কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে গ্রাম বাংলার পুরাতন ঐতিহ্য হ্যাঙ্গা দিয়ে মাছ ধরার হিড়িক পড়েছে। সম্প্রতি সময়ে উপজেলার নাওডাঙ্গা গ্রামের একটি দোলায় মাছ ধরার অসাধারণ দৃশ্যটি চোখে পড়ে যায়। ওই দোলায় বোরো ধানের জমিতে ট্রাক্টর দিয়ে চাষ করার সময় স্থানীয় শিশু-কিশোরসহ বিভিন্ন বয়সের প্রায় ১০ থেকে ২০ জন মিলে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে হ্যাঙ্গা জাল দিয়ে মাছ শিকার করছেন।এ অঞ্চলে মাছ ধরার এই উপকরণটি কেউ বলছেন ‘হ্যাঙ্গা জাল’ আবার কেউ বলেন ‘ঠেলা জাল’। এই ত্রিকোণা বিশিষ্ট এজাল দিয়ে মাছ ধরার চিত্র গ্রামবাংলার একটি প্রাচীনতম ঐতিহ্য। বর্ষাকাল এলেই নদ-নদীর তীরবর্তী এলাকাসহ প্রত্যেকটি গ্রামে গ্রামে এ জালের চাহিদা বেড়ে যায়। এই জাল শিশু, তরুণ থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষজন মাছ ধরতে অত্যন্ত স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।ধরলা ও বারোমাসিয়া (বাণিদাহ) নদী পাড়ের কিছু লোকজন নদীতে হ্যাঙ্গা জাল দিয়ে মাছ শিকার করে নিজেদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। উপজেলার নাওডাঙ্গা এলাকার কনক চন্দ্র রায় বলেন, ‘হ্যাঙ্গা জাল তিন ধরনের হয়ে থাকে। ছোট, মাঝারি ও বড়। ছোট হ্যাঙ্গা দিয়ে শিশুরা এমনকি গ্রামের নারীরাও মাছ শিকার করতে পারে। মাঝারি হ্যাঙ্গা দিয়ে তরুণরা মাছ ধরে আর বড় হ্যাঙ্গা দিয়ে স্বাভাবিক বয়সের মানুষ এবং পেশাজীবিরা মাছ ধরে থাকে। একটি হ্যাঙ্গা জাল তৈরি করতে সর্বনিম্ন তিনশ থেকে দেড় হাজার টাকা খরচ হয়ে থাকে বলে জানান তিনি। তিনি আরও জানান, ‘আমাদের বাড়ির আশেপাশে কোন নদী নেই। আমরা বর্ষা মৌসুমে বাড়ির সামনে দোলায় হ্যাঙ্গা ও চটকা জাল দিয়ে মাছ ধরে থাকি। গত রবিবার শেষ বিকালে ধানের জমি ট্রাক্টর দিয়ে চাষ করা শুরু করলে মুহূর্তের মধ্যে শিশু-কিশোরসহ কমপক্ষে ২০ থেকে ২৫ জন একসঙ্গে আনন্দের সাথে মাছ ধরেছি। এখন আর আগের মতো দেশি মাছ নেই। তাই দেড় দুই ঘন্টায় আড়াইশ গ্রাম মাছ পেয়েছি।’একই এলাকার বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘হ্যাঙ্গা জাল দিয়ে মাছ ধরা পুরাতন একটি ঐতিহ্য। সাধারণত দেশি জাতের মাছ ধরা হয়ে এ জাল দিয়ে। বৃষ্টির পানিতে যখন গ্রামের খালে বিল ও ডোবা নালা ভরে যায়, তখন আমরা হ্যাঙ্গা দিয়ে মাছ ধরি। তবে এখন আর আগের মতো দেশি মাছ নেই। অনেক দেশি মাছ এখন দোলায় পাওয়া যায় না। দেড় ঘন্টা মাছ ধরে ৩শ গ্রাম পুটি, চ্যাংটি ও গদা মাছ পাইছি।’চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী নিলয় চন্দ্র রায় বলেন, ‘হ্যাঙ্গা জাল দিয়ে মাছ ধরার মজাই আলাদা। খুব ভালো লাগে, আনন্দ লাগছে। আজ এখানে প্রায় আধা কেজি মাছ পেয়েছি।’নাওডাঙ্গা স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল হানিফ সরকার জানান, ‘এখনতো আগের মতো দেশি প্রজাতির মাছের সংখ্যা কমেছে। একটা সময় আমি নিজেও বাড়ির পাশে দোলা ও ডোবায় গ্রাম বাংলার পুরাতন ঐতিহ্য হ্যাঙ্গা দিয়ে মাছ ধরেছি। বর্ষাকালে বাড়ির আশেপাশে চারদিকে পানি উঠায় মাছের বিচরণ বেড়ে যায়। ছোটবেলা হ্যাঙ্গা জাল দিয়ে মাছ ধরার অভ্যাস গড়ে উঠে তাদের।’ এসআর
Source: সময়ের কন্ঠস্বর