By: Daily Janakantha
এ কি সোনার আলোয় ভরিয়ে দিলে
শেষের পাতা
09 May 2022
09 May 2022
Daily Janakantha
মোরসালিন মিজান ॥ ফুলের কি দারুণ মৌসুম চলছে এখন! গ্রীষ্মের এই গরমাগরমের মধ্যে নানা জাতের ফুল। তাকাতেই মন প্রশান্তিতে ভরে উঠছে। বিশেষ করে রাজধানী শহরের রাস্তার ধারে, পার্কে, উদ্যানে যেন ফুলের মেলা। বড় বড় গাছে খুব দৃশ্যমান অবস্থায় ফুলগুলো ফুটে আছে। একটির নাম সোনালু। গ্রীষ্মের অন্যতম প্রিয় ফুল। এ ফুলের কথাই হোক আজ।
গত কয়েক বছরে ঢাকার ফুলপ্রেমীরা তো বটেই, সাধারণ পথিকও চিনে নিয়েছেন সোনালুকে। আপন করে নিয়েছেন। ‘এ কি সোনার আলোয় জীবন ভরিয়ে দিলে।’ ঢাকাবাসীর প্রতিদিনের জীবন সত্যি ভরিয়ে দিচ্ছে সোনালি রঙের ঝুলতে থাকা ফুল। সাধারণত বৈশাখের শুরুতে ফোটে। ফোটে মানে এ সময় ফোটা শুরু হয়। আর বর্তমানে তো পরিপূর্ণ রূপে ধরা দিয়েছে। সারা দেশেই কম বেশি দেখা যাচ্ছে। রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়ক ধরে যাতায়াতের সময় ডানে বামে তাকালে সোনালু চোখে পড়ে। কিছু দূর পরপরই কাঁচা হলুদ রঙের ফোয়ারা। সচিবালয় থেকে শুরু করে অন্য অনেক সরকারী-বেসরকারী অফিসের আঙিনায় বা সীমানা প্রাচীরসংলগ্ন ভূমিতে এ গাছ দাঁড়িয়ে আছে। উঁচু গাছ। ছড়িয়ে থাকা ডালপালা। তবে গাছ বা ডালপালা দেখা যাচ্ছে না। ফুল আর ফুল! চোখ সেখানে আটকাবেই। হাতিরঝিলের ঝিরিঝিরি হাওয়ায়, রমনা পার্কের সবুজে, চন্দ্রিমা উদ্যানের মায়ায় নিজেকে কি সুন্দর জড়িয়ে নিয়েছে সোনালু!
সোনালু ফুলের গাছ আম, জাম গাছের মতোই উঁচু। ডালপালা চারপাশে ছড়ানো থাকে। বিশেষভাবে চেনা যায় ফুল ফোটার মৌসুমে। কাছ থেকে দেখলে পাঁপড়ির রং কাঁচা হলুদের মতো দেখায়। ঘন ফুলে ভর্তি গাছ দেখে মনে হয় কেউ বুঝি হলুদ রঙের কৌটো উপুড় করে দিয়েছে! গ্রীষ্মের প্রখর রোদ ফুলের গায়ে পড়লে রংটি সোনালি মনে হয়। এর ইংরেজী নাম গোল্ডেন শাওয়ার। গাছের ওপর থেকে নিচের দিকে নেমে আসা সোনালু ফুলের মঞ্জরিকে একসঙ্গে শাওয়ারের জলধারার মতোই দেখায়। এ কারণে গোল্ডেন শাওয়ার নাম। অবশ্য বৈজ্ঞানিক নামের বেলায় এর ফল প্রাধান্য পেয়েছে। সে অনুযায়ী নামটিÑ কেসায়্যা ফিস্টুলা। এটি গ্রীক ভাষা থেকে নেয়া। ফিস্টুলা শব্দের অর্থ বাঁশি। বাঁশির মতো লম্বা ফলের জন্য এমন নামকরণ।
উদ্ভিদবিদ দ্বিজেন শর্মার বর্ণনা মতে, সোনালু গাছ ২০ থেকে ৩০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। বাকল পুরো এবং মসৃণ। ফাল্গুনে ব্যাপকহারে পাতা ঝরে। চৈত্রে পাতাহীন শুকনো কাঠির মতো হয়ে যায় গাছ। প্রাণহীন দেখায়। বৈশাখে ফুল ফোটে। তখন থেকে আমূল বদলে যেতে থাকে সব। সোনালু ফুলের পাঁচটি পাঁপড়ি। দশটি পুংকেশর। ভেতরে সবুজ রঙের তিনটি গর্ভকেশর দৃশ্যমান। এগুলো অর্ধচন্দ্র আকৃতির।
যতদূর তথ্য, সোনালু বাংলাদেশে এসেছে পূর্ব ভারত থেকে। একে বানরলাঠিও বলা হয়। নিঃসন্দেহে কুৎসিত নাম। তবে এর একটি কারণও আছে। সোনালুর ফল ও গাছের পাতা বানরের প্রিয় খাবার। এ কারণেই ‘বানরলাঠি’ বলা। ফলের প্রসঙ্গ যেহেতু উঠলই, বলি, সোনালুর ফল এক থেকে দেড় ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। ব্যাস দেড় থেকে দুই ইঞ্চি। ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ দেখতে হয়। পাকলে কালচে লাল।
সোনালুর কিছু ঔষধিগুণও বিদ্যমান। ছাল, পাতা ও ফলের মজ্জা বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। ক্যান্সার ও ভাইরাস প্রতিরোধে কাজে আসে। এ ছাড়া ডিপথেরিয়া গ-মালা, কুষ্ঠরোগের ক্ষত চিকিৎসায় কার্যকর। ফলের মজ্জা হজমের সমস্যায় উপকারী।
অবশ্য ফুলপ্রেমীদের মুগ্ধতা কেবলই ফুলে। সোনালু মুগ্ধ হওয়ার মতো একটি ফুল। সবে তো ফুটল, থাকবে বেশ কিছু দিন। গ্রীষ্মের পরও কম বেশি দেখা যাবে। আসা-যাওয়ার পথে এক ঝলক, হ্যাঁ, আপনি দেখেছেন। দেখার কথা। তবে স্থির চোখে কিছু সময় তাকালে, গ্রীষ্মের মৃদু হাওয়া নামমাত্র বাতাসে কানের দুলের মতো দুলতে থাকা ফুল আরও বেশি মুগ্ধ করবে আপনাকে। দেখবেন নাকি পরীক্ষা করে?
The Daily Janakantha website developed by BIKIRAN.COM
Source: জনকন্ঠ