গবাদিপশুর লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি) ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়েছে সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে। ভাইরাসজনিত এ রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন গরুর মালিক ও খামারিরা। সময়মতো চিকিৎসা না পাওয়ার কথা জানিয়েছেন তারা। একমাত্র আয়ের উৎস গরু মারা যাওয়ায় অনেকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এদিকে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার দাবি, এ রোগে গরু আক্রান্ত হয় না, মারাও যায় না। এ ভাইরাসে আক্রান্ত গরুর সংখ্যা বা মৃতের কোনো সংখ্যা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে নেই।উপজেলার প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের ছয়টি ইউনিয়ন—তেকানী, চরগিরিশ, নাটুয়ারপাড়া, খাসরাজবাড়ি, নিশ্চিন্তপুর ও মনসুরনগর ইউনিয়নের গবাদি পশুর মধ্যে লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি) ভাইরাসের ভয়াবহ সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। এতে প্রতিদিনই প্রায় সুস্থ সবল বাছুর গরু আক্রান্ত হচ্ছে। চিকিৎসার অভাবে অনেক গরু মারা গেছে। এই রোগে আক্রান্ত গরুর শরীরে ফোস্কা, জ্বর, ক্ষত ও দুর্বলতা দেখা যায়। অনেক গরু খাওয়া বন্ধ করে দেয়।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার নাটুয়ারপাড়া ইউনিয়নের পানাগাড়ি গ্রামের কৃষক মাজম ফকিরের একটি গাভী, আকালিয়ার একটি ষাড়, আনোয়ার মিয়া ও আকতার মণ্ডলের একটি করে বলদ এই রোগে আক্রান্ত হয়ে এরই মধ্যে মারা গেছে। আর আক্রান্ত হয়েছে তেকানি ইউনিয়নের পলাশ শেখের একটি, আব্দুস সালাম ও নায়েব আলীর মোট পাঁচটি গরু।গরুর মালিক আকালিয়া বলেন, ‘আমরা চরের মানুষ। এখানে কোনো সরকারি ডাক্তার পাই না। গরুটা মারা যাওয়ায় আমি অনেক ক্ষতির মুখে পড়েছি।’তেকানি গ্রামের পলাশ শেখ অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে যোগাযোগ করেও তেমন কোনো সহায়তা পাইনি। এখন নিজেদের চেষ্টায় ওষুধ কিনে চিকিৎসা করছি।’নিশ্চিন্তপুর ইউনিয়নের জজিরা মধ্যবাজার এলাকার সোহেল কারী বলেন, ‘আমার একটি গরু তিনদিন ধরে খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। গরুর শরীর ফুলে ফোস্কার মতো উঠেছে। চিকিৎসা মিলছে না।’এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাজীপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. দিদারুল আহসান বলেন, ‘লাম্পি যখন ছিল তখন কেউ খোঁজ নিলো না। এ রোগে গরু আক্রান্ত হয় না, মারাও যায় না।’চরাঞ্চলে চিকিৎসার ব্যাপারে এ কর্মকর্তা বলেন, ‘চরাঞ্চলের দুর্গম এলাকায় চিকিৎসাসেবা পৌঁছানো কঠিন। নাটুয়ারপাড়াতে আমাদের একটা চিকিৎসা কেন্দ্র রয়েছে। সেখানে প্রতি মঙ্গলবার চিকিৎসা প্রদান করা হয়। সরকারিভাবে এ ভাইরাসের প্রতিষেধক আসলে আবিষ্কার হয়নি এখনও, তবে বাজারে বিভিন্ন প্রাইভেট কোম্পানির একটি প্রতিষেধক পাওয়া যায়। সেগুলো কিনে দিতে হবে।’এদিকে এ ভাইরাসে আক্রান্ত গরু বিক্রির জন্য হাটে তুলছেন অনেকেই। প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের তেমন কোনো প্রচারণা না থাকায় ভাইরাসটি বেশি ছড়িয়ে পড়েছে বলে ধারণা সচেতন মহলের।এসআর
Source: সময়ের কন্ঠস্বর