বর্ষার শুরুতেই টাঙ্গাইল সদর উপজেলায় যমুনা নদীর তীব্র ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ ৫শতাধিক পরিবার। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ গয়লা হোসেন দাখিল মাদ্রসা, ডেকিয়া বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ গয়লা হোসেন নুরানি মাদ্রাসা, দক্ষিণ গয়লা হোসেন জামে মসজিদ, দক্ষিণ গোলাশন কবরস্থান এবং আব্দুল মান্নান সেতু। জানা যায়, প্রায় ৫৩ বছর আগে দক্ষিণ গয়লা হোসেন দাখিল মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন মৃত খায়রুন নেছা। সেই সময় থেকে এই প্রতিষ্ঠানটি যমুনা নদীতে প্রায় ১৪ বার ভাঙ্গন কবলে পড়ে। বর্তমানে এ মাদ্রাসাটি ওমরপুর এলাকায় অবস্থিত। সেখানেও ভাঙ্গনের আতঙ্কে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। অপরদিকে, একই এলাকায় মৃত হাছেন হাজী ডেকিয়া বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। সেই প্রতিষ্ঠানটিও প্রায় ১৫ থেকে ১৬ বার এই যমুনা নদীতে ভাঙ্গনের কবলে পড়ে। বর্তমানে এটি ওমরপুরে অবস্থিত। এখানেও ভাঙ্গনের আতঙ্কে রয়েছে। যার ফলে বন্যা হলেই প্রতিবছর স্থানীয়রা ভাঙ্গন প্রতিরোধের জন্য মানববন্ধন করে থাকে। এবছরও ভাঙ্গন প্রতিরোধের জন্য মানববন্ধন করেছে। স্থানীয় আনোয়ার হোসেন জানান, যমুনা নদীতে কয়েকবার ভাঙ্গনের পর ভিটেমাটি হারিয়ে ওমরপুর নদীর কাছাকাছি বাড়ি ঘর করেছি। সে বাড়িঘরও আজ ভাঙ্গন আতঙ্কে। এই বাড়ি যদি ভেঙে যায়, অন্যত্র বাড়ি করার মতো জায়গা নাই। বাড়ি করার জন্য মানুষ এখন আর জায়গা দিতে চায় না। এই বাড়িটি অনেক কষ্টে অল্প কিছু টাকা দিয়ে জায়গার মালিকের কাছ থেকে লিজ নিয়ে রয়েছি। ওমরপুর গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ নদী ভাঙ্গনের শিকার। এদের পূর্বপুরুষরা যমুনা নদীর ভাঙ্গনে সর্বস্বান্ত হয়েছে। বর্তমানে ওমরপুর গ্রামে যারা রয়েছেন, সবাই ভিটেমাটি হারা। এদের পূর্বপুরুষের এক সময় শত শত বিঘা জমির মালিক ছিল। আমার ৯০ বছর বয়সে আমি পাঁচবার ঘরবাড়ি ভাঙ্গনের শিকার হয়েছি। ছয়বারের মাথায় ওমরপুর এসে বাড়ি নিয়েছি। স্থানীয় আবুল হোসেন জানান, আমার বাবা সহ আমি ১৩ বার এই যমুনা নদীর ভাঙ্গনের শিকার হয়েছি। একটা পরিবার ১৩ বার যদি ভাঙ্গনের শিকার হয়, তাহলে তার আর কি থাকে? এবার আর কোন উপায় নাই, বাড়ি সরানোর মতো। মানুষ এখন লাভের উপর জায়গা দিতে চায় না। নদী ভাঙ্গা মানুষ জায়গা কেনার মতো সামর্থ্য না থাকায় তারা লাভের উপর জায়গা নিয়ে বাড়িঘর করে থাকে। যার ফলে যমুনা নদীর পাড়ের মানুষ দূরে কোথাও কোন জায়গা কেনার সামর্থ্য না থাকায় বাড়িঘর করতে পারে না। এই জন্য নদী পাড়ের মানুষ নদীর কিনারেই বসবাস করে। যে কারণে তারা প্রতিবছরই নদীর ভাঙ্গনে শিকারসহ বন্যা আতঙ্কে থাকে। আমরা যেহেতু যমুনা নদী ভাঙ্গা গড়ার সাথে একাকার হয়ে থাকি, সে কারণে সরকারের কাছে আমাদের দাবি, ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় দ্রুত ভাঙ্গন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়া। ওমরপুর গ্রামের আইয়ুব আলী জানান, পানাকুড়া, কেশবমাইজাল, চরপৌলি, উত্তর চরপৌলি, নয়াপাড়া, দশাখা, তেঁতুলিয়া, মাকরখোল, রশিদপুর, চগ্গপাল, বারবালা সহ প্রায় ৩০ থেকে ৩৫টি গ্রাম যমুনা নদী ভাঙ্গনে সদর উপজেলার মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে। আমি ৮৮ সাল থেকে দেখে আসছি এ রাক্ষুসী যমুনার ভয়াবহতা। আমি নিজেই আমার ভিটে বাড়ি সাতবার ভাঙ্গনে ঘরবাড়ি সরিয়েছি। তাই সরকারের কাছে আবেদন, দ্রুত জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙ্গন প্রতিরোধ করার জন্য। আনোয়ার হোসেন জানান, আমাদের বাড়ি ছিল গয়লা হোসেন, সেখান থেকে ভাঙতে ভাঙতে ওমরপুর এসে পারি জমিয়েছি। এখন পরের জমিতে বাড়ি ঘর করে রয়েছি। এই বাড়ি ভাঙলে জায়গা পাওয়া কষ্ট হবে। বর্তমানে জায়গার মালিকরা বাড়িঘর করতে দেয় না। একসময়ে আমার বাপ-দাদার খাঁড়া খাঁড়া জমি ছিল। আজকে আমরা জমি হারা। আমাদের বাপ-দাদারা জমির রাজত্ব করতেন। এই যমুনা আমাদেরকে সেই রাজত্ব থেকে ফকির বানিয়ে দিয়েছে। আজকে অন্যের কাছে জায়গার জন্য ধরনা ধরতে হয়। আমাদের জায়গা জমি ভেঙে যাওয়া যমুনা নদীতে শুকনো মৌসুমে বাদামের চাষ করি। যার ফলে যমুনা নদীর কিনারে বসবাস করি। দক্ষিণ গয়লা হোসেনের বাসিন্দা আব্দুল বাতেন জানান, যমুনা নদীর ভাঙ্গনে আমার নানার বংশধররা ছড়িয়ে ছিটে পড়েছে। আমার নানার অনেক জমি ছিল। সব জমি ভেঙে গেছে। মায়ের কাছে শোনা, নানার বাড়ি ১৪ বার ভেঙেছে। শেষে আমরা নানার বাড়ি থেকে ১৫ বারে টাঙ্গাইল শহরে বাড়ি করেছি। সবশেষ সরমা এসে বাড়ি করে সেখান থেকে শহরে বাড়ি করি। আমার নানা মারা যাওয়ার পর মাও খালারা ৩ জন, তারা প্রত্যেকেই ১০০ বিঘা করে জমি পেয়েছিল। সে জমি আজ যমুনা নদীতে। আমার নানার বাড়িতে পালিত সন্তান আজিম চৌধুরীকে ৭৫ বিঘা জমি লেখে দেওয়ার কারণে আজিমকে চৌধুরী বলে ডাকতো এলাকাবাসী। কাকুয়া ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন জানান, যমুনার ভাঙ্গন আতঙ্কে কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ ৫ শতাধিক পরিবার রয়েছে। এছাড়াও বেশ কিছু কৃষি আবাদি জমি রয়েছে। এই গ্রামের প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকায় যদি জিও ব্যাগ ফেলা হয়, তাহলে ভাঙ্গন রোধ হবে। যমুনার পানি বাড়লে ও কমলে তীব্র ভাঙ্গন দেখা দেয়। দ্রুত সরকারের কাছে আবেদন জানাই ভাঙ্গন প্রতিরোধ করার জন্য। এ বিষয়ে টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মতিউর রহমান জানান, কাকুয়া ইউনিয়নে যে এলাকায় ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে, সে এলাকায় আমরা ভাঙ্গন প্রতিরোধে প্রতিরক্ষা কাজ করতে দ্রুত চেষ্টা করছি। ভাঙ্গন কবলিত এলাকার জন্য অনেক আগেই চাহিদা দেওয়া হয়েছে। সেটি দ্রুতই বরাদ্দ পেয়ে যাবে। আশা করছি ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যেই অনুমোদন হয়ে যাবে। টাঙ্গাইল সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহিদা আক্তার জানান, ইতিমধ্যেই আমি উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন পরিদর্শন করেছি। বিশেষ করে যে সমস্ত ইউনিয়নে যমুনা নদীর ভাঙ্গন কবলিত এলাকা রয়েছে, সে সমস্ত ইউনিয়নের বিশেষ নজর রয়েছে।এসআর

