প্রায় ২০ হাজার অটো, ইজিবাইক, গ্যাস অটো সম্পূর্ণ অবৈধভাবে চলাচল করছে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন এলাকায়। এর মধ্যে সিটি কর্পোরেশনের লাইসেন্সপ্রাপ্ত ৭৬২০টি অটো গত চার বছর যাবত তাদের লাইসেন্স নবায়ন না করায় এগুলোও অবৈধ তালিকাভুক্ত হয়েছে। এদের বকেয়া ফি এর পরিমাণ ১০ কোটি টাকা।কর্তৃপক্ষ বলেছে, পর্যাপ্ত জনবল ও ম্যাজিস্ট্রেট না থাকায় অবৈধ এসব যানবাহন চলাচল বন্ধ করা যাচ্ছে না।৬৮ বর্গ কিলোমিটার বরিশাল সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ক্ষুদ্র পাবলিক পরিবহন হিসেবে চলাচল করে সিএনজি, ইজি বাইক (হলুদ অটো), অটো রিক্সাসহ প্রায় ২৫ হাজার থ্রি হুইলার। এর মধ্যে পুলিশ ও বিআরটিএ এর লাইসেন্স নিয়ে চলে ৫ হাজার সিএনজি।বাকিগুলোর মধ্যে সিটি মেয়রগণ ইতিপূর্বে ৭৬২০টি ইজি বাইক ও অটোকে বৈধতার লাইসেন্স প্রদান করেন। কিন্তু গত চার বছর থেকে এরাও তাদের লাইসেন্স নবায়ন না করে অন্য ১৩ হাজার অবৈধ থ্রি হুইলারের মতোই চলাচল করছে।শৃঙ্খলা না মেনে এসব যান অবাধে চলাচল করায় নগরজুড়ে সৃষ্টি হচ্ছে অচলাবস্থা। বিশেষ করে ব্যাটারি চালিত রিক্সায় ব্রেক না থাকায় প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনায় পঙ্গু হচ্ছে যাত্রী, পথচারী ও চালক নিজে। শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুর্ঘটনায় আহতদের ৮০ ভাগ হলুদ অটো ও ব্যাটারি চালিত রিক্সার কারণে সংঘটিত হয়ে থাকে।সিটি কর্পোরেশন সূত্র জানায়, ম্যাজিস্ট্রেট ও পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় বকেয়া টাকা আদায় ও অবৈধ যানের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো যাচ্ছে না।বিসিসির যানবাহন লাইসেন্স শাখার সুপারিনটেন্ডেন্ট মোঃ মাহবুবুল ইসলাম বলেন, ২০১৯ সাল থেকে লাইসেন্স নবায়নের বকেয়া পড়তে শুরু করে। এক পর্যায়ে করোনা শুরু হলে দুই বছরের নবায়ন ফি মাফ করা হয়। তার পরেও বকেয়া আদায় হচ্ছে না। আসলে অবৈধ থ্রি হুইলার নিয়ন্ত্রণ করা গেলে নবায়নের বকেয়া ১০ কোটি টাকা আদায় করা যেতো। কিন্তু বিসিসি’র ম্যাজিস্ট্রেট পদটি শুন্য থাকায় সেটাও সম্ভব হচ্ছে না। একই শাখার পরিদর্শক আতিকুর রহমান বলেন, নগরজুড়ে শৃঙ্খলায় যানবাহন চলতে বিসিসি’র প্রাক্তন তিন মেয়র বিভিন্ন সময় ৭৬২০টি লাইসেন্স দিয়েছিলেন। এখন এই লাইসেন্সের নবায়ন ফি বাবদই ১০ কোটি টাকা বকেয়া আছে। এই বকেয়া আদায় করে বৈধ যান চলাচল নিশ্চিত করা বিসিসি’র একার পক্ষে সম্ভব নয়। কেননা নগরীর যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করে বিএমপি’র ট্রাফিক বিভাগ। তারা সহায়তা করলে শৃঙ্খলা ফেরানো সম্ভব।এদিকে নগরীজুড়ে প্রকাশ্যে চলাচলকারী অবৈধ এসব যানের চালকরা বলছেন, ইচ্ছে থাকলেও তারা তাদের কাগজপত্র বৈধ করছেন না। এজন্য ট্রাফিক বিভাগের বিড়ম্বনাকে তারা দায়ী করেছেন। এক চালক বলেন, ‘আমি ৫ বছর থেকে পলাশপুর টু রুপাতলী রুটে ইজি বাইক চালাই। আমার লাইসেন্স আছে কিন্তু আমি নবায়ন করিনি। এর কারণ হলো নবায়ন করে কি লাভ, নবায়ন করে সঠিক অবস্থায়ও গাড়ি চালালে পুলিশে ধরে। নবায়ন না থাকলেও ধরে। পুলিশে ধরলেই জরিমানা। নবায়ন ফি দেবো আবার জরিমানাও দেবো, এটা হয় না।’ অন্যজন বলেন, ‘লাইসেন্স নবায়ন করলেও পুলিশের মামলা খেতে হয়, এজন্য অনেকেই নবায়ন করে না। আমার কাগজপত্রের বৈধতা থাকার পরেও নানা অজুহাতে মামলা খেতে হয়, এটাতো ঠিক না। এজন্য কেউ বৈধ হয় না।’বিসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রেজাউল বারি বলেন, ‘আমাদের অটোগুলোর মধ্যে কিছু নবায়ন করেছে। তবে বেশিরভাগই করেনি। অবৈধ সব যানবাহন ধরতে আমরা মেট্রোপুলিশের সাথে কথা বলছি। দ্রুত অভিযান শুরু হলে বৈধতার জন্য লাইসেন্স নবায়নেও প্রক্রিয়াও বাড়বে। এ ব্যাপারে শীঘ্রই কাজ শুরু হবে।’ নবায়ন ফি জমা না দেয়ার বিষয়ে বরিশাল মেট্রোপুলিশ কিছুই জানতো না বলে জানিয়েছে। পুলিশের বক্তব্য, ‘শীঘ্রই ব্যাপক অভিযান পরিচালনা করে বরিশাল নগরীকে অবৈধ যান মুক্ত করা হবে।’এ বিষয়ে বিএমপি কমিশনার মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা অভিযান করছি, জরিমানাও করছি, কিন্তু এগুলো বেশি হয়ে গেলে তখন প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করা হয়। লাইসেন্স নবায়ন না করে অবৈধ গাড়ি হওয়ার খবর আমাদের কাছে ছিলো না। আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নেবো।’ তিনি বলেন, ‘অবৈধতার মামলা হলে তারা জরিমানা দেয়। কিন্তু নবায়নের টাকা কেন যে দেয় না তা ভেবে দেখা দরকার।’ উল্লেখ্য, গত এক মাসে অবৈধ যানবাহনের কাছ থেকে বিএমপি পুলিশ এক লক্ষ টাকা জরিমানা আদায় করেছে।এনআই
Source: সময়ের কন্ঠস্বর