By: Daily Janakantha
সেবা খাতে সেবা নেই
উপ-সম্পাদকীয়
11 Jun 2022
11 Jun 2022
Daily Janakantha
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেবার ব্রত নিয়ে মানুষের পাশে থাকার জন্য ডাক্তারদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতায় আমাদের দেশে চিকিৎসা এবং চিকিৎসকদের অনেক সীমাবদ্ধতার কথা উঠে এসেছে। সকল সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে সরকারের বিশ^মানের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ডাক্তারদের সহযোগিতা কামনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর এই বক্তৃতা শুনে এক দশক আগের নিজের চিকিৎসা অভিজ্ঞতার একটি স্মৃতি মনে পড়ে যায়। সেদিন রোগে আক্রান্ত হয়ে ডাক্তারদের কাছে ঘুরে ঘুরে হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। খুব একটা জটিল রোগ ছিল তাও নয়। দেশের সেরা ডাক্তারের কাছে গিয়েও কোন সমাধান না পেয়ে সিঙ্গাপুর যেতে হয়েছিল। লেখাটি চিকিৎসকদের নজরে এলে তাদের পেশাগত কাজে কিছুটা হলেও কাজে লাগতে পারে। ডাক্তারদের মানসিকতা পরিবর্তন হলে প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন বাস্তবায়ন সহজ হবে।
শুধু চিকিৎসা খাত কেন, বাংলাদেশের প্রতিটি সেবা খাতেই রয়েছে মানসিকতার সঙ্কট। সেবা খাত মানেই মানুষকে সেবা দেয়ার জন্য। দৈনন্দিন প্রয়োজনে মানুষকে বাধ্য হয়েই এইসব জায়গায় যেতে হয়। কর্মীদের বিনয় এবং সুন্দর ব্যবহার সেবা খাতকে আকর্ষণীয় করে তুলতে পারে। কমাতে পারে মানুষের ভোগান্তি। এর জন্য অর্থনৈতিক বিনিয়োগের প্রয়োজন নেই। প্রচলিত ব্যবস্থায় শুধু সহযোগিতার মনোভাব, বিনয়, আন্তরিকতা ও যথাযথ ব্যবহারে আমাদের দেশের সেবা খাতও হয়ে উঠতে পারে বিশ^মানের। চিকিৎসা ছাড়াও ব্যাংক-বীমা থেকে শুরু করে বিদ্যুত, পানি, গ্যাস, ফোন, সিটি কর্পোরেশন, রাজউক সবই সেবা খাতের অন্তর্ভুক্ত। এসব স্থানে মানুষের হয়রানি নিত্যদিনের চিত্র। উন্নত বাংলাদেশ গড়তে হলে আমাদের মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি নিশ্চিত করতে হবে। ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে হবে সমৃদ্ধ ও বিনয়ী জাতি হওয়ার লক্ষ্যমাত্রার দিকে।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতায় চিকিৎসার জন্য মানুষের বিদেশমুখী হওয়ার কথা বলেছেন। শুধু অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য নয়, অনেক সময় মানুষ সর্বস্বান্ত হয়েও বিদেশ যেতে বাধ্য হন। ব্যক্তি জীবনের অভিজ্ঞতায় আমি তা বুঝেছি মর্মে মর্মে। একটি রোগে ভুগেছি প্রায় তিন বছর। একাধিকবার অপারেশন হয়েছে, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ওষুধ খেতে হয়েছে। শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি এমন জায়গায় দাঁড়িয়েছিল যে, দেশে আর কোন চিকিৎসাই সম্ভব