পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে নড়াইলের হাটে কোরবানির পশু বিক্রি শুরু হয়েছে। জমে উঠেছে বেচাকেনা। জেলার তিনটি উপজেলার ছোট-বড় হাটে কোরবানির গরু ও ছাগল বেচাকেনা শুরু হয়েছে। তবে শুরুতে বিভিন্ন পশুর দাম বেশি থাকায় শেষ সময়ে জমে উঠেছে হাটগুলো। এবছর পশুর হাটগুলোতে মাঝারি গরুর চাহিদা বেশি থাকায় বড় গরুর তুলনায় সেগুলোর দামও বেশি। অনেক খামারি ঈদের আগে ক্রেতাদের ক্রয় করা গরু বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার সুবিধা দিয়ে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন। ক্রেতারাও বাড়তি ঝামেলা এড়াতে সেই সুযোগে খামারেই কোরবানির গরু কিনছেন। জেলায় কোরবানিযোগ্য গবাদিপশু রয়েছে ৫৪ হাজার ৫৮৫টি। চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত থাকবে ১৪ হাজার ৬৯টি, বলে জানিয়েছেন জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ।জেলায় নয়টি পশুর হাট রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় পশুর হাট হচ্ছে মাইজপাড়া পশুর হাট। এই হাটে ঢাকা, চট্টগ্রাম, মাদারীপুর, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, মাগুরা, যশোরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা আসেন। এখান থেকে গরু কিনে নিয়ে যান বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করার জন্য। হাটগুলোতে ছোট-বড় বিভিন্ন আকারের গরু রয়েছে। তবে এ বছর কোরবানির জন্য মাঝারি আকারের গরুর চাহিদা বেশি বলে জানা গেছে।সরেজমিন ঘুরে জেলার মাইজপাড়া হাট, নাকসী বাজার, লোহাগড়া বাজার, শিয়রবর, লাহুড়িয়া, দিঘলিয়া হাটসহ প্রতিটি পশুর হাটে বিপুল পরিমাণ গরু ও ছাগল বিক্রির জন্য নিয়ে আসছেন বিক্রেতারা।বিক্রেতারা বলেন, ‘গত বছরের চেয়ে এ বছর আমাদের বেশি খরচ হয়েছে। আমরা যদি গরুর দাম দেড় লাখ চাই তাহলে ক্রেতারা তার দাম বলেন ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা। আর এক লাখ চাই ক্রেতারা বলেন ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। কোন কোন ক্রেতা দাম বেশি দিয়ে কিনে নেন। আবার কিছু ক্রেতা দাম শুনে চলে যান। বেশি দামে বিক্রি করতে না পারলে তাদের অনেক লোকসান গুনতে হবে। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা।মিরাজ মির নামে এক ক্রেতা সময়ের কণ্ঠস্বরকে বলেন, ‘কোরবানির জন্য হাটে গরু কিনতে এসেছি। ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা দিয়ে একটি গরু কিনেছি।’ আরেক ক্রেতা আশরাফুল বিশ্বাস সময়ের কণ্ঠস্বরকে বলেন, ‘গরু কেনার জন্য হাটে এসেছি। গরু দেখছি, পছন্দ হলে কিনব।’আরো কয়েকজন ক্রেতার সাথে কথা হলে তারা জানান, ‘কোরবানির পশু কেনার জন্য হাটে এসেছি। কিন্তু বিক্রেতারা গত বছরের চেয়ে এ বছর দাম অনেক বেশি চাচ্ছেন। ফলে সামর্থ্য অনুযায়ী পশু কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’গরু ব্যবসায়ী আব্দুর রহিম সময়ের কণ্ঠস্বরকে বলেন, ‘আমি ২০ বছর ধরে নড়াইলের বিভিন্ন হাট থেকে গরু কিনে বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করে থাকি।’ সাহেব আলী নামে একজন বলেন, ‘নড়াইলে পশুর হাটগুলোতে যেসব গরু উঠেছে তার বেশির ভাগই দেশি জাতের। যার কারণে অন্য জেলায় এসব গরুর চাহিদা বেশি।’এছাড়া ছাগলের দামও গত বছরের তুলনায় বেশ কম বলে দাবি করছেন ব্যবসায়ী ও গৃহস্থরা। তাদের দাবি, ‘বড় আকারের ছাগল এবার ১৩ থেকে ১৫ হাজার টাকা দাম বলছেন ক্রেতারা। অথচ এইসব ছাগল গত বছর বিক্রি করেছেন ১৭ থেকে ১৮ হাজার টাকা। গরু-ছাগলের দাম কম হওয়ার কারণ হিসেবে বিক্রেতাদের দাবি, এবার কোরবানি দেওয়ার মতো লোকজন প্রথম দিকে হাটে কম আসছেন। তবে ঈদের আগের হাটগুলোতে দাম বাড়বে বলে প্রত্যাশা তাদের।’জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ‘চলতি বছরে জেলায় কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর সংখ্যা রয়েছে মোট ৫৪ হাজার ৫৮৫টি। এর মধ্যে গরু রয়েছে ২৩ হাজার ২৩৩টি, ছাগল ও ভেড়া রয়েছে ৩১ হাজার ৩৫২টি। চলতি বছর জেলায় কোরবানির জন্য গবাদিপশুর চাহিদা রয়েছে ৪০ হাজার ৫১৬টি। উদ্বৃত্ত থাকবে ১৪ হাজার ৬৯টি।’নড়াইল জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার সিদ্দীকুর রহমান সময়ের কণ্ঠস্বরকে বলেন, ‘প্রাকৃতিক উপায়ে গবাদিপশু মোটাতাজাকরণে প্রতিনিয়তই প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে খামারিদের সচেতন করা হয়েছে। খামারসহ গৃহস্থালি বাড়িতে যেসব গরু লালন-পালন করা হয়েছে, তা স্বাভাবিক খাবারের মাধ্যমে বড় করা হয়েছে। তারপরও গরু মোটাতাজাকরণে ক্ষতিকর কিছু ব্যবহার করা হয়েছে কিনা, সেজন্য স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য হাটগুলোতে ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম রয়েছে।’পুলিশ সুপার কাজী এহসানুল কবীর জানান, ‘জাল টাকা রোধসহ ক্রেতা-বিক্রেতার সার্বিক নিরাপত্তায় পুলিশ প্রশাসন তৎপর রয়েছে। সড়ক এবং হাটগুলোতে সব সময় নজরদারি রাখা হচ্ছে। আশা করছি ঈদুল ফিতরের মতো ঈদুল আজহাও সুষ্ঠু-সুন্দরভাবে সবাই উদযাপন করতে পারবেন।’এআই
Source: সময়ের কন্ঠস্বর