By: Daily Janakantha
ঈদযাত্রায় গৃহিণী অশেষ ব্যস্ততা
অপরাজিতা
19 Apr 2022
19 Apr 2022
Daily Janakantha
মাহে রমজান ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যেই তার পবিত্র সময় পার করছে। সেখানে গৃহিণীদের ব্যস্ততার যেন শেষ নেই। রমজানের দিনগুলো অতিক্রম করতে ঘরের কর্ত্রীর মহা ব্যস্ততার যেন অন্ত নেই। আবার এরই মধ্যে শুরু হয়ে যায় ঈদের কেনাকাটাও। সেটাও পারিবারিক আবহের অন্য রকম আনন্দযজ্ঞ। পুরোটাই সামলাতে হয় ঘরের গৃহিণীকে। নিয়ম করে প্রয়োজন মতো সবার জন্য ঈদ উপহার আয়োজন করাও এক বিরাট কার্যক্রম। তার ওপর মধ্যবিত্ত ঘরের কর্ত্রীদের বাজেট মাথায় রেখেই সব দিক রক্ষা করতে হয়। রমজান মাস মানে শুধু ইবাদত বন্দেগি নয় বরং উৎসব আয়োজনেরও ভিন্নমাত্রার কর্মযজ্ঞ। ইফতার সেহরি সব মিলিয়ে প্রতিদিনই যেন আহারের বহুমাত্রিক সম্ভার। তার ওপর ঈদ উৎসবের প্রস্তুতিও চলে যেন সমান তালে। সমস্ত আয়োজন পরিপূর্ণ করতে কর্ত্রীকে এক প্রকার হিমশিমই খেতে হয়। শ্বাস ফেলার সুযোগও যেন থাকে না। রমজানের শেষ সময় জানান দেয়Ñ ঈদ সমাগত। এর জন্য আরও অনেক প্রস্তুতি জরুরী হয়ে যায়। আনন্দ আর উৎসাহে ভরপুর হয়ে নাড়ির টানে দেশের বাড়িতে যাওয়া। তাও যেন এক অপার সুখ আর উপভোগের ভিন্নমাত্রার অনুভব। সেখানে শুধু সুখের স্রোতে ভাসা নয় তার চেয়েও বেশি ঈদযাত্রার বিভিন্ন দুর্ভোগকে মোকাবেলা করাও। ঈদের সময়ের এই আনন্দযাত্রায় কত যে ভোগান্তি পোহাতে হয় তাও এক পরিস্থিতির অন্যতম দাবি। বাড়ির কর্তাকেও অনেক কিছু সামলাতে হয়Ñ তবে গৃহকর্ত্রীর ব্যস্ততার যেন কোন শেষই থাকে না। কয়েকদিনের জন্য পারিবারিক আঙিনা ছেড়ে অন্যত্র গমন তার ধকলও কম কিছু নয়। কাপড়-চোপড় গোছানো থেকে আরম্ভ করে প্রাসঙ্গিক জিনিসপত্র সঙ্গে নেওয়া সব দিকেই তীক্ষè নজরদারি করতে হয় গৃহিণীকেই। আবার নিজের সংসারের আঙ্গিনাকেও সামাল দিয়ে তবেই না কোন গৃহকর্ত্রীর অন্যত্র গমন। সেটা শ্বশুরবাড়ি কিংবা বাপের বাড়ি যেখানেই হোক না কেন। আবার এক জেলা থেকে অন্য শহরে যাত্রা সেটাও কম দুর্ভোগের নয়। তার ওপর যানজটের মহাঝক্কি তো থাকেই। যে কোন বিভাগীয় শহর থেকে ঈদযাত্রায় শামিল হতে গেলে কত বিপত্তি যে পোহাতে হয় তাও যেন সম্মুখ সমরে যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়া সংগ্রামই বটে। এক ঘণ্টার পথ যেখানে পাড়ি দিতে ২/৩ ঘণ্টারও বেশি সময় লেগে যায় সেখানে দীর্ঘ যাত্রাপথ কতখানি দুর্বিষহ তা ভুক্তভোগী মাত্রই জানেন। একে তো যন্ত্রযানের লম্বা সারি। সেখানে যদি বিষ ফোঁড়ার মতো ফেরিতে নদী পারাপার থাকলে তাহলে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা আর কি। আর নদীবিধৌত বাংলাদেশ তার প্রাকৃতিক সম্ভারে জনজীবনকে যেমন স্বস্তি দেয়। পাশাপাশি বিপরীত