ছিল না। দীর্ঘ এক মাস বিভ্রান্ত ও হতাশ হয়ে আমি সিঙ্গাপুর যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হই। অর্থনৈতিক সামর্থ্য ছিল না কিন্তু উপায়ও ছিল না। কিছু শুভাকাক্ষ্মী মানুষের সহযোগিতায় আমি সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা নিতে পেরেছিলাম। এ্যাপয়েনমেন্ট অনুযায়ী চলে গিয়েছিলাম মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে বিশ^খ্যাত কোলোরেক্টাল সার্জন ডাঃ নিয়ামের কাছে। ঘড়ির কাঁটা ধরে তিনি ডাকলেন, দেখলেন এবং পাঠিয়ে দিলেন এমআরআই করতে। তাকে বললাম, ঢাকায় এমআরআই করেছি, ফিল্মও আছে আমার কাছে। তিনি আমলে নিলেন না। আমি চলে গেলাম এমআরআই করতে। ঢাকায় যে মেশিনে এমআরআই করা হয়েছিল ওখানেও একই সিমেন্স (ঝরবসবহং) মেশিন। পার্থক্য শুধু ঢাকায় মেশিনের ঘর্ঘর ভীতিকর শব্দে কান ঝালাপালা হয়ে গিয়েছিল, ওখানে মিউজিকের শব্দ শুনেছি। ডাঃ নিয়ামের চেম্বার ১৮ তলায়। নিচতলায় পরীক্ষা শেষ করে উপরে যেতেই ডাক্তার সাহেব ডাকলেন। এমআরআই রিপোর্ট এবং ফিল্ম তার টেবিলের কম্পিউটারে চলে গেছে আমি পৌঁছানোর আগে। তিনি মনোযোগ দিয়ে দেখলেন, স্মিত হাস্যে বললেন, একটা ছোট্ট অপারেশন করতে হবে। মাত্র ৩০ থেকে ৪০ মিনিট লাগবে। একটি কাগজে তিনি পেন্সিল দিয়ে ছবি আঁকলেন এবং আমাকে বুঝালেন কি সমস্যা হয়েছে, অপারেশন কোথায় ও কিভাবে করবেন। মনে হলো বিষয়টা খুবই সহজ। ঢাকায় চিকিৎসার হতাশাজনক অভিজ্ঞতায় আমি জিজ্ঞেস করলাম, অপারেশন হলে সম্পূর্ণ ভাল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে কিনা।
স্মিত হাস্যে ডাঃ নিয়াম বললেন, ৯৭ পারসেন্ট গ্যারান্টি।
বাকি ৩ ভাগ নয় কেন?
সৃষ্টিকর্তার জন্য কিছু রাখতে হয়। কাল সকালেই অপারেশন হবে।
দুই ঘণ্টা আগে হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দিয়ে আমাকে বিদায় করলেন। আমি চলে এলাম হোটেলে। পরদিন আমার অপারেশন। তবুও দীর্ঘ এক মাস পর আমি নির্বিঘেœ গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়েছিলাম। মন থেকে সব চিন্তা দূর হয়ে গিয়েছিল ডাক্তারের কথা ও ব্যবহারে। পরদিন যথারীতি অপারেশন হলো। একটিও এন্টিবায়েটিক না খেয়ে শুধু ড্রেসিং করে পরম করুণাময়ের ইচ্ছায় আমি ভাল হয়ে গেলাম।
এমন অভিজ্ঞতা অনেকের রয়েছে। ক্যান্সার বলে রোগীকে জবাব দিয়ে দিয়েছেন, বিদেশ গিয়ে পরীক্ষা করে দেখেন কিছুই হয়নি। জটিল অপারেশনের পরামর্শ দিলেন, বিদেশ গিয়ে কয়েকটি ট্যাবলেট খেয়েই ভাল হয়ে গেলেন। আমি অভিজ্ঞতাটি বর্ণনা করলাম মূলত দুটি কারণে। আমাদের দেশের চিকিৎসকরা দুটি বিষয়ে মনযোগী হলে প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন অনুযায়ী এই দেশেই আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসা ব্যবস্থা স্থাপন সম্ভব হবে। একটি হচ্ছে যথাযথ রোগ নির্ণয় ও সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতি এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে রোগীর প্রতি চিকিৎসকের মনোযোগ ও আন্তরিকতা। সঠিক রোগ নির্ণয় করতে হলে একজন ডাক্তারকে সময় নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। রোগীকে সময় দিতে হবে। আমাদের দেশে যেটির খুবই অভাব। দুই মিনিটে এক রোগী, ঘণ্টায় ৩০ জন এবং আয় ৩০ হাজার টাকা ইত্যাদি চিন্তা ত্যাগ করতে হবে। রোগীকে প্রয়োজনীয় সময় দিতে হবে। রোগ নিরূপণ হয়ে গেলে বিশে^র সর্বাধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি অনুযায়ী চিকিৎসা নিশ্চিত হতে হবে। এজন্য পড়াশোনায় মনোযোগ দিয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানের সর্বশেষ অবস্থা (টঢ়মৎধফব) জানতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ওষুধের থেকেও ডাক্তারদের দুটো কথা রোগীকে অনেক সুস্থ করে তোলে। তাদের ভেতরে আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি করে। অনেক ডাক্তারের কথাতেই রোগী অর্ধেক ভাল হয়ে যায়। সেই বিষয়টার দিকেও একটু বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। শুধু পেশা হিসেবে নয়, ব্রত হিসেবে মানবতাবোধ নিয়ে রোগীদের পাশে দাঁড়াতে হবে।’ বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য কতটা সঠিক তা আমি নিজে অনুভব করেছি। দুশ্চিন্তা এবং অনিশ্চয়তায় আমি এক মাস ঠিকভাবে ঘুমাতে পারিনি। ডাক্তারের দুটো কথায় পরের দিন অপারেশন জেনেও আমি নিশ্চিন্তে ঘুমিয়েছিলাম। হয়ত আত্মবিশ^াসও আমাকে দ্রুত সুস্থ হতে সাহায্য করেছিল। আমাদের ডাক্তারদের মেধা কম নয়। বিদেশ গিয়ে তারাই সুনাম অর্জন করেন। এখানেও পারবেন। শুধু মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। নানামুখী চাপ কমিয়ে ফিরতে হবে স্বাভাবিক ব্যবহারে। ভাল ব্যবহার ও বিনয় দিয়ে জয় করতে হবে রোগীর মন। প্রত্যেকটা রোগীকে আপন করে নিয়ে সময় দিয়ে তার রোগ সম্পর্কে বুঝাতে হবে, আশ^স্ত করতে হবে। রোগী মানসিকভাবে চাঙ্গা হলে রোগ নিরাময় সহজ হবে। বাদ দিতে হবে দুই মিনিটে এক রোগী, ঘণ্টায় ৩০ জনের তত্ত্ব।
শুধু ডাক্তার কেন, প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমাদের যথাযথ ব্যবহারের খুব সঙ্কট। আড্ডা-হাসির ঐতিহ্যে লালিত বাঙালী সেবার টেবিলে বসলেই যেন হাসতে ভুলে যান। সহযোগিতার মনোভাব, বিনয় যেন সুদূর পরাহত। আপনি যে কোন সেবার জন্য লাইনে দাঁড়ালে কাউন্টারের লোকটিকে মনে হবে তিনি খুবই বিরক্ত। কোন কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে আছেন। গম্ভীরভাবে সন্দেহের চোখে আপনার দিকে তাকাবে। অকারণে প্রতিটি কথায় বিরক্তি ঝরে পড়বে। মনে হবে যুগ-যুগান্তর আগে থেকেই তিনি হাসতে ভুলে গেছেন। একটির বেশি দুটি কথা জিজ্ঞেস করলে ক্ষিপ্ত হয়ে যাবেন। এমনকি বাংলাদেশের পতাকা বহনকারী বিমানের আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে সেবার কাজে নিয়োজিত এয়ার হোস্টেজও যেন হাসতে জানেন না। আপনার কথা পছন্দ না হলে ঝাঁঝালো কণ্ঠে বিরক্তি প্রকাশেও কার্পণ্য করবেন না।
