বাংলাদেশের কাছে অস্ত্র বিক্রি বাড়াতে চায় তুরস্ক

সন্ত্রাস দমন, নিরাপত্তা এবং মাদক পাচার রোধে বাংলাদেশ এবং তুরস্ক একসাথে কাজ করতে রাজি হয়েছে।

শনিবার রাতে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং তুর্কী সরকার এ নিয়ে একটি সমঝোতা স্মারকে সই করেছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেছেন, এই সমঝোতা চুক্তির অধীনে মূলত বাংলাদেশের পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবি, আনসার, কোস্টগার্ডসহ বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেবে তুরস্ক।

সেই সঙ্গে সন্ত্রাস দমন এবং সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে দুই দেশ পরস্পরের সঙ্গে নিরাপত্তা তথ্য বিনিময় করবে।

কর্মকর্তারা বলেছেন, এই সমঝোতা চুক্তি আগেই হবার কথা ছিল, কিন্তু মহামারির কারণে সেটা আগে হতে পারেনি।

এখন এমওইউ স্বাক্ষরের পর দুই দেশে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ তৈরি হবে। তখন কী ধরণের ট্রেনিং বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর প্রয়োজন সেটা ঠিক করবে ওই কমিটি, এরপর টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশনস কী হবে–সেসব ঠিক করা হবে। তারপরই এ নিয়ে বিস্তারিত কাজ শুরু হবে।

এছাড়া মাদক চোরাচালান ঠেকানোর ক্ষেত্রে কিভাবে প্রশিক্ষণ এবং তথ্য বিনিময় করা হবে সেটিও ঠিক করা হবে তখন।

তুরস্কের ফার্স্টলেডি

ছবির উৎস, Getty Images

ছবির ক্যাপশান, রোহিঙ্গা সংকট শুরুর পর বাংলাদেশে এসেছিলেন তুরস্কের ফার্স্টলেডি

কী ধরনের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে?

কর্মকর্তারা বলেছেন, মূলত প্রশিক্ষণটি হবে সামরিক।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন বাহিনী যেমন সেনা, নৌ বা বিমান বাহিনীর সদস্যদের প্রশিক্ষণের এই তালিকায় রাখা হয়নি।

তবে তালিকায় রয়েছে র‍্যাব, যেটি বাংলাদেশে পুলিশের এলিট ফোর্স হিসেবে পরিচিত এবং যেটির ছয়জন কর্মকর্তার ওপর সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।

তবে ঠিক কী ধরণের প্রশিক্ষণ প্রয়োজন সে বিষয়ে এখনো বিস্তারিত কর্মকৌশল ঠিক হয়নি।

সেটি নির্ধারণের জন্য দুই দেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং কমিটি কাজ করার পর তা ঠিক হবে—আর তার পরেই শুরু হবে সে প্রক্রিয়া।

তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদ্রিম।

ছবির উৎস, Getty Images

ছবির ক্যাপশান, ২০১৭ সালে বাংলাদেশ সফর করেন তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদ্রিম

মূলত দুই দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যায়ে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় করা হবে।

কর্মকর্তারা বলছেন, ২০১৬ সালে হোলি আর্টিজানে সন্ত্রাসী হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশের সঙ্গে এ ধরণের চুক্তি এবং সমঝোতা চুক্তি করেছে বাংলাদেশ।

এছাড়া সন্ত্রাস দমন সংক্রান্ত যে কোন তথ্য পরস্পরের সঙ্গে শেয়ার করার পাশাপাশি সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণ এবং মাদক চোরাচালান ঠেকানোর ক্ষেত্রেও তথ্য বিনিময় করার কথা দুই দেশের।

বাংলাদেশের ব্যাপারে তুরস্কের এখন আগ্রহ বাড়ছে কেন?

বিশ্লেষকেরা বলছেন, দুই দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা ও সহযোগিতা বৃদ্ধি পাবার পেছনে প্রধান কারণ উভয় দেশের জাতীয় স্বার্থ।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন মনে করেন, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিতে এক ধরণের পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে, যার ফলাফল এ ধরণের সহযোগিতা।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান

ছবির উৎস, Getty Images

ছবির ক্যাপশান, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান

তিনি বলেন, “কোন একটি দেশের কিংবা একটি ব্লকের ওপর নির্ভর না করে মাল্টিপল (একাধিক) দেশ ও ব্লকের সঙ্গে কাজ করতে চাচ্ছে বাংলাদেশ। যে কারণে যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপীয় দেশের সঙ্গে যেমন সামরিক সহযোগিতার চুক্তি আছে তেমনি তুরস্কের সাথেও সন্ত্রাস দমনের অংশ হিসেবে নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করবে বাংলাদেশ।”

এছাড়া ভূ-রাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশের অবস্থানের কারণে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে বাংলাদেশের গুরুত্বের বিষয়টিও বড় অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তিগুলোর আগ্রহের কারণ তৈরি করেছে।

অধ্যাপক ইয়াসমিন বলছেন, এর বাইরে তুরস্কের কাছ থেকে বাংলাদেশ সমরাস্ত্র কিনছে, সেটাও বাংলাদেশের প্রতি তুরস্কের আগ্রহের আরেকটি কারণ।

বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব পিস এন্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ এর প্রেসিডেন্ট, নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ মেজর জেনারেল (অব) এএনএম মুনীরুজ্জামান বলছেন, এক্ষেত্রে বাংলাদেশেরও আগ্রহের কারণ রয়েছে।

