ঈদের নামাজ আদায় ও পশু কোরবানির মাধ্যমে বিদায় পবিত্র ঈদুল আজহা। নবীপ্রেমিকেরা মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য পশু ক্রয় করে কোরবানি দিয়েছে। আমরা বড় পশু ক্রয় করে কোরবানি দিয়ে থাকি, কিন্তু নিজের মনে লুকিয়ে থাকা যে পশুত্বের ভাব রয়েছিল, সেটিকে আমরা আজ পর্যন্ত কোরবানি দিতে পেরেছি কি? কোরবানির আগে আমার মনে যে অহংকার, হিংসা, দেমাক ছিল, কোরবানির পর তা রয়েই গেল। আগে যেমন ছিলাম, এখনো তাই রয়ে গেলাম; নিজরে মনটাকে সাদামাটা করা গেল না। কোরবানির পশু জবাইয়ের মাধ্যমে নিজের মধ্যে যে একটি পশুত্বভাব রয়েছে, সঙ্গে সঙ্গে হৃদয়ের সেই পশুত্বকে কোরবানি করা আমাদের জরুরি ছিল। অহংকার, হিংসা, গিবত, চোখলখুরি, মিথ্যা, অন্যকে ঠকানো, খারাপ ব্যবহার পরিহার করা জরুরি ছিল। পশু কোরবানির মাধ্যমে নিজের অন্তরকে পরিবর্তন করা। কোরবানির পশু কত বড় বা কত দামি, এটা বড় কথা নয়; বড় কথা হলো, কোন প্রেরণায় কোরবানি দেওয়া হয়েছে। মহান আল্লাহতায়ালা বড় পশু দেখেননি। তিনি দেখেছেন কোরবানিদাতার অন্তর বা তাকওয়া কোনদিকে ছিল। মহান আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আল্লাহপাকের কাছে এর গোশত ও রক্ত পৌঁছায় না, বরং তোমাদের আন্তরিকতা, শ্রদ্ধা ও তাকওয়াই পৌঁছায়’ (সুরা হজ্জ-৩৭)।কোরবানির পশুর কোন অংশ আল্লাহর কাছে পৌঁছায়নি আর কোন অংশ পৌঁছেছে, এখানেই কোরবানিদাতার তাকওয়া। সে কি লোক দেখানোর বা গোশত খাওয়ার জন্য কোরবানি দিয়েছিল, নাকি আল্লাহকে খুশি করার জন্য, এটাই মূল উদ্দেশ্য। শুধু কোরবানি করলেই হবে না; হালাল সম্পদ দ্বারা কোরবানি করতে হবে। আল্লাহতায়ালাকে সন্তুষ্টি ও তাকওয়া অর্জন করার জন্য যেমন কোরবানি করেছি, তেমনিভাবে আল্লাহতায়ালাকে সন্তুষ্টি করার জন্য নামাজ আদায় করতে হবে। আমরা কোরবানি করলাম, অথচ ফজর, জোহর, আসর, মাগরিব ও এশার নামাজ আদায় করলাম না, তাহলে সেই কোরবানি কতটুকু আমার উপকার হবে, সেটিই বড় একটি বিষয়। আমরা নামাজ পড়লাম না, এমনটি ঠিক নয়। সবসময় নামাজকে প্রাধান্য দিতে হবে। মহান আল্লাহ কোরবানির আগেই নামাজের কথা প্রথমে বলেছেন। ইরশাদ হচ্ছে, ‘আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন, আমার মরণ সবকিছু মহান আল্লাহর জন্য’ (সুরা আনয়াম-১৬২)।প্রিয় পাঠক, আসুন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার জন্য চেষ্টা করি। পাশাপাশি আল্লাহ আমাকে কোরবানি দেওয়ার সামর্থ্য দিয়েছেন, সে জন্য দুই রাকাত শুকরিয়া নামাজ আদায় করি। একই সঙ্গে দুই হাত তুলে দোয়া করি, যেন কোরবানি আল্লাহ কবুল করেন এবং আগামী বছর কোরবানি দিতে পারি, সেই পর্যন্ত হায়াত বাড়িয়ে দেন। আমরা যারা কোরবানি দিতে পারি নাই, সামর্থ্য নেই, আমরাও দুই রাকাত নামাজ আদায় করে সামর্থ্য চেয়ে মহান আল্লাহর দরবারে দোয়া করি, যেন আগামী বছর আমাদের সামর্থ্য দান করেন। আল্লাহ আমাদের সবার মনের আশা কবুল করেন। আমিন।লেখক: ইসলামবিষয়ক গবেষক।এনআই
Source: সময়ের কন্ঠস্বর