পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের অভিযোগে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে দায়ের করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় জামায়াত সমর্থক ও নির্দলীয় ব্যক্তিদেরও আসামি করায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে।গত ৫ জুন পঞ্চগড় সদর উপজেলার ইসলামবাগ এলাকার মো. জুয়েল রানা দেবীগঞ্জ থানায় ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করেন। এতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ ৭২ জনের নাম উল্লেখ এবং ৩০০ থেকে ৫০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়।এর আগে ১৬ মে হোয়াটসঅ্যাপে একটি গ্রুপ মিটিংয়ের অডিও ভাইরাল হয়। যেখানে উপজেলা কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল আলম এমুকে, এলাকার বিএনপি-জামায়াত নেতাদের বাড়ি ও গ্রামীণ ব্যাংকের শাখায় অগ্নিসংযোগের পরিকল্পনার কথা বলতে শোনা যায়।মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, আসামিরা রাষ্ট্রবিরোধী গোপন বৈঠক, সহিংসতা সৃষ্টি ও ইসলামী ব্যাংক ও বিএনপি-জামায়াত নেতাদের বাড়িতে হামলার ষড়যন্ত্রে যুক্ত ছিলেন। তবে তালিকায় থাকা কয়েকজনের রাজনৈতিক পরিচয় ঘিরে প্রশ্ন উঠেছে।অনুসন্ধানে জানা গেছে, ৪০ নম্বর আসামি মোকছেদুল ইসলাম ও ৪১ নম্বর আসামি বেলাল হোসেন জামায়াত সমর্থক। অভিযোগ উঠেছে, জমি বিরোধের জেরে তাদের নাম মামলায় যুক্ত হয়েছে।মোকছেদুল ইসলাম জানান, ‘‘অনেক আগে গাজকাটী বাজারের পাশে জমি কিনে বাড়ি করেছি। সেই জমি নিয়ে বিরোধ ছিল। বিএনপির কয়েকজন নেতা এসে বলেছে, সভাপতির সঙ্গে দেখা করলে নাম কাটা যাবে, না হলে যেকোনো সময় গ্রেপ্তার করা হবে। আমি তো জামায়াত করি, আমার নাম আওয়ামী লীগের মামলায় কেন থাকবে?’’বেলাল হোসেনের দাবি, ‘‘আমি ২০০৫ সাল থেকে জামায়াত করি। আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততা নেই। অথচ মামলায় নাম দেওয়া হয়েছে।’’এছাড়া মামলার ৩২ নম্বর আসামি দলিল লেখক আব্দুল হাকিম বাক্কি ও ২৮ নম্বর আসামি হেলাল শেখেরও রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নেই বলে জানা গেছে।আব্দুল হাকিম বাক্কির ছেলে মাজেদুল ইসলাম ইমু সরকার বলেন, ‘‘বাবা পেশাদার দলিল লেখক। শালিসে বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে রায় দেয়ায় মামলায় নাম এসেছে।’’হেলাল শেখ জানান, ‘‘২০২৩ সাল থেকে দেবীগঞ্জের বাইরে ব্যবসা করি। সৈয়দপুর উপজেলা যুবলীগের কমিটির ফটোশপে এডিট করা কাগজে আমার নাম বসিয়ে মামলায় যুক্ত করা হয়েছে। গাজকাটীর জমি বিরোধের কারণে একটি মহল এসব করছে।’’জামায়াত কর্মীদের নাম অন্তর্ভুক্ত করায় স্থানীয় জামায়াত নেতাকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। উপজেলা জামায়াত সেক্রেটারি মুহাম্মদ বেলাল হোসেন বলেন, ‘‘দুই সমর্থককে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মামলায় যুক্ত করা হয়েছে। তাদের নাম প্রত্যাহারের দাবি জানাই।’’এ বিষয়ে বাদী মো. জুয়েল রানা বলেন, ‘‘যাদের নাম দেওয়া হয়েছে, তারা আগে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ছিল। পরবর্তীতে হয়তো দল বদল করেছে।’’মামলায় যাদের স্বাক্ষী করা হয়েছে তাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও এই বিষয়ে কেউ কথা বলতে রাজি হননি।এইদিকে এই মামলাকে ঘিরে আওয়ামী লীগের মধ্যেও অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। আওয়ামী লীগের এক পক্ষের দাবি সম্প্রতি দেবীগঞ্জে দেওয়াল লিখন, লিফলেট বিতরণের সাথে জড়িতদের সম্পর্কে পুলিশের নিকট তথ্য থাকলেও তাদের নাম মামলায় অজ্ঞাত কারণে দেওয়া হয়নি।তারা জানায়, আসামীদের মধ্যে অনেকে যারা গত ১৬ বছর নামকাওয়াস্তে আওয়ামী লীগের সাথে ছিল তাদের আসামী করা হয়েছে। আর যারা আওয়ামী লীগের ব্যক্তি বিশেষের লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে কাজ করছে এবং এখনো দলের নামে এলাকায় থেকে নানান বিক্ষিপ্ত কার্যক্রম পরিচালনা করছে তাদের কারো নাম নেই। অথচ কল রেকর্ড কেলেঙ্কারিতে তারাই জড়িত।এ বিষয়ে দেবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ সোয়েল রানা বলেন, বিষয়টি আমরাও অবগত হয়েছি। মামলা এখনও তদন্তাধীন পর্যায়ে রয়েছে। কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয় সে বিষয়ে আমরা সতর্ক রয়েছি।পিএম
Source: সময়ের কন্ঠস্বর