Source: সময়ের কন্ঠস্বর

সম্পর্কিত সংবাদ
নিয়োগ দেবে মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন
নিয়োগ দেবে মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন

বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনে ১২টি পদে ৩৮ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। আগ্রহীরা আগামী ১১ জুন পর্যন্ত অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করতে Read more

রাজধানীতে ছিনতাইয়ের চেষ্টাকালে আটক ৫
রাজধানীতে ছিনতাইয়ের চেষ্টাকালে আটক ৫

রাজধানীর তেজগাঁও, মিরপুর ও উত্তরা হাউজ বিল্ডিং এলাকায় ছিনতাইয়ের চেষ্টাকালে ৫ পেশাদার ছিনতাইকারীকে আটক করা হয়েছে। এসময় তাদের কাছ থেকে Read more

এবার হরমুজ প্রণালি বন্ধের অনুমোদন দিলো ইরানের পার্লামেন্ট
এবার হরমুজ প্রণালি বন্ধের অনুমোদন দিলো ইরানের পার্লামেন্ট

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হামলার জেরে এবার হরমুজ প্রণালি বন্ধ করার অনুমোদন দিয়েছে ইরানের পার্লামেন্ট।তবে এই  অনুমোদনের পর রোববার (২২ জুন) দেশটির Read more

আম গাছ থেকে পরে পুলিশ কনস্টেবলের মৃত্যু
আম গাছ থেকে পরে পুলিশ কনস্টেবলের মৃত্যু

সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে থানার গাছ থেকে আম পারার সময় পরে গিয়ে এক পুলিশ কনস্টেবলের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার সকালে এ ঘটনা ঘটেছে। Read more

অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কাজ করতে চায় দক্ষিণ কো‌রিয়া
অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কাজ করতে চায় দক্ষিণ কো‌রিয়া

শা‌ন্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের স‌ঙ্গে কাজ কর‌তে চায় দ‌ক্ষিণ কো‌রিয়া।

আমরা নিরপেক্ষ নই ,    জনতার পক্ষে - অন্যায়ের বিপক্ষে ।    গণমাধ্যমের এ সংগ্রামে -    প্রকাশ্যে বলি ও লিখি ।   

NewsClub.in আমাদের ভারতীয় সহযোগী মাধ্যমটি দেখুন