By: Daily Janakantha
মানবদেহের মহাকাব্য
সাময়িকী
12 May 2022
12 May 2022
Daily Janakantha
এখন থেকে ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ বছর আগে বাংলাদেশ বিমানের ডিসি-১০ এ্যারোপ্লেনের ফ্লাইট নিয়ে বহুবার আমি টোকিও গিয়েছি। ওখানে ফ্লাইট নিয়ে গেলে আমাদের একটানা সাত দিন থাকতে হতো। কারণ, টোকিওতে সপ্তাহে বাংলাদেশ বিমানের মাত্র একটি ফ্লাইট চলাচল করত। একটানা এক সঙ্গে সাত দিন থাকতে হতো বলে, তখন সারা জাপান ঘুরে বেরিয়েছি।
টোকিও থেকে ফ্লাইট নিয়ে ফিরে আসার সময় আমাদের ক্রুদের খাওয়ার জন্য যে ফল-ফলাদি দেয়া হতো সে সবই ছিল জেনেটিক্যালি মডিফাইড (জিএম)। ওই ফলগুলোর মধ্যে জাপানি আপেলের স্বাদ ও ঘ্রাণের কথা আজও আমি ভুলতে পারিনি। এর চেয়ে সুস্বাদু কোন ফলও আর আমি কখনও খাইনি। জাপানি এক-একটি আপেলের আকার এবং ওজন সাধারণ আপেলের তিন-চারটির সমান। সিঙ্গাপুরের সুপার মার্কেটগুলোতে দেখেছি, এক কেজি ওজনের সাধারণ আপেলের মূল্য যেখানে এক সিঙ্গাপুরী ডলার, সেখানে এক কেজির চেয়েও একটু কম ওজনের একটি জাপানি আপেলের দাম পাঁচ সিঙ্গাপুরী ডলার। সুস্বাদু বলে ফিলিপিনি আনারসের অনেক সুনাম আছে। কিন্তু জিএম প্রযুক্তিতে জাপানে উৎপাদিত আনারস আরও অনেক উন্নতমানের। জাপানের সুপার মার্কেটগুলোতে দেখেছি, প্রতিটি বেগুন এক কেজি অথবা তার চেয়েও বড়। সবসময় আমার মনে প্রশ্ন জাগে, জাপান কি তাদের জেনেটিক মেথড সম্পর্কিত বিষয় অন্য দেশের সঙ্গে শেয়ার করে না? যদি করে থাকে, তবে অন্যান্য দেশগুলো কেন জাপানি আপেল উৎপাদন করে না? আমার কাছে বিষয়টা অজানা এবং রহস্যজনকও বটে!
আমেরিকার ফুড এ্যান্ড ড্রাগ এ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিভাগ খুব রক্ষণশীল। ওই দেশের এফডিএ বিভাগের কর্তৃপক্ষ মনে করেন, দীর্ঘ মেয়াদে জেনেটিক্যালি মডিফাইড খাদ্যাদি গ্রহণ করলে মানব শরীরে নানা প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হতে পারে; প্রকৃতির বিরুদ্ধে গেলে সেটা ক্ষতিকরও হতে পারে-এমন ধারণা থেকেই তারা সাবধানতা গ্রহণ করেছিল। সিলেকটিভ পদ্ধতিতেই কৃষি ক্ষেত্রে, গবাদি পশুর উন্নতি সাধনে তারা প্রচেষ্টায়রত রইল। যখন তারা দেখল, জিএম মেথডে উৎপন্ন খাদ্যাদি বিশ-পঁচিশ বছর যাবত খেয়েও জাপানিদের শারীরিক কোন ক্ষতি হয়নি, তখন আমেরিকার এফডিএ কর্তৃপক্ষ জেনেটিক্যালি মডিফাইড উৎপন্ন খাদ্যাদির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়।
অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনার আগে কিছু কথা বলব, যার সঙ্গে ডিএনএর কোন সম্পর্ক নেই। কেবল নিরস তথ্য পরিবেশন করতে আমার ভাললাগে না। যে কাহিনীটা বলব, তা তুলে ধরছি-
এখন থেকে বহু বছর আগের কথা-আমি যেদিন ফ্লাইং প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে ঢাকা ফ্লাইং ক্লাবে প্রথম গেলাম, সেদিন ফ্লাইং ক্লাবের প্রধান প্রশিক্ষক মিয়া রশীদ আহমেদ আমাকে দেখে বললেন, তুমি ফ্লাইং শিখতে এলে কেন? তুমি তো সিনেমার নায়ক হতে পারতে!