তিনি বলছেন, “তুরস্কের সামরিক বাহিনী বেশ আধুনিক, ফলে দেশটি থেকে প্রশিক্ষণ পাওয়া এবং সমরাস্ত্র কেনা—দু’দিক থেকেই লাভবান হতে পারে বাংলাদেশ।”

এছাড়া মুসলিম বিশ্বে তুরস্কের অবস্থান শক্ত করাও একটি বড় লক্ষ্য তুরস্কের কাছে। মুসলিম দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সমর্থন এখানে চাইতে পারে তুরস্ক।

আর মুসলিম দেশগুলোর সংগঠন ওআইসির নেতৃত্ব এবং ন্যাটোর অংশীদার হিসেবেও সক্ষমতা বাড়ছে তুরস্কের, ফলে একটি প্রভাব বলয় তৈরি করবার প্রচেষ্টা রয়েছে দেশটির।

এখন বিশ্লেষকেরা মনে করেন, এর সঙ্গে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ হবার কারণে বাংলাদেশের একটা খ্যাতি আছে, সেই সঙ্গে আঞ্চলিক নানা ইস্যুতে বাংলাদেশ একটি অবস্থান নিতে পেরেছে, যেটি তুরস্কের আগ্রহের অন্যতম কারণ হতে পারে।

তুরস্ক বাংলাদেশ সম্পর্কের ওঠানামা

দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের সুসম্পর্কের ইতিহাস ছিল।

কিন্তু ২০১২ সালে যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামীর নেতা মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসি কার্যকর করা নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে তুরস্কের সম্পর্কে এক ধরণের টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়।

এরদোয়ান

ছবির উৎস, MOFA Bangladesh

ছবির ক্যাপশান, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনকে মাস্ক পরিয়ে দিচ্ছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট

এমনকি সেসময় ঢাকায় নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূতকে ফিরিয়ে নিয়েছিল দেশটি।

কিন্তু ২০১৬ সালে তুরস্ক এবং বাংলাদেশের মধ্যকার সম্পর্ক নাটকীয়ভাবে বদলে যেতে শুরু করে।

সেসময় দেশটিতে সংঘটিত একটি ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের সরকার তার নিন্দা জানিয়ে একটি বার্তা পাঠিয়েছিল।

তারপরই বরফ গলতে শুরু করে তুরস্ক সরকারের।

এরপর দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক আদান-প্রদানের বেশ কয়েকটি ঘটনা পরপর ঘটে।

২০২০ সালে সেপ্টেম্বরে আঙ্কারায় বাংলাদেশ দূতাবাস ভবন উদ্বোধন করা হয়।

এমনকি রোহিঙ্গা সংকট শুরুর পর তুরস্ক দ্রুততার সাথে বাংলাদেশের সমর্থনে এগিয়ে আসে।

এরপর ২০২১ সালে তুরস্কের কাছ থেকে সমরাস্ত্র কেনার জন্য একটি চুক্তি করে বাংলাদেশ।

কয়েকদিন আগে ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবসের সুবর্ণজয়ন্তীর দিনে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের নামে আঙ্কারায় একটি পার্কের নামকরণ করা হয়েছে।

সূত্র: বিবিসি

সম্পর্কিত সংবাদ
নতুন ধরন ওমিক্রন প্রতিরোধে ১১ দফা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে সরকার।

করোনা প্রতিরোধে ১১ দফা বিধিনিষেধ বছরের শুরু থেকেই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছিল করোনার সংক্রমণ। বছরের প্রথম দিন সংক্রমণের হার যেখানে ছিল Read more

প্রথমবারের মত এক আমেরিকান ব্যক্তির দেহে প্রতিস্থাপন করা হল শূকরের হৃদপিণ্ড

অস্ত্রোপচারের তিনদিন পরেও সাতান্ন বছর বয়সী ডেভিড বেনেট বেশ সুস্থ রয়েছেন। বিশ্বের প্রথম ব্যক্তি হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রের একজন রোগীর শরীরে শূকরের Read more

১৩ই জানুয়রি থেকে উন্মুক্ত স্থানে সামাজিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠান এবং সমাবেশ বন্ধ থাকবে : অমিক্রন ভাইরাস

অমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের খবরে বহু দেশের বিমনাবন্দরে জারি হয়েছে নতুন সতর্কতা। নতুন ভ্যারিয়েন্ট অমিক্রনসহ দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে থাকায় আগামী ১৩ Read more

কাজাখস্তান: ১০ দিনের মধ্যে রুশ সেনা প্রত্যাহার হবে বলে ঘোষণা করলেন প্রেসিডেন্ট তোকায়েভ

আলমাটিতে মোতায়েন রুশ-নেতৃত্বাধীন সিএসটিও শান্তিরক্ষী। কাজাখস্তানে বিক্ষোভ দমনে সাহায্য করার পর রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন সিএসটিও শান্তিরক্ষী বাহিনী বৃহস্পতিবার থেকে সে দেশ Read more

দেশকে বিক্রি করে তো ক্ষমতায় আসব না : প্রধানমন্ত্রী

গ্যাস বিক্রি করতে রাজি না হওয়ায় দুটি বৃহৎ প্রতিবেশী দেশ ২০০১-এ ক্ষমতায় আসতে দেয়নি বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা Read more

আমরা নিরপেক্ষ নই ,    জনতার পক্ষে - অন্যায়ের বিপক্ষে ।    গণমাধ্যমের এ সংগ্রামে -    প্রকাশ্যে বলি ও লিখি ।   

NewsClub.in আমাদের ভারতীয় সহযোগী মাধ্যমটি দেখুন