প্রতিক্রিয়াগুলোও সামাল দিতে গিয়ে কত দাম গুনতে হয় তাও এক বড় ধরনের বিপত্তি। আবার ফেরিঘাটের অসহনীয় যন্ত্রযানের ভিড়ে অনেকেই ঈদের আগে বাড়িও পৌঁছানো দায় হয়ে যায়। ইদানীং আবার নৌপথে দুর্ঘটনা কবলিত হওয়ার চিত্রও উড়িয়ে দেয়া যায় না। সব মিলিয়ে ঈদযাত্রায় যে সীমাহীন দুরবস্থা তাকে সামলানো কত যে কষ্টসাধ্য পরিস্থিতি মোকাবেলা না করলে বুঝাও সম্ভব নয়। রাস্তার হরেক রকম দুর্ভোগকে সামলানোর পর যখন সেই বহুকাক্সিক্ষত গ্রামের বাড়ির আঙিনায় পা পড়ে মুহূর্তে যেন সমস্ত মুশকিল আসান হয়ে যায়। আসলে শিকড়ের টান গভীর মর্ম থেকে সাড়া জাগানো এক অভাবনীয় আত্মিক বোধ। যা আবহমান সমৃদ্ধ বাংলার অকৃত্রিম সম্ভার। সেই চিরচেনা ফেলে আসা গ্রামীণ নয়নাভিরাম শোভাদর্শনই নয় বরং অতীতের মধুময় স্মৃতিও যেন আনন্দে আপ্লুত হওয়ারই অনন্যবোধ। যৌথ পরিবারের সঙ্গে সম্মিলনের পর্বটিতে কর্তাব্যক্তিটি তেমন অসুবিধায় পড়েন না। কিন্তু গৃহিণী অন্য এক পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে গুছিয়ে নেওয়া সেটাও কম ঝক্কি ঝামেলা নয়। নতুন করে নিজেদের শোবার ব্যবস্থা করা কিংবা রান্নাঘরে শাশুড়ি কিংবা জাকে সাহায্য সহযোগিতা করা অন্যমাত্রার এক অস্বস্তি। তবে বাপের বাড়ি হলে কথাই নেই। সেখানে স্নেহময়ী জননীই সব কিছু সামলিয়ে নেন। শুধু তাই নয়, বহুদিন পর কন্যাকে কাছে পেয়ে পরম এক স্বস্তিবোধও হয় অন্তর থেকেই। ঈদের দিন সকালে রান্নার হরেক রকম আয়োজনে শাশুড়ি মা কিংবা জায়ের পাশে ঘোরাফেরা করা ছাড়াও তাদের সাহায্য করতে এগিয়ে যান শহর থেকে আসা এই পরিবারেরই আর এক বধূ। সেখানে সব সময় বিপত্তি ঘটে এমনটাও নয়। বরং অতি স্বাভাবিকভাবে পরম আনন্দে, স্বাচ্ছন্দ্যে মিলে মিশে ঈদ উৎসবের অংশীদার হওয়া এক প্রকার পূর্ণতার আমেজ। তবে এমন সব বাঙালী উৎসবের নারীদের ভূমিকা থাকে বেশ আকর্ষণীয়। শুধু হেসেলে কেন ঘর সজ্জায়ও বঙ্গ ললনার তুলনা মেলা ভার। আবহমান বাংলার ঐতিহ্যিক সমস্ত কর্মদ্যোতনায় বাঙালী নারীদের যে অভাবনীয় যোগসাজশ সেটাও আমাদের চিরায়ত মাতৃভূমির অনন্য ঐশ্বর্য।
এক সময়ে একান্নবর্তী পরিবার আজ আধুনিকতার নির্মাণে একক পরিবারের রূপ নেওয়াও যেন সময়ের অনিবার্য চাহিদা। সেটা সম্ভব হয়েছে সংসারের কর্ত্রীর একান্ত দায়বদ্ধতা এবং সচেতন মানবিকতায়। কারণ যৌথ পরিবারের অনমনীয় ঐতিহ্যিক বোধগুলো এখনও গৃহিণীরাই লালন ধারণ করেন। তারাই সব সময় নজর রাখেন কিভাবে সম্মিলিত মিলন দ্যোতনায় সেই পুরাকালের পারিবারিক সমৃদ্ধ বোধগুলো যেন নতুন, উদীয়মান প্রজন্মের মধ্যে গ্রথিত হতে কোন প্রতিকূলতা না আসতে পারে। আমাদের চিরায়ত মিলন বোধগুলো যেন প্রজন্ম থেকে প্রজমান্তরে ধারাবাহিক বহমান থাকে।
The Daily Janakantha website developed by BIKIRAN.COM
Source: জনকন্ঠ