বাংলাদেশে লাখো তরুণ-তরুণীর জীবনের অন্যতম বড় স্বপ্ন বিসিএস ক্যাডার হওয়া। কেউ চায় প্রশাসনে, কেউ চায় পুলিশে, আবার কেউ শিক্ষা কিংবা পররাষ্ট্র ক্যাডারে নিজের অবস্থান গড়তে। এই স্বপ্ন শুধু চাকরির নয়—এটি আত্মতৃপ্তি, দায়িত্ব ও দেশসেবার সুযোগ পাওয়ার প্রতীক। এমনই এক স্বপ্ন পূরণ করেছেন চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার মঘাদিয়া ইউনিয়নের তিনঘরিয়া টোলার সন্তান জমির উদ্দিন ফিরোজ। জমির ওই এলাকার নুর ছোবাহান ও জয়নাব বিবি দম্পত্তির তিন সন্তানের মধ্যে সবার ছোট।জানা গেছে, সম্প্রতি ঘোষিত ৪৪তম বিসিএস পরীক্ষার ফলাফলে জমির উদ্দিন ফিরোজ মেধাতালিকায় ৬৬তম স্থান অর্জন করে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। এটি তার জীবনের একটি বড় অর্জন, যা এসেছে কঠোর পরিশ্রম, অধ্যবসায় ও আত্মত্যাগের দীর্ঘ পথ পেরিয়ে।জমিরের শিক্ষাজীবন শুরু হয় চট্টগ্রাম শহরে। কিন্তু হঠাৎ তার বাবার অসুস্থতা ও পারিবারিক আর্থিক সংকটের কারণে পরিবারসহ ফিরে আসতে হয় গ্রামের বাড়ি মিরসরাইয়ে। তখন থেকেই শুরু হয় সংগ্রামের নতুন অধ্যায়। তিনি পড়াশোনা চালিয়ে যান মলিয়াইশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং পরবর্তীতে মলিয়াইশ উচ্চ বিদ্যালয়ে। দুই প্রতিষ্ঠানে চতুর্থ শ্রেণি থেকে শুরু করে এসএসসি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন।পরে তিনি নানাবাড়িতে থেকে পড়াশোনা চালিয়ে যান প্রফেসর কামাল উদ্দিন কলেজে এবং সেখান থেকেই এইচএসসি পাশ করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে কৃতিত্বের সঙ্গে মেধাতালিকায় তৃতীয় স্থান অর্জন করেন এবং ভর্তি হন ইংরেজি বিভাগে—যেটি ছিল তার বহুদিনের লালিত স্বপ্ন।২০২২ সালে তিনি অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এরপর ২০২৩ সালে তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকে সহকারী পরিচালক (AD) পদে যোগদান করেন। তবে এর মধ্যেই ৪৩তম বিসিএস পরীক্ষায় শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হন। কিন্তু যোগ না দিয়ে অপেক্ষা করেন নিজের কাঙ্ক্ষিত প্রশাসন ক্যাডারের জন্য। অবশেষে ৪৪তম বিসিএসে সেই স্বপ্ন পূরণ হয়।নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে জমির বলেন, ‘৪৩তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হলেও আমি যোগদান করিনি। কারণ, আমার লক্ষ্য ছিল প্রশাসন ক্যাডারে থেকে সরাসরি জনগণের সেবা করা। আমি বিশ্বাস করি, প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব।’তার এই সাফল্যে খুশি তার পরিবার, শিক্ষক ও এলাকাবাসী। সবাই মনে করেন, জমির উদ্দিন ফিরোজ শুধু নিজের নয়, পুরো মিরসরাইয়ের গর্ব। তার জীবনসংগ্রাম ও অধ্যবসায় অন্য তরুণদের জন্য অনুপ্রেরণার বাতিঘর হয়ে থাকবে।প্রফেসর কামাল উদ্দিন কলেজের অধ্যক্ষ আবছার উদ্দিন বলেন, ‘জমির উদ্দিন শিক্ষা জীবন থেকেই অত্যন্ত ভদ্র, বিনয়ী ও মার্জিত স্বভাবের একজন ছাত্র ছিল। তার আচরণে সবসময়ই শালীনতা ও শ্রদ্ধাবোধ ছিল চোখে পড়ার মতো। পড়াশোনায় সে ছিল অত্যন্ত মনোযোগী, দায়িত্বশীল ও সময়নিষ্ঠ। শিক্ষক হিসেবে আমি তার মধ্যে সবসময়ই নেতৃত্বের গুণাবলি ও সৎ পথে এগিয়ে যাওয়ার মানসিকতা দেখেছি।’তিনি আরও বলেন, ‘জমির শুধু পরীক্ষায় ভালো ফল করেই থেমে থাকেনি, বরং জীবনের প্রতিটি ধাপে দৃঢ় মানসিকতা, ধৈর্য ও নিষ্ঠার মাধ্যমে নিজেকে প্রমাণ করেছে। তার এই সাফল্য আমাদের কলেজের জন্য যেমন গর্বের, তেমনি এই অঞ্চলের অন্যান্য শিক্ষার্থীদের জন্য বড় অনুপ্রেরণা। আমি বিশ্বাস করি, সে একজন আদর্শ ও মানবিক প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে দেশের মানুষের পাশে দাঁড়াবে এবং জাতিকে আলোকিত করবে।’এসআর
Source: সময়ের কন্ঠস্বর