দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈঠক করেছে জাতীয় পার্টি। শুক্রবার দিবাগত রাতে সংসদ ভবনে এ বৈঠক করেন জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। বৈঠকে আওয়ামী লীগের পক্ষে ছিলেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম। আর জাতীয় পার্টির পক্ষে ছিলেন পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু।আওয়ামী লীগের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনার বিষয় জোট করা নয় বরং কৌশল নিয়ে কথা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু।শনিবার রাজধানীর বনানীতে দলীয় চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ৭ জানুয়ারির আগ পর্যন্ত ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে ভোটের সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। কাল হয়েছে, আজকেও হবে। এর পরেও হবে। ১৮ তারিখ প্রতীক বরাদ্দ, তার পরেও হবে। আমরা দৃষ্টান্ত রাখতে চাই, ভোটে আমরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবো, কিন্তু ভোটকে সুষ্ঠু করার জন্য দুই দলই প্রয়োজনে আমরা মাঝেমধ্যে বসবো। আমার কৌশল সবগুলো কি প্রকাশ করবো? এটা কি কেউ করে?’প্রেমের সম্পর্কের উদাহরণ টেনে চুন্নু বলেন, ‘লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেমের চিঠি লিখবো- এটা কি বাবা-মাকে প্রথমে বলা যায়? আত্মীয়- স্বজনকে বলা যায়? বলা যায় না। পরে যখন হয়ে যায়, তখন বলা যায়।’প্রেমের সম্পর্ক কতদূর গেছে জানতে চাইলে জাপা মহাসচিব বলেন, ‘প্রেম এমন সম্পর্ক; প্রেম হয়, বিরহ হয়। আবার গভীর হয়, আবার বিরহ হয়। প্রেমের তো শেষ পরিণতি বিয়ে।’ তবে প্রেমে সবাই নায়ক হতে চায় বলে মন্তব্য করেন চুন্নু।কোনো জোট-মহাজোটের সুযোগ নেই, এসবে আস্থা ও বিশ্বাস নেই বলেও মন্তব্য করে জাতীয় পার্টির মহাসচিব চুন্নু।তিনি বলেন, সব আসনেই নির্বাচন করবো। নির্বাচন করতে এসেছি, ভোট থেকে চলে যাওয়ার জন্য আসিনি। ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে ফাইট করবো, একটা সিটও প্রত্যাহার করবো না। কোনো প্রত্যাহারের সুযোগ নেই, সব সিটেই নির্বাচন করবো।আওয়ামী লীগ-জাপার অঙ্ক মেলাতে চূড়ান্ত বৈঠক রাতেআওয়ামী লীগ-জাপার অঙ্ক মেলাতে চূড়ান্ত বৈঠক রাতেগত তিনটি নির্বাচনের মধ্যে দুটিতে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি জোট করলেও বিএনপির বর্জনে ২০১৪ সালে জোট না করে আসন সমঝোতা করে। গত কয়েখদিন ধরে জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগ তিনটি বৈঠকে বসেছে, সেসব বৈঠকের আলোচনায় আসন সমঝোতা নিয়ে কী কথা হয়েছে তা দুই পক্ষের কেউই প্রকাশ করেননি।শুক্রবার রাতের বৈঠকের পর বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, বর্তমানে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য আছেন, এমন ২৩টি আসনে নৌকা প্রতীক সরিয়ে নিতে রাজি হয়েছে ক্ষমতাসীনরা। তবে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি চেয়েছে গতবারের ছাড় দেওয়া ২৬ আসন।গণমাধ্যমকর্মীরা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে একটি প্রশ্নই বারবার করেন- জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের কাছে কয়টা আসনে ছাড় চেয়েছে। কিন্তু একবারও সরাসরি জবাব দেননি চুন্নু।আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনা প্রসঙ্গে জাপা মহাসচিব বলেন, একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে বৈঠক করিনি। আগেও বলেছি, এখনো বলছি। নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি নিয়ে সময়ে সময়ে কথা বলেছি আওয়ামী লীগের সঙ্গে। আপনারা যেটা ইঙ্গিত দিলেন, সেটাও অনেক সময় হয়। সংসদীয় রাজনীতিতে অনেক সময় দেখা যায় স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার পদে যারা থাকেন তাদের আসনে নির্বাচন করেন না। ব্রিটিশ সংসদে এই ধরনের একটা নজির আছে। ভারতীয় সংসদসহ অনেক সংসদে দেখা যায় অনেক বিজ্ঞ বিজ্ঞ লোক আছেন। সেখানে দেখা যায় ভালো লোক যারা, ভালো সংসদ সদস্য- তাদেরকে অনেক সময় ছাড় দেওয়া হয়।তিনি বলেন, চরম বিরোধীদল থাকলেও এক দলের সঙ্গে আরেক দলের ছাড়ের প্রশ্ন আছে। ঠিক এরকম একটা দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও আমরাও ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে ভোটের সার্বিক বিষয়, কোন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে পারলে ভালো হয়, সেই সব সুযোগ আছে কি না- তা নিয়ে আলোচনা যে হয়নি তা নয়, হয়েছে। কোনো বিষয় নির্দিষ্ট করে আলোচনা হয়নি। আসনের বিষয়টা খুব বেশি মুখ্য না। সব আলাপ তো বলা যাবে না, আরও আলাপ হবে।চুন্নু বলেন, এটা তো ঠিক, সব দল তার নিজস্ব প্রয়োজনে যে কোনো টেকনিকে একজন আরেকজনের সঙ্গে কথা বললে সবাই নিজের সুবিধাটা পেতে চায়। সেটা তো সবার বেলায় ঠিক।
Source: সময়ের কন্ঠস্বর