আমি না বললেও, স্যার, মাদক আমাকে ছাড়ছে না, এমন কথা শোনা গেছে মাদকাসক্ত ব্যক্তি কিশোর সাব্বিরের মুখ থেকে। একজন মানুষ কতটা নিরুপায় হলে এমন কথা বলতে পারে! মাদক তাকে নিয়ে গিয়েছিল বিপদের সর্বোচ্চ সীমায়।সেই কিশোর সাব্বিরের আজকের হাসিমুখের অন্তরালে কারণ হতে পেরে ভালো লাগছে। পরিবার, স্বজন কেউ তাকে বিরত রাখতে পারেনি।প্রায় দু’মাস আগে বিপর্যস্ত হয়ে কিশোর ছেলেটা নিজেই থানায় গিয়ে হাজির হয়েছিল। পুলিশ সাথে যোগাযোগ করে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহায়তায় ড্রীম লাইফ মাদক নিরাময় কেন্দ্রে কিশোর ছেলেটিকে ভর্তি করেন বরিশাল জেলা সমাজ সেবা কার্যলয়ের উপ-পরিচালক এ,কে,এম আকতারুজ্জামান তালুকদার। আন্তরিকতায় নিরাময় কেন্দ্রের খরচ বহন করেছিল স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রূপান্তর এবং জেলা প্রবেশন কার্যালয়।তবে এটা খুবই ভাবনার বিষয়। কেননা মাদকাসক্তি, যাকে বলা হয় সব ধরনের অপরাধের মূল। নেশায় জড়িয়ে পড়া বা মাদকাসক্তি আসলে একটি ব্যাধি। সাধারণত চিকিৎসাবিদ্যায় মাদকাসক্তিকে বলা হয় ক্রনিক রিলাক্সিং ব্রেইন ডিজিজ। একজন মানুষ প্রথমেই কিন্তু মাদক সেবন করে না। প্রাথমিক মুহূর্তে সে অসৎ সঙ্গের মাধ্যমে সর্বনাশ ডেকে আনে সিগারেটের মাধ্যমে।অর্থাৎ প্রথমে যেটি করে তা হলো সিগারেটের নেশা। ব্যক্তি একপর্যায়ে ধূমপানে এক ধরনের ভালো লাগার অনুভূতি পেতে থাকে এবং ধীরে ধীরে মাদকের দিকে ঝুঁকে পড়েন সাব্বির। ফলে ধাপে ধাপে শুরু হয় সাব্বিরের নেশা, অংশ ইয়াবা সেবন। পরে মস্তিষ্কের রিওয়ার্ড সার্কিটটি মাদকে অভ্যস্ত হয়ে গেলে তার সহনশীলতা বেড়ে যায়। তখন মাদক না সেবন করলে বা কম নিলে ‘উইথড্রয়াল সিনড্রোম’ শুরু হয়। অবাক করার বিষয় হচ্ছে, একবার কেউ মাদকে আসক্ত হয়ে গেলে, তাঁর মস্তিষ্ক মাদকের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। অর্থাৎ মাদক হয়ে যায় মস্তিষ্কের কন্ট্রোলার বা নিয়ন্ত্রক।কিন্তু বরিশালের উজিরপুর উপজেলার কিশোর সাব্বির নিজেকে মাদক থেকে মুক্ত করে মানুষের মধ্যে থাকা সেই ভাবনাকে পরিবর্তন করে দেখিয়ে দিয়েছে।কিশোর সাব্বির বলেছিলেন, ‘আমি মাদক ছাড়লেও, মাদক আমায় ছাড়ে না, স্যার।’ খুব অসহায় ভাবেই আকুতি জানাচ্ছিল তিনি।কিন্তু সাব্বির সেখান থেকে নিজেকে পরিবর্তন করেন। এবং কিছু করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চান। নিজেকে একজন স্বাবলম্বী হিসেবে তৈরি করতে চাইলে প্রায় দু’মাস তাকে পর্যবেক্ষণে রাখার পর কিশোর ছেলেটির স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য চিন্তার শেষ ছিলো না।অবশেষে বরিশাল জেলা সমাজসেবার সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ পারভেজের সহযোগিতায় তার কাজের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়।কিশোর ছেলেটির হাতে ইভেন্ট-৮৪ গ্রুপ থেকে উপহার দেওয়া কফি তৈরির উপকরণ তুলে দেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন। এই কিশোর ছেলেটি নেশায় ডুবে যে হাত দিয়ে মাদক সেবন করেছে, এখন সে সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে এসে সেই হাত দিয়ে রাস্তায় ঘুরে ঘুরে কফি বানিয়ে খাওয়ান নামে বিক্রি করে যাচ্ছেন।সর্বনাশা মাদকের করাল গ্রাস থেকে ছেলেটি মুক্তি পেয়েছেন। নতুন জীবনে প্রবেশ করে সাব্বির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন ও সমাজসেবার সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ পারভেজের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।এসআর
Source: সময়ের কন্ঠস্বর