মিয়া রশীদ আহমেদ ছিলেন পাঞ্জাবের লোক। বিয়ে করেছিলেন এক ব্রিটিশ মহিলাকে। পাইলটের প্রশিক্ষণ নিয়ে বিহারের পাটনা ফ্লাইং ক্লাবের প্রধান প্রশিক্ষক ছিলেন বহুদিন। ঢাকা ফ্লাইং ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৪৮ বা ’৪৯ সালে। তখন মিয়া রশীদ আহমেদকে অনুরোধ করে এনে ঢাকা ফ্লাইং ক্লাবের প্রধান প্রশিক্ষক পদে নিয়োগ দেয়া হয়।
মিয়া রশীদ আহমেদের দৃষ্টিতে আমি হয়তো সুদর্শন ছিলাম। তিনি অবশ্য এ কথাও বলেছিলেন, দৈহিক উচ্চতায় আমি কিছুটা খাটো। তিনি প্রশ্ন করলেন, তোমার উচ্চতা কত?
বললাম, পাঁচ ফুট পাঁচ ইঞ্চি।
রশীদ সাহেব বললেন, এটা তেমন কোন সমস্যা নয়। তুমি মিটফোর্ড রোডে যাও। ওখানে চাইনিজদের কয়েকটি জুতা তৈরি করার দোকান আছে। ওখান থেকে দুই জোড়া জুতা বানিয়ে নাও। ওদের বলবে, জুতার ভেতরের দিকটায় যেন দুই ইঞ্চি পুর সোল বা আস্তরণ লাগিয়ে দেয়, যেটা বাইর থেকে দেখা যাবে না। আর জুতার হিল হবে অন্তত দেড় ইঞ্চি উঁচু। তখন তোমার উচ্চতা পাঁচ ফুট পাঁচ ইঞ্চি + জুতার ভেতরের দুই ইঞ্চি + জুতার হিল দেড় ইঞ্চি-সব মিলিয়ে তোমার উচ্চতা হবে পাঁচ ফুট সাড়ে আট ইঞ্চি। বেশ একটা মানানসই উচ্চতা হবে।
তাঁর কথামতো আমি সিনেমার নায়কও হয়নি, চাইনিজদের জুতা তৈরি করার দোকানেও যাইনি।
মুম্বাইয়ের বিখ্যাত অভিনেতা শাহরুখ খানের উচ্চতা পাঁচ ফুট সাত ইঞ্চি। ক্যাটেরিনা কাইফ, দিপীকা পাড়ুকন-এঁদের উচ্চতা পাঁচ ফুট সাত-আট ইঞ্চি। তাঁদের বিপরীতে অভিনয় করার সময় শাহরুখ খান নিজের জুতার অভ্যন্তরে দুই থেকে আড়াই ইঞ্চি পুরু“সোল ব্যবহার করেন। মুম্বাই চিত্রজগতের স্বীকৃত সবচেয়ে প্রতিভাবান অভিনেতা আমির খানের উচ্চতা পাঁচ ফুট চার ইঞ্চি। তাঁকে তো জুতার অভ্যন্তরে পুরু সোল সব সময়ই ব্যবহার করতে হয়।
দুই
ট্রান্স জেনেটিক প্রযুক্তির মাধ্যমে বর্তমানের অর্থাৎ আমাদের উচ্চতা অথবা ত্বকের রঙ ফর্সা করা যাবে না। কিন্তু এখন থেকে ত্রিশ-চল্লিশ বছর পর যখন ট্রান্স জেনেটিক প্রযুক্তির মাধ্যমে দীর্ঘকায় এবং ফর্সা রংয়ের মানুষের ডিএনএ কোড খর্বাকৃতির কালো রঙের দেহে প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হবে তখন, পরবর্তী বংশধররা অনেকেই দীর্ঘকায় ফর্সা রংয়ের মানুষ হবে। একটি মলিকুলার ডিএনএ-তে তিন বিলিয়ন জেনেটিক কোড থাকে। মলিকিউল মানে অণু। এমন ক্ষুদ্রকায় মলিকিউলার ডিএনএ-তে এত বিশালসংখ্যক ডিএনএ কোড থাকতে পারে-এ কথা চিন্তা করলেও হতবাক হয়ে যেতে হয়। এখন থেকে এক লাখ বছর আগে বর্তমান মনুষ্য আকৃতির প্রাণি পূর্ব আফ্রিকা থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন দেশের আবহাওয়া এবং পরিবেশের কারণে ওইসব মানুষের ডিএনএ কোডে পরিবর্তন আসে। তাই শীতের দেশের মানুষের শারীরিক রঙ হয়েছে ফর্সা, চুল হয়েছে সোনালি অথবা বাদামি, চোখের মণি কারো কারও হয়েছে নীল। চোখ-মুখ অর্থাৎ মুখাবয়বেও এসেছে ভিন্নতা।
