ভোলার চরফ্যাশনে বোনকে উত্যক্ত করার প্রতিবাদ করায় জাহিদুল (২৫) নামের এক যুবককে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। পরে স্বজনরা খবর পেয়ে স্থানীয় গ্রাম পুলিশের সহযোগিতায় গুরুতর আহত যুবককে উদ্ধার করে চরফ্যাশন হাসপাতালে ভর্তি করেন। গত শুক্রবার সকালে চরমাদ্রাজ ইউনিয়নের মেয়াজানপুর গ্রামের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের তালুকদারের চৌরাস্তা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।ঘটনার চার দিন পর সোমবার নির্যাতনের নির্মম দৃশ্যের একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। নির্যাতনের ভিডিও নিয়ে উপজেলা জুড়ে আলোচনার ঝড় ওঠে। নির্যাতনের শিকার যুবক শশীভূষণ থানার হাজারীগঞ্জ ইউনিয়নের মো. মাজেদ ঢ়ারীর ছেলে এবং তিনি একজন ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালক বলে জানা গেছে।নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক যুবক জানান, বখাটে যুবক তুহিন, যুবদল নেতা ইমন তালুকদারসহ যুবককে বেঁধে নির্যাতনকারী ওই যুবকরা সবাই মাদকে আসক্ত। তারা গ্রামজুড়ে ত্রাস করে বেড়ায়। তাদের ভয়ে ওই গ্রামজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে।হাসপাতালে চিকিৎসাধীন যুবক জাহিদুল জানান, তার প্রতিবেশী যুবক তুহিনের সঙ্গে তার অনেকদিনের বন্ধুত্ব সম্পর্ক। এ সুযোগে বন্ধু তুহিন তার বাড়িতে আসা-যাওয়া করতো। বন্ধুত্বের সুযোগে তুহিন তার নবম শ্রেণীতে পড়ুয়া ছোট বোনকে স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে উত্যক্ত করতো। বিষয়টি ছোট বোন তাকে এবং তার পরিবারকে জানায়। এ নিয়ে বন্ধু তুহিনের সঙ্গে তার সম্পর্কের দূরত্ব শুরু হয়। পরে যুবক তুহিন তার ১৪ বছর বয়সী বোনকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। এতে তিনিসহ তার পরিবারের সদস্যরা তার প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ক্ষিপ্ত হন বন্ধু তুহিনসহ তার অপর বন্ধুরা।শুক্রবার ভোরে বন্ধু তুহিন একটি সমস্যায় পড়েছেন বলে জাহিদুলকে মুঠোফোনে ফোন দিয়ে চরমাদ্রাজ ইউনিয়নের মেয়াজানপুর গ্রামের তালুকদার চৌমুহনীতে ডেকে নেয়। পুরানো বন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে তিনি বন্ধু তুহিনের কাছে ছুটে গেলে তুহিনসহ তার বন্ধু যুবদল নেতা মেয়াজানপুর ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইমন তালুকদার, আমিনুল ইসলাম ও মো. সিদ্দিক তার ওপর অর্তকিত হামলা চালিয়ে তাকে বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে অমানুষিক নির্যাতন চালান। তারা ফ্লাস দিয়ে হাত-পায়ের নখ তুলে নেন। মারধরে তিনি অচেতন হয়ে পড়লে তাকে একাধিকবার পানিতে চুবিয়ে জ্ঞান ফিরিয়ে ফের নির্যাতন চালান। নির্যাতনের সময় তুহিনসহ ওই যুবকরা নির্যাতনের দৃশ্য মোবাইল ফোনে ধারণ করেন। এতেই থেমে যাননি তারা। পরে তাকে মাদক দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা করেন। শতবার নির্যাতনকারীদের বাবা ডেকে রক্ষা পাইনি। পরে তার বাবা মাজেদ ঢ়াড়ী খবর পেয়ে স্থানীয় গ্রাম পুলিশের মাধ্যমে তাকে উদ্ধার করে ওইদিনই চরফ্যাশন হাসপাতালে ভর্তি করেন।নির্যাতনের শিকার যুবক জাহিদুলের মা আছমা বেগম জানান, যুবক তুহিন তার শিশু কন্যাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে উত্যক্ত করতো। বিষয়টি মেয়ে তাকে জানালেও তুহিনরা প্রভাবশালী হওয়ায় প্রথমে তারা প্রতিবাদ করতে সাহস পাননি। পরে যুবক তুহিনের উত্যক্তের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় মেয়ে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। পরে তিনি বিষয়টি বড় ছেলে জাহিদুল ও স্বামীকে জানান। ছেলে ও স্বামী ঘটনাটি তুহিনের পরিবারকে জানালে কোনো প্রতিকার পাননি। এতে চরম ক্ষিপ্ত হন তুহিন। পরে সমস্যায় পড়েছেন এমন অজুহাতে ছেলেকে ডেকে নিয়ে নির্মম নির্যাতন করেন। এমন নির্যাতনের বিচারের দাবি জানান তিনি।জাহিদুলের বাবা মো. মাজেদ জানান, তার ছেলেকে নির্যাতনের ঘটনাটি তার ছেলের পরিচিত ওই গ্রামের একজন রিকশা চালক এসে তার বাড়িতে খবর দিলে তিনি তার স্ত্রীসহ স্থানীয় গ্রাম পুলিশ বজলু রহমানের সহযোগিতায় তাদের বন্ধিশালা থেকে ছেলেকে উদ্ধার করেন। গুরুতর আহত অবস্থায় ছেলে জাহিদুল চরফ্যাশন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। ছেলেকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করেও থেমে যাননি ওই চক্র। ঘটনাটি থানার পুলিশকে জানালে মেয়েকে এসিড দিয়ে ঝলসে দেওয়া ও ছেলেকে হত্যার হুমকি দেন। তাদের ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে তিনিসহ তার পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন।ঘটনার পরপরই অভিযুক্ত তুহিন ও যুবদল নেতা ইমন তালুকদারসহ অপর অভিযুক্তরা গা-ঢাকা দেয়ায় তাদের বক্তব্য জানা যায়নি। তবে তুহিনের বাবা মো. বেল্লাল হোসেন মুঠোফোনে জানান, ঘটনাটি তার জানা নেই। ছেলে তুহিনও বাড়িতে নেই। ঘটনাটি জেনে সঠিকভাবে জানাতে পারবো।চরফ্যাশন থানার ওসি মো. মিজানুর রহমান হাওলাদার জানান, এ ঘটনা আমরা শুনেছি এবং হাসপাতালে গিয়ে পুলিশ ঘটনাটি যাচাই করেছেন। ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে এখনও কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।এসআর
Source: সময়ের কন্ঠস্বর