By: Daily Janakantha
রন্ধন শিল্পী ঐন্দ্রিলা শফিক
অপরাজিতা
14 Jun 2022
14 Jun 2022
Daily Janakantha
উন্নয়ন অগ্রগামিতায় বাংলাদেশের দৃষ্টিনন্দন অর্জন এখন নজরকাড়া। শুধু অবকাঠামোর দর্শনীর শ্রীবৃদ্ধিই নয় নাগরিকের ৫টি মৌলিক অধিকারের প্রেক্ষাপটে সাধারণ জনগোষ্ঠীর জীবন মান উন্নত হওয়াও ক্রমান্বয়ে দৃশ্যমান হচ্ছে। সঙ্গত কারণে সমসংখ্যক নারীরও পিছিয়ে থাকার সুযোগ নেই। সার্বিক জনগণের উন্নয়ন ব্যতিরেকে দৃশ্যমান সফলতা অর্জন অসম্ভব হতো। কারণ জনসংখ্যার অর্ধেক যদি ক্রমবর্ধমান উন্নয়নে সম্পৃক্ত হতে ব্যর্থ হয় তাহলে যথার্থ অর্জন দৃষ্টিগোচর হতো না। এক সময়ের গৃহবন্দী নারীরা আধুনিকতার নির্মাল্যে নিজেদের উপযুক্ত হিসেবে তৈরি করতে জোর কদমে এগিয়ে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, বৈচিত্র্যময় পেশার অংশীদারিত্ব প্রমাণ করে ব্যবসাবাণিজ্যেও ঝুঁকি নিতে পেছনের দিকে তাকাচ্ছে না। শিক্ষকতা ও চিকিৎসক হওয়ার লক্ষ্যে গত শতকের নারীরাও কেমন যেন আবিষ্ট ছিল। বর্তমান শতকের শুরুতেই নারীরা আরও চ্যালেঞ্জিং পেশায় নিজেদের একীভূত করাও সময়ের অনিবার্য চাহিদা। সেখানে ব্যবসা সংক্রান্ত কর্মক্ষেত্র নিজ থেকে তৈরি করাও কম ঝক্কি-ঝামেলার বিষয় নয়। এখন রোজগার করার তাগিদ ছাড়াও সম্পন্ন ঘরের উদীয়মান নারীরা ব্যবসাবাণিজ্যকে যেভাবে নিজেদের আয়ত্তে নিয়ে আসছে তা সত্যিই মুগ্ধতার বিস্ময়। শুধু তাই নয় সফলকাম হতেও বেশি সময় লাগছে না।
ঐন্দ্রিলা শফিক কৃতি তেমনই একজন উদীয়মান রন্ধন শিল্পী যিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করে তার বর্তমান পেশা রন্ধন শিল্পে হরেক রকম কর্মযোগে সাজিয়ে গুছিয়ে নিয়েছেন। একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক করা কৃতি অল্প বয়সে পছন্দের মানুষের ঘরণী হয়ে সংসার জীবনে প্রবেশ করেন। দুই পুত্র সন্তানের জননী কৃতি প্রথমে শখের বসেই রান্নার বিভিন্ন কৌশল আয়ত্তে এনে এই পেশাকে জীবনের কর্মক্ষেত্র হিসেবে বিবেচনায় আনতে একেবারে দ্বিধাহীন ছিলেন। ছোট বেলা থেকে রান্নার দিকে ঝোঁকও ছিল প্রবল। তবু তাই নয় সব কিছুতে যেন শিল্পসত্তার অন্য পরশ। হাতে মেহেদি পরানোর পারদর্শিতাও ছিল চমকপ্রদ। তবে এক সময় মনে করল রান্নার মাধ্যমেই সে তার জীবন ও পেশাকে একীভূত করে দেবে। ঢাকা শহরের মতো মেগা নাগরিতে নিজেকে যে কোন পেশায় পছন্দমাফিক তৈরি করা খুব সহজ ছিল না। কৃতিকেও রীতিমতো নিজের ব্যবসায়িক কর্মজগতকে শক্ত করতে লড়াই করতে হয়েছে। ২০২০ সালে যখন করোনার প্রথম ও অজানা থাবায় মানুষের নিত্যজীবন অন্য মাত্রায় দুর্বিসহ হয়ে পড়ল সেখানে অনেক বিপন্নতার মাঝেও কোথায় যেন আশার আলো ঝলকানি দিল। মানুষের সঙ্গে মানুষের নিরাপদ বলয় তৈরি করতে হয় চরম সংক্রামক করোনার দুর্বিপাকে। সামাজিক দূরত্ব থেকে ব্যক্তিক বিচ্ছিন্নতা হয়ে ওঠে প্রতিদিনের নিয়মবিধিই শুধু নয় স্বাস্থ্য সুরক্ষারও অন্যতম বৈশিষ্ট্য। রাজধানীর উচ্চবিত্তের সংসারে নিয়োজিত গৃহকর্মীরা পড়েছিল চরম বিপাকে। শুধু উচ্চবিত্ত কেন মধ্যবিত্তরাও সাহায্যকারী