ভাটফুল! যারা গ্রামে অথবা কোনো মফস্বলে বসবাস করেন, হয়তো মাঝে মাঝে তাদের চোখে পড়ে রাস্তার পাশে অবহেলায় পড়ে থাকা একটি সাদা ফুল। অযত্ন ও অবহেলায় ধুলোমাখা ভাটফুল যেন সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে, ‘আমি এক ভাটফুল, ধুলোমাখা ও অযত্নে বেড়ে ওঠায় কেউ আমার দিকে তাকায় না। কেউ বলেনা তুমি আমার প্রিয় ফুল।’বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে যাঁরা হৃদয়ে ধারণ করেন, তাঁদের কাছে ভাটফুল একটি চেনা ও ভালোবাসার নাম। রাস্তার পাশে, গ্রামের ঝোপঝাড়ে কিংবা বনবাদাড়ে জন্মানো এই বুনো ফুল যেন প্রকৃতির নিজ হাতে আঁকা এক নিখুঁত সৌন্দর্যচিত্র। অযত্নে বেড়ে উঠলেও তার রূপে ও গন্ধে লুকিয়ে আছে এক অনন্য আবেদন।বৈশাখ থেকে শ্রাবণ সময়টা ভাটফুলের ঋতু। এই সময় সারা দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে এর স্নিগ্ধ সুবাস। বিশেষ করে গ্রামবাংলার পথঘাট, সড়কের পাশে অথবা ময়লার স্তুপের পাশে চোখে পড়বে এই সাদা ফুলের ঝাঁক। শহরের ব্যস্ততায় আজ হারিয়ে যেতে বসেছে এই ফুল।ভাটফুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে কবি জীবনানন্দ দাশ একাধিক কবিতায় এই ফুলের উল্লেখ করেছেন। গুচ্ছ গুচ্ছ ভাটফুলের হাসি যেন তাঁর কবিতার প্রতিটি চরণে প্রাণ ছড়িয়ে দেয়। প্রকৃতি ও প্রেমের গভীর সম্পর্ককে তুলে ধরতে গিয়ে কবি বেছে নিয়েছেন এই বুনো ফুলটিকে, যা আজও পাঠকের হৃদয়ে অমলিন।তবে শুধু সৌন্দর্যেই নয়, ভাটফুলের রয়েছে ব্যবহারিক গুরুত্বও। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এই ফুল ও গাছের ব্যবহার আয়ুর্বেদিক ও স্থানীয় হেরবল চিকিৎসায় দেখা যায়। এছাড়াও, এখনো অনেক মানুষ বিশ্বাস করেন, ভাটফুল শুভ ও মঙ্গলময়—বাড়ির আঙিনায় এই ফুল থাকলে নাকি দুর্ভাগ্য দূর হয়। তবে, সময়ের সাথে সাথে নগরায়ণ আর বনাঞ্চল ধ্বংসের ফলে ভাটফুলের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ছে। প্রয়োজনীয় উদ্যোগ না নিলে অদূর ভবিষ্যতে হয়তো নতুন প্রজন্ম কেবল বইয়ের পাতায় কিংবা কবিতায়ই এই ফুলের নাম পাবে।ভাটফুল আমাদের সংস্কৃতি, প্রকৃতি এবং কাব্যিক ঐতিহ্যের এক অনবদ্য অংশ। এই ফুল শুধু একটি গাছ নয়, এটি আমাদের শিকড়, আমাদের ভালোবাসা, আমাদের বাংলার রূপের স্মারক।এসআর
Source: সময়ের কন্ঠস্বর