দেশে আমিষের অন্যতম প্রধান উৎস হলো মুরগি। মুরগিকে কেন্দ্র করেই দেশে ক্ষুদ্র ও মাঝারি পরিসরের নানা ধরনের শিল্প গড়ে উঠেছে। তবে সঠিক জীব-নিরাপত্তা না মানার কারণে মুরগির মধ্যে বিভিন্ন ধরনের জীবাণুর সংক্রমণ দেখা দেয়।সম্প্রতি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) গবেষকরা মুরগির দেহে নতুন এক ধরনের জীবাণু শনাক্ত করেছেন। এই জীবাণুর উপসর্গগুলো রানীক্ষেত ও বার্ড ফ্লুর মতো হলেও এর জিনোটাইপ ও সেরোটাইপ সম্পূর্ণ ভিন্ন।গবেষকরা এই জীবাণুর দুটি সেরোটাইপ—৮বি এবং ১১ আবিষ্কার করেছেন। এর মধ্যে সেরোটাইপ ১১-এর প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি। সাধারণত দুই সপ্তাহ বয়সী ব্রয়লার মুরগির এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায় । শুরুতে মুরগির খাওয়ার পরিমাণ কমে যায় ও চলাফেরা কমে হয়ে যায় । তিন সপ্তাহ বয়সে রোগের প্রকোপ বাড়লে ডায়রিয়া, অবসন্নতা এবং উৎপাদন হ্রাস পেতে দেখা যায়। পাশাপাশি লিভার ও কিডনিতে বিভিন্ন আকারের গুটি তৈরি হয়। কয়েক দিনের মধ্যেই মুরগি মারা যায়। যা খামারিদের জন্য বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।গবেষকরা নতুন এই রোগটির নাম দিয়েছেন ইনক্লুশন বডি হেপাটাইটিস (আইবিএইচ)। যা ফাউল অ্যাডেনোভাইরাস সংক্রমণের ফলে হয়ে থাকে।এই বিষয়টি প্রধান গবেষক বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড হাইজিন বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক মো. আলিমুল ইসলাম এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন । সহযোগী গবেষক হিসেবে একই বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. তোফাজ্জল হোসেন, অধ্যাপক ড. মো. গোলজার হোসেন, প্যাথলজি বিভাগের অধ্যাপক ড রোকসানা পারভীন এবং বাকৃবির স্নাতকোত্তর পর্যায়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছেন। জীবাণুটির সম্পূর্ণ জিনোম সিকোয়েন্স আবিষ্কারের জন্য এখনও গবেষণা চলমান রয়েছে। এই গবেষণার অর্থায়ন করেছে বাস-ইউএসডিএ। সম্প্রতি গবেষণা প্রবন্ধটি ফ্রন্টিয়ারস ইন মাইক্রোবায়োলজি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।অধ্যাপক আলিমুল ইসলাম জানান, ২০২৩ সালের দিকে দেশে হঠাৎ করে অজানা জীবাণুর সংক্রমণে কমবয়সী ব্রয়লারের মৃত্যু ব্যাপক হারে বেড়ে যায়। তখন জীবাণুটি শনাক্ত করতে গবেষণা শুরু করা হয়। দেশের সাতটি আক্রান্ত জেলার ৮০টি বাণিজ্যিক খামার থেকে ৮৭টি জীবিত মুরগি সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে ৪০টি নমুনায় পিসিআর এবং ২২টি ডিমের ভ্রূণ কালচারের মাধ্যমে জীবাণু শনাক্ত করা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, এই জীবাণু ডিমের মাধ্যমে এবং এক মুরগি থেকে আরেক মুরগির সংর্স্পশে সংক্রমিত হতে পারে। তবে খাবারের মাধ্যমে মুখ দিয়ে প্রবেশ করলে এর প্রকোপ বেশি দেখা যায়।তিনি আরও জানান, প্রাথমিকভাবে এই রোগের একটি ভ্যাকসিন উদ্ভাবন করা হয়েছে। যা জীবাণু প্রতিরোধে সন্তোষজনক ফলাফল দিয়েছে। তবে ভ্যাকসিনের উচ্চতর গবেষণা এখনও চলমান। গবেষণার কার্যক্রম শেষ হলে তা আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশ করা হবে। এই ভ্যাকসিন স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ডিম ব্যবহার করেই তৈরি করা সম্ভব। একটি ডিম থেকে সর্বোচ্চ ২১ ডোজ ভ্যাকসিন প্রস্তুত করা যায়। পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিনের অ্যান্টিজেনের সঙ্গে ভাইরাসের অ্যান্টিজেনের মিল থাকায় তা বেশি কার্যকর এবং দ্বিগুণ অ্যান্টিবডি উৎপাদনে সক্ষম। এটি অনেক সাশ্রয়ীও বটে।স্বাস্থ্যঝুঁকি প্রসঙ্গে অধ্যাপক আলিমুল ইসলাম জানান, এই জীবাণু প্রাণী থেকে মানুষের সংক্রমণযোগ্য নয়। ফলে জনস্বাস্থ্যের কোনো ঝুঁকি নেই। মাংস ও ডিম ভালোভাবে সিদ্ধ করলেই জীবাণু ধ্বংস হয়ে যায়। খামারিদের লাভবান হতে আইবিএইচ ভ্যাকসিনপ্রাপ্ত হ্যাচারি থেকে বাচ্চা সংগ্রহের পরামর্শ দেন তিনি।এসআর
Source: সময়ের কন্ঠস্বর