ছাড়া চলতে এখন অপারগ। করোনার ছোঁয়াছে জীবাণুর আশঙ্কায় কত গৃহকর্মী যে তার প্রতিদিনের কাজ থেকে ছিটকে পড়ে হিসাব মেলানোও কঠিন। সে সময় মাত্র তৈরি হওয়া রন্ধন শিল্পীরা এমন আকালে ঘরের গৃহিণীদের পাশে এসে দাঁড়ায়। সত্যিই এক অভাবনীয় কর্মদ্যোতনা যা বিধ্বংসী করোনা নতুন আর এক পেশাকে যেন অবারিত মুক্ত করে দিল। কৃতিও সেই সুযোগে তার নতুন কর্মক্ষেত্রকে এগিয়ে নিতে সমর্পিত হলো। সেবাটা কিন্তু একেবারেই প্রযুক্তির বিশ্বে নয়Ñ বরং মুঠো ফোনের বার্তার মাধ্যমে খাবারের তালিকা আসত। কৃতি সে ভাবেই রান্না করে একজন নিয়মিত লোকের মাধ্যমে তা যথাস্থানে পৌঁছেও দিত। সেখানে অসুস্থ রোগীর খাবার থেকে ঘরের অন্যান্য সদস্যের জন্য এক বেলা রান্না সরবরাহ করা যেন নৈমিত্তিক বাণিজ্যের সফল অভিযোজন। শুধু তাই নয়, করোনার দুই বছরে মানুষ ঘরে বসে জন্মদিনের উৎসব পালন করেছে বাসায় কেক সরবরাহের সফল প্রচেষ্টায়। প্রথম দিকে খাবার বাড়িতে পৌঁছে দেয়ার বিঘœতাও হয়েছে। ঠিকমতো সার্ভিস দিতে হিমশিমও খেতে হয়েছে। এখন সব বিপত্তিকে পাশ কাটিয়ে কৃতি রীতিমতো এক পাকা রন্ধনশিল্পীই নন- একজন উদ্যোক্তার কাতারেও নিজেকে প্রমাণ করে যাচ্ছেন। ব্যবসা-বাণিজ্যের ওঠা-নামা সমাজের চিরায়ত রীতি। রান্নার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয় না। প্রতিমাসে সমান আয় করাও মুশকিল হয়ে যায়। তবে গড়পরতা হিসাব করলে লোকসান মোটেও গুনতে হয় না। মাঝে মাঝে অনেক চাহিদা থাকে বিশেষ বিশেষ সময়ে। রোজা, ঈদ কিংবা কোন অনুষ্ঠান-আয়োজনে। তবে কৃতি এখন তার বর্তমান পেশাকে সহজ, স্বাভাবিক এবং সফলভাবেই এগিয়ে নিচ্ছেন। বাসায় তার নিয়মিত সাহায্যকারীরা তাকে সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে প্রয়োজন মাফিক। নিজেও সামলিয়ে, গুছিয়ে ব্যবসাটাকে মোটামুটি একটা সম্মানজনক পর্যায়ে নিয়ে আসাও প্রতিদিনের জীবন সংগ্রামের অবধারিত পর্যায়। বয়স এখনও অল্পই- মাত্র ৩০। কিন্তু বর্তমান পরিবেশ-পরিস্থিতিকে নিজের সাধ্যমতে অনুকূলে নিয়ে আসাও এক অনন্য কর্মযোগ। কর্মক্ষেত্র যাই হোক না কেন তাকে সফলতার সঙ্গে এগিয়ে নিতে পারাটাও বড় মাপের সক্ষমতা। স্বামী আশরাফ রানা দেশের প্রখ্যাত ওষুধ কোম্পানি বেক্সিমকোর উচ্চপদস্থ ফার্মাসিস্ট।
দুই পুত্র সন্তান আরিশ ও এ্যারঙ। দুই সন্তানকে নিয়মিত স্কুলে পাঠাতে হয়- আনতে হয়। কোচিং সেন্টারেও নিয়ে যেতে হয় যা বর্তমান সময়ের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রমের নিয়মিত যাওয়া-আসা। আবার বাসায়ও তাদের সবই করে যাচ্ছে কৃতি মনোযোগ, দক্ষতা ও সফলতার সঙ্গে। তার রান্নার বাহারি আয়োজনে অনেক গ্রাহকের নিয়মিত চাহিদা পূরণ হওয়াও পেশাগত জীবনের বহুমাত্রিক আবেদন। এই উদীয়মান রন্ধন শিল্পীর জীবন ও কর্ম যেন তার প্রত্যাশিত আকাক্সক্ষা ও নিবেদনে সামনের দিকে এগিয়ে যাক। রান্নার সম্ভাবনার বিশ্ব যেন তাকে সব সময় এক আনন্দঘন জীবন উপহার দিয়ে যাবে- তেমন শুভ কামনা থাকল।
অপরাজিতা প্রতিবেদক
The Daily Janakantha website developed by BIKIRAN.COM
Source: জনকন্ঠ