বরগুনার তালতলী উপজেলায় বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষে নয়নাভিরাম অপরূপ সৌন্দর্য নিয়ে জেগে আছে ‘শুভ সন্ধ্যা’ সমুদ্র সৈকত। এ সমুদ্র সৈকতের মূল আকর্ষণ ঝাউবন। কিন্তু প্রাকৃতিক দূর্যোগ, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও অবৈধভাবে বালু উত্তোলনসহ নানাবিধ কারণে সাগরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে দৃশ্যনন্দন ঝাউবন ও সমুদ্র সৈকত। এতে হুমকির মুখে পড়েছে ভূ-প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে অপার সম্ভাবনাময় ‘শুভ সন্ধ্যা’ সমুদ্র সৈকত নামক এ পর্যটন স্পট। সৈকত রক্ষায় এখনই জরুরি পদক্ষেপ না নেওয়া হলে ‘শুভ সন্ধ্যা’ সমুদ্র সৈকত বিলীন হয়ে যাবে বঙ্গোপসাগরের অতল গহ্বরে।বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের নলবুনিয়া এলাকায় পায়রা নদী সংলগ্ন চরে বঙ্গোপসাগরের মোহনায় অবস্থিত ‘শুভ সন্ধ্যা’ সমুদ্র সৈকত। যার একদিকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্বাসমূলীয় (ম্যানগ্রোভ) টেংরাগিরি বা ফাতরার বন। অপরদিকে সীমাহীন বঙ্গোপসাগর। এটি ২০১৭ সালের ১ ডিসেম্বর ২৫০ হেক্টর বনভূমি নিয়ে পর্যটন স্পট হিসেবে যাত্রা শুরু করে। এ সৈকতে ২০০৭ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ১৫ বছরে মোট ৬৫ হেক্টর জমিতে বন বিভাগ ঝাউ গাছের চারা রোপণ করেছে। এতে সৈকতে তৈরি হয় সবুজ বেষ্টনী। সবুজের সমারোহে সৈকতে এক মনোরম দৃশ্য ফুটে ওঠে। কিন্তু ২৫০ হেক্টর এ বনভূমি থেকে ২০১৭ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত ৮ বছরে প্রাকৃতিক দূর্যোগ, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে ১৮০ হেক্টর বনভূমি সাগর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখন মাত্র ৭০ হেক্টর বনভূমির ওপর আছে ‘শুভ সন্ধ্যা’ সমুদ্র সৈকত। এদিকে বনভূমি সাগরে বিলীন হওয়ায় ৬৫ হেক্টর ঝাউগাছ থেকে ২৫ হেক্টর ঝাউগাছ বিলীন হয়ে গেছে। এখন ৪০ হেক্টর ঝাউগাছ আছে।সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বঙ্গোপসাগরের আছড়ে পড়া তীব্র ঢেউয়ের তোড়ে সৈকতের বিভিন্ন স্থানে বালু সরে গিয়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে ঝাউগাছের শিকড় থেকে মাটি সরে গিয়ে হেলে পড়ে মারা যাচ্ছে গাছগুলো। সৈকতের বিশাল এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য গাছের মূল এবং উপচে পড়ে আছে অসংখ্য ঝাউগাছ। এতে সৈকত হারাচ্ছে তার প্রকৃতিক সৌন্দর্য। এভাবে ধীরে ধীরে ভাঙনে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে ‘শুভ সন্ধ্যা’ সমুদ্র সৈকত। এর ফলে দিনে দিনে পর্যটকদের আকর্ষণ কমে যাচ্ছে।পটুয়াখালী উপকূলীয় বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা ধরনের প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট কারণে বনভূমি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে বনভূমি রক্ষা ও বন বৃদ্ধির জন্য উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালী ও বরগুনায় কয়েক হাজার হেক্টর বনায়নের জন্য ‘ইকো ট্যুরিজম উন্নয়ন’ নামে একটি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে বনভূমি রক্ষা, বনভূমি বৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা পাবে।’তালতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উম্মে সালমা বলেন, ‘সৈকত রক্ষার জন্য পানিউন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে একটি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন পেলে সৈকত রক্ষার জন্য নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এছাড়াও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যটকদের জন্য নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।’এসআর
Source: সময়ের কন্ঠস্বর