ঈদুল আজহার পরপরই চট্টগ্রামের আড়তগুলোতে কুরবানির পশুর কাঁচা চামড়া কেনাবেচা শুরু হলেও বাজারে বিরাজ করছে চরম অস্থিরতা। সরকার নির্ধারিত দামের তুলনায় ঢাকার ট্যানারি মালিকরা প্রতি বর্গফুটে ১৫-২০ টাকা কম দামে চামড়া কিনছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় আড়তদাররা। এতে করে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা।চলতি বছর সরকার লবণযুক্ত গরুর কাঁচা চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ৫৫-৬০ টাকা নির্ধারণ করলেও চট্টগ্রামে কার্যত প্রতি বর্গফুট চামড়া বিক্রি হচ্ছে ৩৮-৪০ টাকায়। আড়তদাররা বলছেন, ট্যানারি মালিকরা জোটবদ্ধভাবে কম দামে চামড়া কিনছেন, যা এক ধরনের অঘোষিত কারসাজি।চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার সমিতির নেতা মুসলিম উদ্দিন সময়ের কন্ঠস্বর-কে বলেন, ‘আমরা প্রতি বছর ধারদেনা করে চামড়া কিনি। সরকার যে দাম নির্ধারণ করেছে তা বাস্তবে কার্যকর হয় না। ঢাকার ট্যানারিরা আমাদের কাছ থেকে জোর করে কম দামে চামড়া নিয়ে যাচ্ছে। এতে আমরা চরম লোকসানে পড়ছি।’চট্টগ্রামে এবারের ঈদুল আজহায় প্রায় ৪ লাখ ১৫ হাজার পশুর চামড়া সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার চামড়া। চামড়াগুলো মূলত নগরের আতুরার ডিপো, মুরাদপুর, বিবিরহাট, হামজারবাগসহ বিভিন্ন আড়তে মজুত আছে।সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, চামড়ার আড়তগুলোতে ঢাকার বিভিন্ন ট্যানারির প্রতিনিধিরা সরাসরি এসে চামড়া কিনছেন। শুক্রবার থেকে আতুরার ডিপো এলাকা ছিল জমজমাট। আরএসএম লেদার প্রথমদিনেই কিনেছে প্রায় ১৫ হাজার চামড়া। প্রতিবছর ১৫ থেকে ২০ হাজার চামড়া ক্রয়কারী খোকন ট্যানারি ও পান্না লেদারের মালিক আকবর হোসেন এবারও সমান পরিমাণ সংগ্রহ করবেন বলে জানা গেছে।চট্টগ্রামে ১৯৯০ সালের দিকে ২২টি ট্যানারি থাকলেও বর্তমানে টিকে আছে মাত্র একটি—রিফ লেদার। প্রতিষ্ঠানটি এরই মধ্যে ৫০ হাজার চামড়া সংগ্রহ করেছে। বাকি ট্যানারিগুলো বন্ধ হয়ে গেছে মূলত পরিবেশবান্ধব বর্জ্য পরিশোধনাগার (ইটিপি) স্থাপন করতে না পারা ও ধারাবাহিক লোকসানের কারণে।চট্টগ্রামে চামড়া কেনাবেচার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ছোট আকারের গরুর চামড়া বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৪০০ টাকায়, মাঝারি আকারের গরুর চামড়া ৫০০-৬০০ টাকা, বড় আকারের গরুর চামড়া ৬০০-৭০০ টাকায় এবং অতিরিক্ত গরমে নষ্ট হয়েছে ৫০০-৬০০ পিস চামড়া।চট্টগ্রামে ট্যানারি না থাকায় এখানকার আড়তদারদের পুরোপুরি নির্ভর করতে হয় ঢাকার ট্যানারিগুলোর ওপর। ঢাকায় বর্তমানে ২২৫টির মতো ট্যানারি রয়েছে। এর মধ্যে ভুলুয়া ট্যানারি, খোকন লেদার, সালমা ট্যানারি, মহুয়া ট্যানারি, পান্না লেদারসহ প্রায় ২০টি ট্যানারি নিয়মিত চট্টগ্রাম থেকে চামড়া কিনে থাকে।চট্টগ্রামের এক আড়তদার সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘প্রত্যেক বছর মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে চামড়া সংগ্রহ করেন। সেই চামড়া ৩-৪ হাত ঘুরে আমাদের আড়তে আসে, তখন দামও বেড়ে যায়। অথচ আমরা সেগুলো যে দামে কিনছি, সেই দামে বিক্রি করতে পারছি না। ফলে বাজারে ভারসাম্য থাকছে না।’আরডি
Source: সময়ের কন্ঠস্বর