যারা বিদেশ বিভুঁইয়ে ঘুরেছেন তারা নিশ্চয়ই জানেন, সেবার কাজে নিয়োজিত নারী কিংবা পুরুষ কতটা বিনয়ী, আন্তরিক ও হাসিখুশি হন। বিনয় ঝরে পড়ে প্রতিটি কথা ও আচরণে। ঐতিহ্যগতভাবে এরা সামাজিকতার দিক থেকে বাঙালীর ধারেকাছেও নয়। পশ্চিমা কৃষ্টি কিংবা উন্নত বিশে^র মানুষেরা ব্যক্তি জীবনে পরিবার ও সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন এবং আত্মকেন্দ্রিক হয়ে থাকে। অথচ মানুষের সঙ্গে আচরণে এদের বিনয়ের শেষ নেই। কৃত্রিম হলেও হাসি যেন ঠোঁটে লেগেই থাকে। সেবামূলক কাজে নিয়োজিতদের তো কথাই নেই। আমার এক বন্ধু ব্যাংক কর্মকর্তা এবং একটি শাখার ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন। তাকে একদিন বললাম, আপনার ব্যাংকে সবই ঠিক আছে শুধু কাউন্টারে বসা তরুণ-তরুণীদের মুখে একটু হাসি থাকলে ভাল হতো। কাস্টমারগণ ব্যাংকে লেনদেন করতে আরও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। বন্ধুটি আমাকে আশ^াস দিয়ে বললেন, এদের ব্যবহার পরিবর্তনে আমি চেষ্টা করব। কিছুদিন পর আমি বন্ধুর ব্যাংকে গিয়ে দেখলাম অথৈবচ। বন্ধুকে জিজ্ঞেস করতেই তিনি হতাশ কণ্ঠে বললেন, পারিনি। আমি সামনে থাকলে তারা হাসি খুশিই থাকেন, চলে যাওয়া মাত্র যেই-সেই।
সুন্দর ব্যবহারে অনেক কঠিন কাজও সহজ হয়ে যায়। উন্নতি হয় ব্যবসা-বাণিজ্যে। আমাদের মহল্লায় কয়েকটি মুদি দোকান রয়েছে। ভিড় হয় একটিতেই। আমিসহ অনেকে এই দোকানটিতে লাইন দিয়ে জিনিস কিনি। দাম কম নয়, শুধু দোকানির বিনয় ও ভাল ব্যবহার। মালিকের ব্যবহারের কারণে তার কর্মচারীদের ব্যবহারও চমৎকার। দোকানের মালিক চোখের সামনে খুব অল্প সময়ে তরতর করে ওপরে উঠে গেলেন। ১০ বছরে তিনি আরও কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক। পাশের দোকানগুলো যেমন ছিল তেমনি আছে। কোনটি আবার ধুঁকতে ধুঁকতে উঠেই গেছে। পার্থক্য শুধু বিনয়। পশ্চিমা কৃষ্টি শুধু নয়, পূর্বদিকের মানুষও বিনয় দিয়ে বিশ^ জয় করার সামর্থ্য রাখেন। জাপানীদের বিনয়ের সুনাম বিশ^জুড়ে। কোরিয়া, ফিলিপিন্স, মালয়েশিয়ার মানুষের বিনয়ের খ্যাতিও কম নয়। থাইল্যান্ডের অধিবাসীরা বিনয় দিয়ে বিশ^ জয় করেছেন অনেক আগে। প্রতিবছর লাখ লাখ টুরিস্ট থাইল্যান্ড ভ্রমণে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন স্থানীয় অধিবাসীদের সুন্দর ব্যবহার ও বিনয়ের কারণে।
