আর্থিক সমস্যা, প্রেমে ব্যর্থতা, পরীক্ষার খারাপ ফলাফল, মানসিক স্বাস্থ্য সংকট এবং পার্শ্ববর্তী নানা কারণে শিক্ষার্থীরা মানসিক চাপে ভোগেন। এর ফলে তারা বিষণ্নতা, স্মৃতিশক্তি হ্রাস, মাথা ব্যথা, হজমে সমস্যা এবং ঘুমের অসুবিধায় পড়েন। দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা মানসিক চাপ থেকে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ এমনকি মস্তিষ্কজনিত জটিল রোগের ঝুঁকিও বাড়ছে। অনেক ক্ষেত্রেই শিক্ষার্থীরা চরম হতাশায় আত্মহত্যার মতো ভয়ংকর সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।এই সংকট নিরসনে এবার শিক্ষার্থীদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য সেবা দিতে আত্মপ্রকাশ করেছে নতুন একটি প্ল্যাটফর্ম ‘স্কুল অব এসেনশিয়াল স্কিলস’। যেখানে শিক্ষার্থীরা গোপন পরিচয়ে তাদের ব্যক্তিগত সমস্যা লিখে পাঠাবেন, আর সেসব সমস্যা নিয়ে পরামর্শ দেবেন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, অভিজ্ঞ শিক্ষক ও ক্যারিয়ার মেন্টররা।এই উদ্যোগটির পরিকল্পনাকারী বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মাহমূদুল হাসান শিকদার এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ‘২০১৩ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বাকৃবিতে কর্মরত থাকাকালে বহু শিক্ষার্থী ব্যক্তিগত সমস্যার কথা বলতে আমার কাছে আসত। আমি মন দিয়ে তাদের কথা শুনতাম, সময় দিতাম, আর প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিতাম। কেউ হয়তো হাসিমুখে ফিরে যেত, কেউ চুপচাপ। এরপর আমি জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থায় যোগ দিই। তবে আবার বাকৃবিতে ফিরে এসে দেখলাম, শত শত শিক্ষার্থী আমার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছে। তখনই ভাবলাম, একটি প্ল্যাটফর্ম দরকার। যেখানে শিক্ষার্থীরা সমস্যাগুলো গোপনে শেয়ার করতে পারবেন, আর আমরা প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে পারব।’অধ্যাপক শিকদার আরও জানান, ‘প্ল্যাটফর্মটির নাম রাখা হয়েছে স্কুল অব এসেনশিয়াল স্কিলস। এখানে সপ্তাহে একদিন ফেসবুক বা ইউটিউব লাইভের আয়োজন থাকবে। সেখানে অভিজ্ঞ শিক্ষক, মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং ক্যারিয়ার মেন্টর থাকবেন। যেখানে শিক্ষার্থীদের সমস্যা নিয়ে আলোচনা হবে, সমাধান দেওয়া হবে। হয়তো একজন লিখে পাঠাবে, আর সেটি অন্য কারও উপকারেও আসবে। আমাদের লক্ষ্য, শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ থেকে মুক্তি দিয়ে একটি সুস্থ ও সচেতন প্রজন্ম গড়ে তোলা।’তিনি আরও জানান, শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নের লক্ষ্যে এর আগেও আমরা বিভিন্ন সেমিনার আয়োজন করেছি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠান না থাকায় আমরা এক নতুন উদ্যোগ নিয়েছি। বর্তমানে একটি সফটওয়্যার তৈরির কাজ চলছে, যেখানে শিক্ষার্থীরা নির্ভয়ে নিজেদের প্রশ্ন ও সমস্যা তুলে ধরতে পারবে। এই প্ল্যাটফর্ম শুধু মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক পরামর্শেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। এখানে শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার পরিকল্পনা নিয়েও দিকনির্দেশনা দেওয়া হবে। তারা ভবিষ্যতে কী করতে চায়, কোন পথে এগোতে চায়, সে বিষয়েও সহায়তা করা হবে। আশা করছি, আগামী মাস থেকেই পূর্ণ শক্তিতে এই কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হবে।এসআর
Source: সময়ের কন্ঠস্বর