By: Daily Janakantha
একগুচ্ছ প্রণোদনায় ঘুরে দাঁড়াল শেয়ারবাজার
প্রথম পাতা
23 May 2022
23 May 2022
Daily Janakantha
অপূর্ব কুমার ॥ সরকারের এক গুচ্ছ প্রণোদনায় ঘুরে দাঁড়াল দেশের শেয়ারবাজার। করোনা পরিস্থিতিতে অর্থনীতির সব সূচক উর্ধমুখী থাকলেও গত কয়েক দিন ধরে শেয়ারবাজারে অস্থিরতা চলছিল। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে শেয়ারবাজারে শৃঙ্খলা ফেরাতে রবিবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এক গুচ্ছ উদ্যোগ নেয়া হয়। বিশেষ উদ্যোগ নেয়ার পরদিনই প্রধান শেয়ারবাজারে সূচক ১১৮ পয়েন্ট বেড়েছে। দিনটিতে মোট ৯০ শতাংশ কোম্পানির দর বেড়েছে। বিনিয়োগকারীদের জিম্মি করে শেয়ারবাজারকে অস্থিতিশীল করতে বিএনপি-জায়ামাতের সিন্ডিকেটের অপচেষ্টা কিছুটা হলেও রুখে দেয়া সম্ভব হয়েছে।
গত কয়েক দিনে বড় দরপতনের পরিপ্রেক্ষিতে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল নিজেই উদ্যোগ নেন। রবিবারে অর্থ মন্ত্রণালয়ে শেয়ারবাজারে গতি ফেরাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশকে (আইসিবি) নির্দেশ দেন। মার্জিন ঋণের সুবিধা বাড়িয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) নতুন নির্দেশনা জারি করে। একই সঙ্গে ব্রোকারেজ হাউসে নগদ টাকা জমাদান এবং প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নগদ উত্তোলনের সুযোগও দেয় বিএসইসি। এসব গুচ্ছ প্রণোদনার কারণে টানা আট কার্যদিবসে যে পরিমাণ সূচকের পতন হয়েছে সোমবার তার এক পঞ্চমাংশ ফিরেছে শেয়ারবাজারে।
রবিবারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে শেয়ারবাজার টেনে তুলতে রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান আইসিবির মাধ্যমে ব্যাংকের বিনিয়োগকে শেয়ারবাজারে এই প্রতিষ্ঠানটির বিনিয়োগসীমা বা এক্সপোজার লিমিটের বাইরে রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য আইসিবিকে দেয়া দেড়শ’ কোটি টাকার যে তহবিলের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল, সেটির মেয়াদ বাড়িয়ে তহবিলের আকার দ্বিগুণ করার সিদ্ধান্তও গ্রহণ করা হয়েছে। এই বিনিয়োগ সোমবার থেকেই শুরু হয়েছে। মূলত আইসিবি, অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এবং বড় বিনিয়োগকারীদের শেয়ার কেনার চাপে সূচকের বড় উল্লম্ফন ঘটেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, সরকারী প্রণোদনার অংশ হিসেবে শেয়ারবাজার চাঙ্গা করতে ব্যাংকগুলোর বিশেষ তহবিলের আকার ৩০০ কোটি টাকা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে বিশেষ তহবিলের মেয়াদ বাড়ছে ৫ বছর। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে বিশেষ তহবিল গঠন এবং বিনিয়োগের নীতিমালা উপর্যুক্ত বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ জারি করা ডিওএস সার্কুলারের নং-১ মাধ্যমে তফসিলি ব্যাংকসমূহ কর্তৃক শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে বিশেষ তহবিল গঠন এবং উক্ত তহবিল হতে বিনিয়োগের বিষয়ে এ নির্দেশনা প্রদান করা হয়। নিদের্শনা অনুসারে, আগামী ২০২৫ সালের ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত যে কোন তফসিলি ব্যাংক রেপোর মাধ্যমে এই সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে। এ ছাড়া বিশেষ তহবিলের মেয়াদ আরও ৫ বছর বাড়িয়ে ২০৩০ সাল পর্যন্ত করা হয়েছে।
টাকার প্রবাহ বাড়াতে বিএসইসি মার্জিন ঋণের নতুন রেশিও ঘোষণা করে। নতুন হার অনুসারে কোন বিনিয়োগকারীর একশ’ টাকার বিনিয়োগ থাকলে তিনি আরও একশ’ টাকা ঋণ নিয়ে শেয়ার কিনতে পারবেন। সোমবারই এটি কার্যকর হয়েছে। আগে একশ’ টাকার বিনিয়োগ থাকলে ৮০ টাকা ঋণ পাওয়া যেত। শেয়ারবাজারে কোন কোম্পানির পিই রেশিও ৪০-এর নিচে থাকলে, সেই শেয়ার ঋণের টাকায় কেনা যেত।