ডিএনএ কিন্তু অনেক কিছু মনে রাখতে পারে। একখানা বইয়ে পড়েছিলাম, আফ্রিকার লোকরা ক্রীড়া প্রতিযোগিতার দৌড়ে খুব ভাল করে। কারণ, তাদের পূর্বপুরুষদের বন্যপ্রাণির হাত থেকে নিজেদের বাঁচানোর জন্য খুব দৌড়াতে হতো। সেটার প্রভাব আফ্রিকাবাসীর ডিএনএ ধরে রেখেছে।
বেশ দীর্ঘকায় কিছুসংখ্যক মানুষ আমাদের প্রয়োজন আছে-বাস্কেটবল, ভলিবল খেলোয়াড় হওয়ার জন্য; ক্রিকেট খেলার ব্যাপারে ফাস্ট বোলার তৈরি করার জন্য; বাড়ির দাড়োয়ান হওয়ার জন্য। ক্রিকেট এবং ফুটবল খেলার ব্যাপারে খর্বাকৃতির মানুষরাও অনেক ভাল করে। যেমন শচীন টেন্ডুলকার, সুনীল গাভাস্কার। ফুটবলে লিওনেল মেসি। লিওনেল মেসি অবিশ্বাস্য রকমের ভাল খেলেছে, কিছুটা খর্বাকৃতির এবং তেমন বড়-সরো মাপের নয় বলে। তিনি বল পায়ে পেয়ে সামনের দিকে ঠেলে দিয়ে প্রতিপক্ষের তিন-চারজনের বাধার ফাঁক-ফোকর গলিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে দেয়া বলকে আয়ত্তে নিয়ে নিখুঁত শটে গোল করেন।
এক সময় দীর্ঘকায় শক্তিমান মানুষরা তরবারি হাতে যুদ্ধ করে দেশের পর দেশ জয় করে রাজ্য বিস্তার করেছিল। কিন্তু ভিয়েতনাম যুদ্ধে দেখলাম, ছোট খাট ভিয়েতনামীদের কাছে বিশাল আকৃতির আমেরিকার যোদ্ধারা সহজেই ধরাশায়ী হচ্ছে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময়ও দেখেছি, আমাদের মতো ছোটখাটো বাঙালীদের কাছে বিশালাকৃতির পাকিস্তানী সেনারা সহজেই ধরাশায়ী হয়েছে। এখন তো আর শারীরিক শক্তি বিবেচ্য বিষয় নয়, অস্ত্র এবং নির্ভুলভাবে সেই অস্ত্রের সাহায্যে নির্ধারিত বস্তুকে আঘাত করতে পারাই বড় শক্তি।
মহাকাশে যখন এ্যারোনট (সোভিয়েত ইউনিয়নের মহাকাশচারী) এবং এ্যাস্ট্রনটদের (আমেরিকার মহাকাশচারী) বিষয়ে কিছুটা খর্বাকৃতির পাইলটদেরই অগ্রাধিকার দেয়া হতো। অবশ্য এ্যারনট এবং এ্যাস্ট্রনটদের সবাইকে ফাইটার প্লেনের ইন্সট্রাক্টর পাইলট হতে হতো। অপেক্ষাকৃত কম উচ্চতার পাইলটদের এ্যাজাইলিটি হয় বেশি। তাছাড়া ওই সময়কালে কৃত্রিম উপগ্রহে পাঠানো এ্যাস্ট্রনটদের ওজনের বিষয়টিও বিবেচ্য ছিল।
একটু পেছনে দৃষ্টি দিলেই বোঝা যায়Ñমহাকাশে ভ্রমণকারী প্রথম মানুষ ইউরি গ্যাগারিনের উচ্চতা ছিল পাঁচ ফুট পাঁচ ইঞ্চি। চাঁদে পদার্পণকারী প্রথম মানব হলেন নীল আর্মস্ট্রং। তাঁর উচ্চতা ছিল পাঁচ ফুট ছয় ইঞ্চি। পাঁচ ফুট ছয় ইঞ্চি আমেরিকা-রাশিয়ার লোকদের পক্ষে অপেক্ষাকৃত স্বল্প উচ্চতার মানুষই বলতে হবে!
বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির যুগে এসে আমাদের প্রয়োজন বেশি বুদ্ধিমান এবং মেধাসম্পন্ন মানুষ। সে মানুষ দীর্ঘকায় হোক আর অপেক্ষাকৃত কম দীর্ঘকায় হোক, তাতে কিছু যায় আসেন না। আমরা সুগঠিত-সুদর্শন মানুষও চাই। সেটাও সম্ভব হবে জেনেটিক সায়েন্সের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে।
আমি অল্পদিন আগে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে ‘কৃষি তথ্য সার্ভিস’ নামে প্রকাশিত একখানা ডাইরি পেয়েছি। ওই ডাইরিখানা প্রকাশিত হয়েছে এ বছরই অর্থাৎ ২০২২ সালে।
ওই ডাইরিতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের বিশাল কর্মযজ্ঞের বিষয় জানতে পেরে অবাক হয়েছি। এত সব কর্মযজ্ঞের কথা এবং সব তথ্য আমার এ ছোট লেখায় স্থান সঙ্কুলান করা যাবে না। তাই পাঠকদের অনুরোধ করব, যারা এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান, তাঁদের উচিত হবে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে একখানা ডাইরি সংগ্রহ করতে। কিভাবে জেনেটিক বিজ্ঞানের মাধ্যমে বিভিন্ন জাতের ধান, গম, ভুট্টা উৎপাদন বৃদ্ধি করা যায়, পোকা-মাকড় থেকে ধান, গমসহ অন্যান্য কৃষিজাত গাছ-পালা রক্ষা করা যায়-সব তথ্যই ওই ডাইরি থেকে জানা যাবে। গবেষণার মাধ্যমে আমাদের দেশে ত্রিশ থেকে চল্লিশ রকমের ধান উৎপাদন করা হচ্ছে।
হেক্টরপ্রতি ধান উৎপাদনে বাংলাদেশ বেশ ভাল করছে। ইউটিউব থেকে সংগ্রহ করা তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশ প্রতি হেক্টর জমিতে প্রায় পাঁচ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন করে। ভারত প্রতি হেক্টরে উৎপাদন করে সাড়ে তিন মেট্রিক টন। জাপান করে পৌনে সাত টন। চীন উৎপাদন করে সাত টন। কৃষি মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত ডাইরি অনুযায়ী কৃষি মন্ত্রণালয় সবচেয়ে বেশি সফল হয়েছে ভুট্টা উৎপাদনে।
কৃষি মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত ডাইরি থেকে আমি খুব উপকৃতি হয়েছি। কারণ, আমি নিরামিশ ভোজি। কৃষি অধিদফতর থেকে প্রকাশিত ডাইরি, সব শাকসবজির গুণাবলি তুলে ধরেছে। মাছ-মাংস, দুগ্ধজাত দ্রব্য সম্পর্কিত তথ্যও উল্লেখ করেছে। যেমন চালকুমড়া, লাউ, পটল, চিচিঙ্গা ইত্যাদির কোন সবজিতে কতটা খাদ্যআঁশ, ক্যালসিয়াম, জিংক, পটাসিয়াম, ভিটামিন আছে? আমি ওই ডাইরি দেখে একটা তালিকা তৈরি করে খাদ্য গ্রহণ করি। মনে হয় তাতে উপকারও পাচ্ছি।
আমি লেখাটা তেমন বড় করত চাই না। এ লেখায় আমি দীর্ঘদেহী এবং তুলনামূলকভাবে কম দীর্ঘদেহী মানুষের কথা অনেক লিখেছি। সব কিছু বিবেচনায় রেখে আমি বলতে চাই, মধ্যমাকৃতির মানুষই সুন্দর। তবে কিছুটা খর্বাকৃতির হলেও তেমন অসুবিধা নেই। খর্বাকৃতির মানুষের জন্য জুতার অভ্যন্তরে দুই-আড়াই ইঞ্চি পুরু শুকতলার ব্যবস্থা করা তো যেতেই পারে।
