গর্ভপাত শুধু একজন নারীর শারীরিক ক্ষতিই নয়, দম্পতির মানসিক অবস্থাতেও রেখে যায় গভীর প্রভাব। অনেক ক্ষেত্রেই গর্ভপাতের পর দাম্পত্য সম্পর্কে নেমে আসে শীতলতা, হারিয়ে যায় ঘনিষ্ঠতা। এমন পরিস্থিতিতে কী করবেন? কীভাবে আবার ফিরে পাবেন ভালোবাসা ও কাছাকাছি আসার সেই সহজ অনুভব? বিশেষজ্ঞরা জানালেন করণীয়। খবর হেলথ শটসসম্প্রতি এক দম্পতির অভিজ্ঞতায় উঠে এসেছে এমনই এক চিত্র। রেনু ও মেঘ (নাম পরিবর্তিত) তাদের আট সপ্তাহের সন্তান হারানোর পর নিজেদের মাঝেই দূরত্ব অনুভব করতে থাকেন। রেনু বলেন, ‘সে (স্বামী) মাঝে মাঝে আমার হাত ধরতেও দ্বিধায় ভুগত। আর আমি নিজেকে নিয়েই সন্দেহ করতে শুরু করেছিলা- আমি কি আগের মতোই আছি?’এই অভিজ্ঞতা অনেক দম্পতিরই। তাদের মতো অনেকেই জানেন না, কীভাবে আবার কাছাকাছি আসা যায়।এমন পরিস্থিতিতে মানসিক ও শারীরিকভাবে একে অপরকে বোঝা এবং ধীরে ধীরে সম্পর্ক জোড়া লাগানো জরুরি বলে মত দিয়েছেন জ্যেষ্ঠ স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. রিতা বক্সী। তিনি বলেন, ‘গর্ভপাত একটি অত্যন্ত কষ্টদায়ক অভিজ্ঞতা। নারীরা এই সময়ে শরীরের যন্ত্রণা, দুঃখ, মানসিক চাপের মধ্য দিয়ে যান। পুরুষ সঙ্গীও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হন। কিন্তু অনেক সময় তারা বোঝাতে পারেন না।’গর্ভপাতের মানসিক প্রভাবগর্ভপাতের পর অনেক নারী ও পুরুষ নিচের অনুভূতিগুলোর মধ্য দিয়ে যানগভীর দুঃখ ও কান্নানিজেকে দোষী ভাবারাগ ও হতাশাএকাকিত্ব অনুভবআবার সন্তান নিতে ভয় পাওয়াঘুম ও খাওয়ায় অনিয়মপ্রিয় কাজেও আগ্রহ হারানোসঙ্গীর প্রতি দূরত্ব অনুভবঘনিষ্ঠতায় ফিরতে সময় দিনডা. বক্সী জানান, গর্ভপাতের পর কখন আবার শারীরিক সম্পর্ক শুরু করা যাবে, তার কোনো নির্দিষ্ট সময় নেই। তবে সাধারণত রক্তপাত ও ব্যথা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত ২-৩ সপ্তাহ অপেক্ষা করা উচিত। সবচেয়ে জরুরি হলো, দু’জনেরই মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকা। কোনো পক্ষ যেন চাপ অনুভব না করেন।একজন প্রস্তুত, অন্যজন না- তখন কী করবেন?দম্পতির একজন যদি ঘনিষ্ঠ হতে চান, আর অন্যজন মানসিকভাবে এখনও প্রস্তুত না থাকেন, তাহলে সেটা স্বাভাবিক বলে মনে করেন চিকিৎসকরা।এমন পরিস্থিতিতে করণীয়খোলামেলা কথা বলুনচাপ না দিয়ে একে অপরের অনুভূতির প্রতি সম্মান দেখানআবেগের ঘনিষ্ঠতা বাড়ান যেমন- একসঙ্গে সময় কাটানো, গল্প করা, পাশে বসে থাকাযৌন সম্পর্কের আগে মানসিক যোগাযোগ গড়ে তোলা বেশি গুরুত্বপূর্ণঘনিষ্ঠতার মানে যৌনতা নয়চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, ‘ঘনিষ্ঠতা মানেই যৌন সম্পর্ক নয়।’ গর্ভপাতের পর একে অপরকে জড়িয়ে ধরা, হাত ধরা, আলতো ম্যাসাজ, একসঙ্গে হাঁটা কিংবা কেবল চোখে চোখ রেখে কথা বলাও দাম্পত্যের জন্য গভীর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।স্মরণে রাখুন- এটা কারও দোষ নয়গর্ভপাত কারও একার দোষ নয়- এমন বার্তা বারবার মনে করানো উচিত। এই সময়ে একে অপরকে দোষারোপ না করে বরং সহমর্মিতা ও ভালোবাসার মাধ্যমে একসঙ্গে সেরে ওঠাই সবচেয়ে বড় সমাধান।পরামর্শ: যদি মনে করেন একে অপরকে বুঝতে সমস্যা হচ্ছে, তাহলে দেরি না করে একজন পেশাদার কাউন্সেলরের সাহায্য নেয়াই ভালো। সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা ফিরিয়ে আনতে যতটা দরকার ভালোবাসা, ঠিক ততটাই দরকার সময়, ধৈর্য ও বোঝাপড়া।এবি
Source: সময়ের কন্ঠস্বর