে না। গাড়ি চালানো থেকে শুরু করে পাইলট হওয়ার মতো চ্যালেঞ্জিং কর্মক্ষেত্র তাদের হাতছানি দিচ্ছে। যদিও সংখ্যায় তারা এখন হাতেগোনার অবস্থায়। কিন্তু যে ব্যবসায়িক বলয় থেকে নারী সমাজ অপেক্ষাকৃত ভাবে পিছিয়ে ছিল সেখানে তাদের দৃষ্টিনন্দন অভিযোজন নিতান্তই সময়ের দাবি। তাছাড়া, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এক বিরাট সফল কার্যক্রমের আওতায় নারীদের অন্তর্ভুক্তি করানোও বিশেষ কৃতিত্ব। ব্যবসা-বাণিজ্য শুধু ঝুঁকিপূর্ণ নয়Ñ বরং পুঁজি বিনিয়োগও অবশ্যম্ভাবী কর্মযোগ। যার ঘাটতিতে ব্যবসাটাই তো শুরু করা যায় না।
প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় আসার ৩ বছরের মাথায় ২০১১ সালে ‘জয়িতা ফাউন্ডেশন’ নামে এক নারীবান্ধব কর্মসূচীর সূচনা করে দিলেন। ‘জয়িতা’ শব্দটিও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপহার। তাছাড়া নিজেদের শ্রমে অপরাজিতা নারীরাই ‘জয়িতা’র কাতারে অভিষিক্ত হয়। নারীকেন্দ্রিক অনন্য স্বাপ্নিক আবিষ্টতায় ‘জয়িতা’ কার্যক্রম তার নির্দিষ্ট কাক্সিক্ষত বলয় ধরতে সারাদেশে এই কর্মযোগকে সম্প্রসারিত করতে সরকার নিজেই নারীদের পাশে দাঁড়ায়। ২০১১ সালে নবেম্বর মাসে সরকারের আর্থিক সহযোগিতায় মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয়ের অভিভাবকত্বে মহিলা অধিদফতর ‘জয়িতা’র স্বাপ্নিক কর্মসূচী পরীক্ষামূলক ভাবে তার শুভযাত্রা সূচনা করে। তিন বছর মেয়াদী এই কর্মযোগে আরও একটি অনন্য প্রত্যয় সংযুক্ত করাও সংশ্লিষ্ট অধিদফতরের সচেতন দায়বদ্ধতা। ‘জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ’ নামে এক অভাবনীয় কর্মযোদ্যাতনা সূচিত করে সারা বাংলাদেশে এমন সমৃদ্ধ বার্তা ছড়িয়ে দেয়া হয়। কার্যক্রমের পরিচিতিই শুধু নয়, নারীর সচেতন অংশ ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায় নিজেদের সম্পৃক্ত করতে জোরকদমে এগিয়ে আসতে শুরু করে। বিশেষ করে রাজধানীতে জয়িতার একটি বিশেষ পরিকাঠামো তৈরি করে তৃণমূল নারীদের আগ্রহী করে তোলার প্রচেষ্টা চালানো হয়। ইতোমধ্যে গ্রামে-গঞ্জে, প্রত্যন্ত অঞ্চলে অনেক ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তা তাদের স্বল্প পুঁজিতে কিছু বিপণন পণ্য তৈরি করে স্বাবলম্বী হওয়ার প্রেরণাকে নানামাত্রিকে জাগিয়েও তোলে। শুধু তাই নয়, দেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পমেলা এবং পাটশিল্প মেলায় তৃণমূল নারী উদ্যোক্তাদের পণ্য বিক্রির সুযোগ তৈরি করে দেয়াও প্রশাসনিক পর্যায়ের অবধারিত কর্মপ্রক্রিয়া। শুধু তাই নয়, ধানম-ির রাফা প্লাজার ৪র্থ তলায় জয়িতা ফাউন্ডেশনের বিরাট শোরুম রয়েছে। হরেকরকম হস্তশিল্পের পণ্য সম্ভারে জয়িতা ফাউন্ডেশনের এমন বৃহৎ বিপণন কেন্দ্রটি সত্যিই আকর্ষণীয় ও মনোমুগ্ধকর। বিভিন্ন নারী উদ্যোক্তা তাদের স্টলগুলো বিশেষ বিশেষ পণ্যে মনোরম দৃশ্যে সাজিয়ে-গুছিয়ে দর্শনার্থীর মনোযোগ কাড়তে সচেষ্টই শুধু নয় সফল হতেও সময় লাগে না। পণ্য সম্ভারে ভরপুর এই বিরাট স্থানটি বিপণনের সামগ্রিক দায়বদ্ধতা মূলত সংশ্লিষ্ট নারী উদ্যোক্তাদের।
নারীবান্ধব কর্মযোগে পুরো ফ্লোর মুখরিত হলেও দর্শক ও ক্রেতার সারিতে নারী-পুরুষের মিলিত অভিগমন চমকৃত হওয়ার মতোই। সেখানে স্থান পরিষ্কার করা থেকে রান্নার হরেকরকম উপাদান তৈরি করে দর্শনার্থীদের খাবার পরিবেশন সবই নারীদের হাতে। অভাবনীয় এক দৃষ্টিনন্দন দৃশ্য। শিশু ও নারী বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং মহিলা অধিদফতর যৌথভাবে সরকারের পক্ষ থেকে স্বল্পসুদে ঋণ বিতরণ করে উদীয়মান উদ্যোক্তাদের পাশে দাঁড়িয়ে সর্ববিধ সাহায্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে প্রশাসনিক সহায়তায় তৈরি হওয়া এই জয়িতা ফাউন্ডেশনে অন্তর্ভুক্তি হতে গেলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নিবন্ধিত হওয়াও এক আবশ্যকীয় শর্ত। সুশৃঙ্খল নিয়মবিধি ও ধারাবাহিক কার্যকারিতায় গত ১১ বছর ধরে চলা এই নারী ঘনিষ্ঠ ফাউন্ডেশন প্রতিনিয়তই উদ্যোক্তা তৈরিতে বিশেষ অবদান রাখছে।
অপরাজিতা প্রতিবেদক
ছবি : শিউলি আহমেদ
The Daily Janakantha website developed by BIKIRAN.COM
Source: জনকন্ঠ