চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারগামী দেশের অন্যতম ব্যস্ত মহাসড়কে ঈদুল আজহার ছুটিকে ঘিরে বাড়তে শুরু করেছে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ। দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে ছুটি কাটাতে কিংবা প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে ঘরমুখো মানুষের ঢল নামছে দক্ষিণ চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজারের দিকে। যদিও মহাসড়কে গাড়ির সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে, তারপরও কোথাও এখনো স্থায়ী যানজট তৈরি হয়নি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুলিশ, হাইওয়ে কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বিত প্রস্তুতি ও নজরদারির ফলে এবার এখন পর্যন্ত ভ্রমণ নির্বিঘ্নই বলা চলে।গত দু’দিন ধরে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পটিয়া, দোহাজারী, সাতকানিয়া, কেরানীহাট, লোহাগাড়া, চকরিয়া, ঈদগাঁও এবং কক্সবাজার শহরের দিকে যান চলাচল ক্রমেই বাড়ছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় প্রতিটি ঘণ্টাতেই চট্টগ্রাম শহরের বহদ্দারহাট ও কর্ণফুলী ব্রিজ এলাকা ব্যবহার করে গাড়িগুলো বেরিয়ে যাচ্ছে মহাসড়কে। তবে যানজট না থাকলেও কিছু কিছু স্থানে ধীরগতির সমস্যা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে কেরানীহাট বাজার এলাকায় গাড়িগুলো কিছুটা থেমে থেমে চলাচল করছে।সাতকানিয়ার সিএনজি চালক মো. বেলাল বলেন, ‘চাপ বেশি, গাড়ির ভিড় বেশি। তবে পুলিশ আছে, তাই কেউ সাহস করে উল্টোপথে যাচ্ছে না। সমস্যা হচ্ছে বাজার আর বাসস্ট্যান্ড অংশে। সেখানেই একটু থামতে হচ্ছে।’গাড়িচাপের এই বাড়তি চিত্র কেবল দিনে নয়, রাতেও প্রায় একই রকম। বিশেষ করে কোরবানির পশুবাহী ট্রাক ও পিকআপগুলো রাতভর চলাচল করছে এই মহাসড়ক ধরে।কক্সবাজারগামী যাত্রী আমেনা খাতুন বলেন, ‘আমরা রাত ১১টায় চট্টগ্রাম থেকে বাসে উঠেছি, ভেবেছিলাম গভীর রাতে গাড়ি কম থাকবে। কিন্তু দেখি পুরো সড়কই ব্যস্ত। তবে যানজটে আটকে পড়তে হয়নি, এটুকুই শান্তি।’চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের স্পর্শকাতর স্থান হিসেবে পরিচিত কেরানীহাট। চট্টগ্রাম শহর থেকে কক্সবাজারমুখী প্রায় সব বাস ও মিনিবাস কেরানীহাট হয়ে যায়, তাই এ পয়েন্টটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।কক্সবাজারগামী বাসচালক রশিদুল ইসলাম বলেন, ‘সাধারণত এই সময় মহাসড়কে যানজট থাকে, কিন্তু এবার যানজট না থাকায় সময়ও বাঁচলো, যাত্রীরা খুশি।’বাসযাত্রী শাহীন আরা বেগম বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম দেরিতে পৌঁছাব, কিন্তু জ্যাম না থাকায় পুরো পথটা অনেকটা নির্বিঘ্ন।’ঈদুল আজহার আগে কোরবানির পশুবাহী ট্রাকের চাপও বেড়েছে এই মহাসড়কে। গরুবাহী ট্রাকচালক আবু তাহের বলেন, ‘সড়কে চাপ বেশি, তবে আমরা থামিনি কোথাও। আগে কেরানীহাটে গিয়ে বসে থাকতে হতো ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এবার সড়ক ভালো।’দোহাজারী হাইওয়ে পুলিশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শুভ রঞ্জন চাকমা বলেন, ‘সাধারণত ঈদের দু’তিনদিন আগে থেকেই চাপ বাড়ে। এবারও ব্যতিক্রম নয়। তবে সড়কে এখনো যানজট হয়নি। কিছু জায়গায় যানবাহন ধীরগতিতে হলেও নিয়ম মেনে চলছে।’সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, ঈদের আগের দিন চাপ সর্বোচ্চ হবে। সেদিন সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত পুরো সড়ক থাকবে চাপের মধ্যে। ঈদের পরদিন পর্যটকের ঢল নামবে কক্সবাজারে, তখন ফের সড়কে যাত্রী ও গাড়ির চাপ বাড়বে। এর জন্যও প্রস্তুতি নিচ্ছে পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন।সড়কে চাপ বাড়লেও এই মুহূর্তে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে শৃঙ্খলা বজায় আছে, নেই দীর্ঘ যানজট। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ঈদের দিন যতই ঘনিয়ে আসবে, ততই চাপ বাড়বে। তাই যাত্রী ও চালক—দুই পক্ষকেই ট্রাফিক আইন মানার আহ্বান জানানো হয়েছে। নিয়ম মেনে চললে এবারের ঈদযাত্রা নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন হবে, এই প্রত্যাশা করছেন সবাই।এসআর
Source: সময়ের কন্ঠস্বর