সদস্যরা কীভাবে নির্বাচিত হবেন– এ প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য না হওয়ায় সংসদের উচ্চকক্ষ গঠনের প্রস্তাবই বাদ যেতে পারে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা যাতে ভবিষ্যতে কেউ বাদ দিতে না পারে, সে জন্য সংবিধানের বিশেষ কিছু অনুচ্ছেদ সংশোধনে গণভোটের বিধানে ঐকমত্য হয়েছে দলগুলোর।মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) বেলা সোয়া ১১টায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের ১৪তম দিনের আলোচনা হয়। সেখানে ঐকমত্য কমিশনের ব্যর্থ হওয়ার সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেছেন কমিশনের সহ সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।এদিকে বিএনপিসহ পাঁচটি দল চায়, সংসদের নিম্নকক্ষের আসনের অনুপাতে উচ্চকক্ষের আসন বণ্টন হবে। তবে জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ ২১ দল চায় ভোটের অনুপাতে (পিআর) হবে উচ্চকক্ষের আসন বণ্টন। ফলে দুই পক্ষের সমঝোতা না হওয়ায় উচ্চকক্ষের ধারণা পরিত্যক্ত করার আলাপ উঠেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে। কমিশন সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি অনানুষ্ঠানিকভাবে বলেছে উচ্চকক্ষের প্রস্তাব ‘পরিত্যক্ত’ করতে। কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আগামী সপ্তাহে সংলাপে উচ্চকক্ষের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।  গতকাল জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ১৪তম সংলাপে উচ্চকক্ষ ছাড়াও সংবিধান সংশোধন নিয়ে আলোচনা হয়। কমিশনের আগে প্রস্তাব ছিল, সংবিধান সংশোধনে সংসদের উভয় কক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা এবং গণভোট লাগবে।বিএনপিকে পিআরে রাজি করাতে সংবিধান সংশোধনে উচ্চকক্ষে সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা এবং সুনির্দিষ্ট বিষয়ে গণভোটের প্রস্তাব করেছে কমিশন। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, উচ্চকক্ষ না হওয়া পর্যন্ত সংবিধান সংশোধনে নিম্নকক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা এবং সুনির্দিষ্ট বিষয়ে গণভোট লাগবে। তবে উচ্চকক্ষ পিআর হলে সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতায়ও রাজি নয় বিএনপি।আলোচনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সংসদের নিম্নকক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় সংবিধান সংশোধনে কারও দ্বিমত নেই। আদালতের রায়ে গণভোটের বিধান ফেরত এসেছে। তাই সংবিধানের কোন বিষয়ে পরিবর্তনে গণভোট লাগবে, এ বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা কেউ যাতে বাতিল করতে না পারে, সে জন্য এ বিষয়ে পরিবর্তনে গণভোটের বিধান রাখা যেতে পারে। জামায়াত এতে একমত বলে জানায়। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, বিদ্যমান সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার অন্তর্ভুক্তির পর ভবিষ্যতে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে গণভোটের প্রয়োজন হবে। এদিকে এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, বিএনপি এবং এর মিত্ররা পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠনের বিরোধিতা করছে। এখন প্রস্তাবটিই আলোচনা থেকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করছে। মৌলিক সংস্কারে এনসিপি ছাড় দেবে না। সংলাপে অংশ নেওয়া ৩০ দল এবং জোটের সিপিবি ও বাসদ ছাড়া বাকিরা উচ্চকক্ষ গঠনের পক্ষে ছিল।  আলোচনায় জমিয়তে উলামায়ে ইসলামও আপাতত উচ্চকক্ষ চায় না।ঐকমত্য না থাকায় উচ্চকক্ষের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের ভার রাজনৈতিক দলগুলো কমিশনকে দিয়েছে বলে জানিয়েছেন আলী রীয়াজ। আলী রীয়াজ বলেন, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠিত না হলে অথবা গঠিত না হওয়া পর্যন্ত সংবিধান সংশোধনের জন্য সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাগবে। তবে অনুচ্ছেদ ৮, ৪৮, ৫৬, ১৪২ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা (অনুচ্ছেদ ৫৮ক, ৫৮খ এবং ৫৮ঙ) সংশোধনে গণভোটের প্রয়োজন হবে।   বিএনপিসংলাপের পর সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বিএনপি প্রস্তাব করেছে, ভবিষ্যতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পরিবর্তন করতে হলে গণভোটের মাধ্যমেই করতে হবে, যাতে কেউ তত্ত্বাবধায়ক সরকারে হাত না দিতে পারে।তিনি আরও বলেন, উচ্চকক্ষের নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে ঐকমত্য হয়নি। নিম্নকক্ষের আসনের অনুপাতে না ভোটের অনুপাতে– এ নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক হয়েছে। সাধারণ বিল কীভাবে পাস হবে, সংবিধান সংশোধন কীভাবে হবে– এসব প্রশ্নে ব্যাপক আলোচনার ভিত্তিতে ঐকমত্য হয়নি। দেশের যে আর্থিক সক্ষমতা, তাতে আরেকটি সংসদ সৃষ্টি করা এবং তা যদি নিম্নকক্ষের রেপ্লিকা হয়, তাহলে প্রয়োজন আছে কিনা প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে। সব বিষয়ে আলোচনা করে ঐকমত্য কমিশন সবার মতামত নিয়ে সিদ্ধান্ত দেবে আগামী রোববার। এরপর বিএনপি মতামত জানাবে। জামায়াতএদিকে গণভোটের মাধ্যমে সংস্কার সংলাপের মতবিরোধের নিষ্পত্তি চায় জামায়াত। ডা. তাহের বলেছেন, যদি কেউ সংস্কার বাধাগ্রস্ত করে, তাহলে একমাত্র পথ হচ্ছে গণভোট। জনগণই ঠিক করবে তারা কোন পদ্ধতি চায়, কোন সংস্কার চায়। তিনি জানান, পিআর পদ্ধতির উচ্চকক্ষ হতে হবে। যেখানে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোট অনুযায়ী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হবে। শুধু বড় দল নয়, ছোট দলগুলোর কণ্ঠ উচ্চকক্ষে থাকবে। জামায়াত নেতা ডা. তাহের বলেছেন, নিম্নকক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ এবং উচ্চকক্ষে সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতার মাধ্যমে সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে অনুচ্ছেদ ৮, ৪৮, ৫৬, ১৪২ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার-সংক্রান্ত বিধান সংশোধনে গণভোট লাগবে। এনসিপিআখতার হোসেন বলেন, সংবিধানের প্রস্তাবনা, অনুচ্ছেদ ৪৮, ৫৬, নতুনভাবে সংযোজনযোগ্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার সম্পর্কিত অনুচ্ছেদ যদি ভবিষ্যতে সংশোধন করতে হয়, তবে তা গণভোটের মাধ্যমে করতে হবে। সংবিধান সংশোধনের জন্য শুধু নিম্নকক্ষ নয়, উচ্চকক্ষেরও দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থনের বাধ্যবাধকতা থাকুক। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন্দ বলেন, পিআর না হলে আরেকটি গণঅভ্যুত্থান হবে। প্রহসনের নয়, আমরা কার্যকর গণভোট চাই। এবি 

