বাণিজ্য আর স্বার্থের এ যুগে যখন সবকিছুতেই বিনিময়ের হিসাব চলে, তখন এক মানবিক ব্যতিক্রম হয়ে উঠেছেন শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার ভজেশ্বর ইউনিয়নের লক্ষীপুর খেয়াঘাটের রমেশ মাঝি (৬৪)। তিনি ৫৪ বছর ধরে এক টাকাও না নিয়ে প্রতিদিন মানুষ পারাপার করে চলেছেন কীর্তিনাশা নদীতে।মাত্র ১০ বছর বয়সে বৈঠা হাতে তুলে নেন রমেশ মাঝি। তারপর থেকে জীবনের ৬৪টি বছরেও ক্লান্ত হননি। শীত-গরম, ঝড়-বৃষ্টি, দিন কিংবা রাত—যাত্রী ডাকলেই চলে আসেন নৌকা নিয়ে। কারো মুখে ‘ভাড়া’ শব্দটি শোনার আগেই বলেন, ‘চলুন ভাই, কোথায় যাবেন?’রমেশ মাঝির এই নিঃস্বার্থ সেবার পেছনে রয়েছে তার পারিবারিক আদর্শ। তিনি জানান, ‘১০০ বছর ধরে এই ঘাটে আমার বাপ-দাদা মানুষ পারাপার করেছেন। তারাও কিছু নেননি। আমি শুধু সেই পথই অনুসরণ করছি।’রমেশ মাঝির প্রকৃত নাম রমেশ দাশ। তবে এই নামে অনেকেই তাঁকে চেনেন না। মাঝি বললেই একনামে তাঁকে চেনেন সবাই। রমেশ মাঝি শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার জপসা ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর বাবা যজ্ঞেশ্বর মাঝি, দাদা ধনঞ্জয় মাঝিও একইভাবে বিনা পয়সায় নৌকায় মানুষ পারাপার করতেন। সংসার জীবনে ৪ সন্তানের বাবা রমেশ, দুই ছেলে এবং দুই মেয়ে। পৈতৃক সূত্রে পাওয়া একটি ছোট বাড়ি রয়েছে রমেশের। সেখানেই স্ত্রী চায়না রানী ও দুই ছেলে সন্তানকে নিয়ে বসবাস করেন তিনি।স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল মজিদ বলেন, ‘রমেশ মাঝি একজন বড় মনের মানুষ। তিনি কখনোই কারও কাছে কোনো টাকার দাবি করেন না। শতভাগ নিঃস্বার্থভাবে মানুষের উপকার করে আসছেন।’জপসা গ্রামের কলেজ শিক্ষার্থী তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি প্রতিদিন এই খেয়া ব্যবহার করি কলেজে যেতে। ছোটবেলা থেকে দেখছি, রমেশ চাচা বিনা পয়সায় সবাইকে পার করে দেন—দিন হোক, রাত হোক, এমনকি ঝড়-বৃষ্টিতেও।’রমেশ মাঝির এই মহৎ মনোভাব থেকে অনেকেই অনুপ্রেরণা পান। স্থানীয় যুবক তুষার মিয়া বলেন, ‘এখনকার যুগে সবাই স্বার্থের পেছনে ছুটে। কিন্তু রমেশ মাঝি এখনো স্বার্থহীনভাবে মানুষকে সাহায্য করেন। এমন মানুষ আজ বিরল।’ভালোবাসা ও মানুষের দেওয়া সামান্য ধান-চালেই চলে রমেশ মাঝির সংসার। তবুও মুখে কোনো অভিযোগ নেই তার। রমেশ মাঝি বলেন, ‘মানবসেবার এ শিক্ষা ঠাকুর দা ও বাবার কাছ থেকে পেয়েছি। তাঁরাও নৌকায় মানুষ পারাপার করে টাকা নিতেন না। গ্রামের মানুষ তার জন্য বিভিন্ন ফসল দেয়। তা দিয়েই দুবেলা দুমুঠো খাবারের ব্যবস্থা হয়।’ তিনি আরো বলেন, ‘এত আয় করে কী করব? মানুষের একটু আশীর্বাদই আমার জন্য যথেষ্ট। যতদিন দেহে শক্তি থাকবে, খেয়া চালিয়ে যাব। আমার বাপ-দাদা বিনা পয়সায় খেয়া পার করতেন, আমিও সারা জীবন করে যাব।’রমেশ মাঝির মতো মানুষ সমাজে আলোর দিশারি। তার নিঃস্বার্থ সেবার গল্প যেন আমাদের মনে করিয়ে দেয়—মানুষ মানুষের জন্য। তার এই মহৎ কাজ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে সারা জীবন সকলের কাছে, বলে জানান স্থানীয়রা।এসআর

Source: সময়ের কন্ঠস্বর

সম্পর্কিত সংবাদ
উলিপুরে মাছ ধরতে গিয়ে যুবকের মৃত্যু
উলিপুরে মাছ ধরতে গিয়ে যুবকের মৃত্যু

কুড়িগ্রামের উলিপুরে মাছ ধরতে গিয়ে রেজাউল ইসলাম (৪০) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত একটায় উপজেলার বজরা Read more

আথানাজের বীরত্বে ম্যাচ বাঁচালো ওয়েস্ট ইন্ডিজ
আথানাজের বীরত্বে ম্যাচ বাঁচালো ওয়েস্ট ইন্ডিজ

ম্যাচটা একদম হাতের মুঠোয় ছিল। শুধু প্রতিপক্ষকে গুটিয়ে দিলেই হতো। কিন্তু সেটাই পারলো না দক্ষিণ আফ্রিকা।

অন্তর্বর্তী সরকার পুনর্গঠন করতে হলে যেসব আইনি প্রশ্ন সামনে আসবে
অন্তর্বর্তী সরকার পুনর্গঠন করতে হলে যেসব আইনি প্রশ্ন সামনে আসবে

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস যদি পদত্যাগ করেন, এরপর আইনি জটিলতা কী হতে পারে, তা নিয়ে চলছে Read more

আমরা নিরপেক্ষ নই ,    জনতার পক্ষে - অন্যায়ের বিপক্ষে ।    গণমাধ্যমের এ সংগ্রামে -    প্রকাশ্যে বলি ও লিখি ।   

NewsClub.in আমাদের ভারতীয় সহযোগী মাধ্যমটি দেখুন