বিনয়ের সঙ্কট নেই প্রতিবেশী ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের অনেক রাজ্যে। এসব রাজ্যে চিকিৎসক ও নার্সের সেবা বিশ^মানের। উত্তরের রাজ্যগুলোর অবস্থা আমাদের মতোই। প্রশ্ন হচ্ছে কেন এমন হয়? বিষয়টি বুঝতে চেয়েছিলাম রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতলের মনোবিজ্ঞানী তারানা আনিসের কাছে। এক যুগের বেশি সময় ধরে তিনি মানুষের মনের রোগের চিকিৎসা দিচ্ছেন। দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় তিনি বলেন, উন্নত বিশে^র সঙ্গে আমাদের দেশের মানুষের মনোজগতের পার্থক্য রয়েছে। উন্নত বিশে^র মানুষ একটি আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তায় বসবাস করেন। তাদের মানসিক চাপ কম। কাজের পরিধিও সীমিত। এ কারণে তারা স্বাভাবিক আচরণ করতে পারেন। দীর্ঘদিন ধরে চলার কারণে বংশ পরম্পরায় এক ধরনের অভ্যস্ততাও এসে যায়। আমাদের দেশের মানুষের মানসিক চাপ অনেক। চাকরিতে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের চাপ, পরিবারে অর্থনৈতিক চাপ, সামাজিক নিরাপত্তার অভাব এবং ভবিষ্যত অনিশ্চয়তায় সব সময় মন বিগড়ে থাকে। এক পর্যায়ে বিগড়ে থাকা মনের অভ্যস্ততা তৈরি হয়। দীর্ঘদিন এমন অবস্থা চলতে চলতে তারা বুঝতেই পারেন না কখন এমন হয়ে গেছে। ফলে, তার পক্ষে আর স্বাভাবিক আচরণ সম্ভব হয় না। এছাড়া একজন ডাক্তারকে প্রতিদিন যে পরিমাণ রোগী দেখতে হয়, তাতে রোগীর প্রতি তার স্বাভাবিক আচরণ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। এই মনোবিজ্ঞানী আশাবাদী, বাংলাদেশের চলমান আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে পরিস্থিতি পরিবর্তন হবে। আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের মধ্যে মানসিক চাপ কমতে থাকবে। তখন বিনয় এবং স্বাভাবিক আচরণও ফিরে আসবে।
এর বাইরেও সমাজ বিজ্ঞানীরা আরও কিছু কারণের কাথা বলেন। শিশু বয়স থেকে ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠার সময় তাদের যথাযথ পাঠদান হয় না। শিশুকে বিনয় এবং স্বাভাবিক আচরণে অভ্যন্ত করতে প্রথম দায়িত্ব বাবা-মা ও পরিবারের। এরপরই এই দায়িত্ব বর্তায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওপর। বাবা-মা, পরিবারের অন্যান্য সদস্য এবং শিক্ষকরা যখন স্বাভাবিক আচরণ করেন না, তখন শিশুরাও বিভ্রান্তি নিয়ে বড় হতে থাকে। একসময় বিনয় কিংবা স্বাভাবিক আচরণ তাদের চরিত্র থেকে বিদায় নেয়। কর্মজীবনে তিনি সেবা প্রতিষ্ঠান বা যেখানেই থাকুন, আচরণ হয় রুক্ষ। এটিই তার কাছে স্বাভাবিক আচরণ মনে হয়। আমরা উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি। শুধু অর্থনৈতিকভাবে সফল হলেই উন্নত বাংলাদেশ হওয়া যাবে না। প্রয়োজন হবে বিনয়ী জাতিতে উন্নীত হওয়া এবং উন্নত আচরণে অভ্যস্ত হওয়া। পরিবার এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকেই এই শিক্ষা শুরু করতে হবে। পারিবারিক এবং প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করতে পারে।
লেখক : ডেপুটি এডিটর, জনকণ্ঠ
The Daily Janakantha website developed by BIKIRAN.COM
Source: জনকন্ঠ