শেয়ারবাজারে তারল্যপ্রবাহ বাড়াতে সোমবার কমিশনের সভায় যোগ্য বিনিয়োগকারীদের নিজস্ব পোর্টফলিওতে বিনিয়োগসীমা বাড়ানো হয়েছে। নতুন টাকার প্রবাহ বাড়াতে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কমিশন সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে পেনশন ফান্ড এবং স্বীকৃত প্রোভিডেন্ট ফ্ন্ড ও গ্রাচুইটি ব্যতীত অনান্য যোগ্য বিনিয়োগকারীদের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগসীমা এক কোটি থেকে বাড়িয়ে ৩ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। অনুমোদিত পেনশন ফান্ড এবং স্বীকৃত প্রভিডেন্ট ফান্ড ও গ্রাচুইটি ফান্ডের বিনিয়োগ ৫০ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ দশমিক ৫০ লাখ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, তাদের বিনিয়োগটি স্টক একচেঞ্জের কাছে দেখাতেও বলা হয়েছে।
শেয়ারবাজারে গতি ফেরানোর উদ্যোগ নেয়ার পরদিন সোমবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১১৮.৮৬ পয়েন্ট বা ১.৯৩ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ২৬১.৫৪ পয়েন্টে। ডিএসইর অপর সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ১৫.২৬ পয়েন্ট বা ১.১২ শতাংশ এবং ডিএসই-৩০ সূচক ৩২.৫৮ পয়েন্ট বা ১.৪৩ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে এক হাজার ৩৭৬.৯৯ পয়েন্টে এবং দুই হাজার ৩০৯.৭৫ পয়েন্টে। ডিএসইতে টাকার পরিমাণে লেনদেন হয়েছে ৬৫৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকার, যা আগের কার্যদিবস থেকে ২৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা কম। আগের কার্যদিসে লেনদেন হয়েছিল ৬৮২ কোটি ২১ লাখ টাকার।
ডিএসইতে ৩৭৬টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৪৩টির বা ৯১.২২ শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে। দর কমেছে ১৯টির বা ৫.০৫ শতাংশের এবং ১৪টির বা ৩.৭২ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত রয়েছে।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই এদিন ৩৩০.৫০ পয়েন্ট বা ১.৮২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৪০৮.২২ পয়েন্টে। এদিন সিএসইতে হাত বদল হওয়া ২৭৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ২০৮টির, কমেছে ৪৭টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৯টির দর। সিএসইতে ২৪ কোটি টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছায়েদুর রহমান বলেন, শেয়ারবাজার নিয়ে অর্থমন্ত্রীর বৈঠকের ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে শেয়ারবাজারে। নগদ টাকার প্রবাহ বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা এবং আইসিবিকে দেয়া ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের বিশেষ তহবিলের আকার বাড়ানোর কারণে সূচক বেড়েছে। তালিকাভুক্ত অনেক কোম্পানির শেয়ার লোভনীয় পর্যায়ে আসায় মার্জিন ঋণ নিয়ে শেয়ার কেনার আদেশ বেড়েছে। এসবের প্রভাব পড়েছে শেয়ারবাজারে।
বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সরকারের প্রণোদনায় সোমবারে সূচকের বড় ধরনের উত্থান ঘটেছে। শেয়ারবাজারে টাকার প্রবাহ বাড়ানোর চেষ্টায় ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এ ছাড়া মার্জিন ঋণের সীমা বাড়ানো এবং যোগ্য বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ বাড়ানোর নির্দেশও কাজে এসেছে।
The Daily Janakantha website developed by BIKIRAN.COM
Source: জনকন্ঠ