আমি আমেরিকায় গিয়ে কয়েকবার জুতা কিনেছি। ওসব দোকানে জুতার অভ্যন্তরে ব্যবহার করার জন্য নরম এবং স্পঞ্জি আলাদা শুকতলা কিনতে পাওয়া যায়। দাম পরিশোধ করে দোকানদারদের বললেই তারা ওই শুকতলা কেটে আপনার জুতার অভ্যন্তরে মাপ মতো লাগিয়ে দেবে। ওই শুকতলাগুলো স্পঞ্জি হওয়ায় আপনি পরিধান করলে আরামও বোধ করবেন আবার আপনার সত্যিকারের উচ্চতার চেয়েও নিজেকে একটু বেশি উঁচুই মনে হবে।
অনেক কিছু লিখতে গিয়ে ডিএনএ এবং জিনোম সিকোয়েন্স নিয়ে বেশি কিছু লেখা আর এবার হলো না।
আমার কাছে অদম রুদারফোর্ডের বিখ্যাত বই ‘অ ইৎরবভ ঐরংঃড়ৎু ড়ভ ঊাবৎুড়হব ডযড় ঊাবৎ খরাবফ’ এবং জেনোলোজিস্ট সিদ্ধার্থ মুখার্জির পুলিৎজার পুরস্কার পাওয়া ‘ঊসঢ়ৎবৎড়ৎ ড়ভ অষষ গধষধফরবং’ বই দুইখানা আছে। ওই বই দুইখানায় মানব দেহকে ডিএনএ কিভাবে প্রভাবিত করে এ বিষয়েই লেখা হয়েছে।
এ্যালানগ্রীন, চেনওয়ান এঁনাদের লেখা কৃষিবিজ্ঞান বিষয়ক বইও আমার কাছে আছে। কিন্তু কৃষি বিজ্ঞানের ওপর লেখা বিষয়গুলোর সব ‘টার্মিনোলজি’র পরিভাষা বাংলায় নেই। তাই কৃষি বিজ্ঞান সম্পর্কে সহজবোধ্য করে কিছু আমি লিখতে পারছি না। তবে কখনও কিছু লিখলে ওই ‘টার্মিনোজি’ রেখেই লিখব।
আমি পেশায় ছিলাম একজন বৈমানিক। মুক্তিযুদ্ধের সময় ছিলাম একজন বোমারুপ্লেনের পাইলট। তাই আমার সকল আনন্দ এভিয়েশন সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে লেখা। ডিএনএ এবং জিনোম সিকোয়েন্স বিজ্ঞান হলো আমার কাছে একটি সৌখিন বিষয়।
তাই সৌখিন বিষয় বাদ দিয়ে আবার এ্যারোপ্লেন এবং এভিয়েশন বিষয় নিয়েই আগামীতে লিখতে চাই। এ্যারোপ্লেন নিয়ে লেখা আমার তিনখানা বই বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। মহাকাশ বিজ্ঞান বিষয়ে আর একখানা বই ছাপা হওয়ার পথে। এরপরেও ভবিষ্যতের এ্যারোপ্লেন নিয়ে আর একখানা বই আমি লিখতে শুরু“করেছি। আমি যদি দীর্ঘায়ু লাভ করি তবে ডিএনএ এবং জিনোম সিকোয়েন্স নিয়ে লেখার ইচ্ছা রাখি। তখন বিষয়টার এতটা উন্নতি সাধিত হবে যে, এ বিষয় নিয়ে লেখাটা হবে আমার জন্য আনন্দদায়ক।
এই যে আমার লেখালেখি করার বদাভ্যাস, এটাও কিন্তু জেনেটিক সূত্রে আমার ওপর বর্তিয়েছে। আমার চাচা কাজী আশরাফ মাহমুদ ছিলেন একজন উঁচুমাপের কবি। একজন স্বনামধন্য বৈজ্ঞানিক হওয়া সত্যেও তিনি অনেক সুন্দর সুন্দর কবিতা লিখেছেন। তিনি কবিতা লিখেছিলেন মৈথালী ভাষায়। তাই বাংলাদেশে তিনি তেমন পরিচিত না হলেও ভারতবর্ষে তার কবি হিসেবে যথেষ্ট পরিচয় ছিল। তার লেখা একটা কবিতার চার লাইনের উদ্ধৃতি দিচ্ছি-
‘স্বর্গ-সুন্দরী শশী ষোড়শী-
সুনকর তব গুণ-গৌরব
আওয়েগী অনুপম দিঘলাতে
আপনা যৌবন-বৈভব।’
The Daily Janakantha website developed by BIKIRAN.COM
Source: জনকন্ঠ