টানা ভারী বর্ষণে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলায় সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা ও মানবিক সংকট। গত কয়েক দিনের মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতে উপজেলার অন্তত অর্ধশতাধিক গ্রাম পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে প্রায় দুই হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।শুক্রবার (৫ জুলাই) সন্ধ্যা থেকে শুরু হওয়া একটানা বৃষ্টিতে অনেক এলাকায় নেমেছে হাঁটু সমান পানি। শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত কক্সবাজারে দেশের সর্বোচ্চ ১৪৬ মিলিমিটার এবং টেকনাফে ১৪৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস।সোমবার (৭ জুলাই) দুপুর পর্যন্ত থেমে থেমে বৃষ্টি হতে দেখা গেছে।উপজেলা প্রশাসনসহ একাধিক সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পাহাড়ি ও নিচু এলাকা ঘেরা টেকনাফের ছয়টি ইউনিয়ন এবং পৌরসভার প্রায় ৫০টিরও বেশি গ্রাম ইতোমধ্যে প্লাবিত হয়েছে। হোয়াইক্যং ইউনিয়নের আটটি, হ্নীলা ইউনিয়নের ১২টি, টেকনাফ পৌরসভার সাতটি, সদর ইউনিয়নের ছয়টি, সাবরাং ইউনিয়নের আটটি ও বাহারছড়া ইউনিয়নের অন্তত ১০টি গ্রাম পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী জানান, বিশেষ করে পূর্ব রঙিখালী এলাকা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। প্রায় ৩০০ পরিবার এখন পানিবন্দি। খাল দখলের কারণে পানি নামতে পারছে না। আমরা দ্রুত পানি নিষ্কাশনের চেষ্টা চালাচ্ছি।স্থানীয় বাসিন্দা খোরশেদ আলম বলেন, ঘরের ভেতরেই কোমর পানি। রান্না করতে পারছি না। ছোট ছোট বাচ্চারা কষ্টে আছে। কিছু জায়গায় সাপও ঢুকে পড়েছে। এটা একরকম ছোটখাটো বন্যা।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী বলেন, ঘরের চালা ফুটো হয়ে গেছে, ভেতরে পানি পড়ছে। বাচ্চাদের নিয়ে কী করবো বুঝতেছি না। খাবার নেই, জ্বালানি নেই, শুধু পানি আর কাদা।স্থানীয় যুবক রবিউল ইসলাম বলেন, বছরের পর বছর আমরা একই দুর্ভোগে পড়ি। খাল দখল, ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভেঙে পড়া; এই সমস্যাগুলোর সমাধান না হলে প্রতিবছরই প্লাবন হবে।স্থানীয় সচেতন মহলের মতে, টেকনাফে বর্ষা মৌসুম মানেই জলাবদ্ধতা ও দুর্ভোগ। খাল দখল, অনিয়ন্ত্রিত পাহাড়ি বসতি ও দুর্বল অবকাঠামো এই পরিস্থিতিকে ভয়াবহ করে তুলেছে। স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের পাশাপাশি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদে খাল উদ্ধার ও টেকসই পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা গড়ে তোলাই পারে এই সংকটের স্থায়ী সমাধান দিতে।সাবরাং ইউনিয়নের বাসিন্দা ইমন আহমদ বলেন, পাঁচ দিন ধরে বৃষ্টির কারণে নিচু এলাকা তলিয়ে গেছে। অনেকেই রান্না করতে পারছে না। অনেকে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে। এখানকার মানুষ এখন সাহায্যের আশায় আছে।হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ আনোয়ারী বলেন, আমার ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসরতদের নিরাপদ স্থানে সরাতে মাইকিং করা হয়েছে।টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, ইউনিয়ন পর্যায়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে শুকনো খাবার বিতরণের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্র খোলার পরিকল্পনাও রয়েছে।এআই
Source: সময়ের কন্ঠস্বর