Source: সময়ের কন্ঠস্বর

সম্পর্কিত সংবাদ
সংকটাপন্ন ফরিদা পারভীন, দোয়া চাইলেন শিল্পীর স্বামী
সংকটাপন্ন ফরিদা পারভীন, দোয়া চাইলেন শিল্পীর স্বামী

দেশবরেণ্য লালন সংগীতশিল্পী ফরিদা পারভীন গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে আবারও কয়েক দিন আগে তাকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা Read more

এস কে সুর, তার স্ত্রী ও মেয়ের বিরুদ্ধে আরও তিন মামলা
এস কে সুর, তার স্ত্রী ও মেয়ের বিরুদ্ধে আরও তিন মামলা

জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর সিতাংশু কুমার (এস কে) সুর চৌধুরী, তার স্ত্রী সুপর্ণা সুর Read more

সূচকের বড় পতন, কমেছে লেনদেন
সূচকের বড় পতন, কমেছে লেনদেন

সরকার পতনের ‘এক দফা’ দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন রোববার (৪ আগস্ট) শুরু হয়েছে।

আমরা নিরপেক্ষ নই ,    জনতার পক্ষে - অন্যায়ের বিপক্ষে ।    গণমাধ্যমের এ সংগ্রামে -    প্রকাশ্যে বলি ও লিখি ।   

NewsClub.in আমাদের ভারতীয় সহযোগী মাধ্যমটি দেখুন