ঈদুল আজহা উপলক্ষে প্রতিবছরের মত এবছরও বরিশালে জমে উঠেছে পশু বিক্রির অনলাইন হাট। কোরবানীর দুদিন আগে থেকে ক্রেতাদের বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হবে গরু। বরিশাল জেলার বিভিন্ন খামার এরই মধ্যে অনলাইনে পশু বিক্রি শুরু করেছে।খামারিরা বলছেন, এবার ক্রেতাদের চাহিদায় রয়েছে মাঝারি আকারের গরু। অনলাইন ক্রেতাদের মধ্যে সিংহভাগই বরিশালের বাহিরের বাসিন্দা।এ বছর বরিশাল বিভাগে চাহিদার চেয়ে অর্ধলক্ষাধিক পশু উদ্বৃত্ত থাকবে বলে জানিয়েছে প্রাণী সম্পদ দপ্তর। জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার নতুনহাট এলাকার এইপি অ্যাগ্রো খামারের ব্যবস্থাপক রাফিউর রহমান অমি বলেন, তাদের খামারে ‘দেশী’, ‘দেশাল’ ও ‘শাহিওয়াল’ প্রজাতির আড়াই’শ গরু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। তাদের ফেসবুক পেজ এবং ওয়েব সাইটের মাধ্যমে ক্রেতারা গরু কিনেছেন। খামারের ৭৫ ভাগ গরু আগাম বিক্রি হয়েছে। তারা গরু কেজি দরে ‘লাইভ ওয়েট’ দিয়ে বিক্রি করেছেন।এর মধ্যে ১০০ থেকে ৫০০ কেজি ওজনের গরু ৪৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। ৫০০ কেজির বেশি ওজনের প্রতিটি গরু বিক্রি হয়েছে ৪৯০ টাকা কেজি দরে। তিনি বলেন, তাদের খামারের বড় সাইজের ১১টি গরুর মধ্যে আটটি বিক্রি হয়ে গেছে। এর মধ্যে সাড়ে ৭০০ কেজি ওজনের ‘রাজা’ ও ‘বাদশা’ নামে দুটি গরু সাড়ে ১১ লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন।বরিশাল নগরীতে ফ্রি ও বাইরে একটি নির্দিষ্ট ফি নিয়ে ঈদের দুদিন আগে থেকে গরু ক্রেতাদের বাড়ি ও ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়া হবে গরু। নগরীর লাকুটিয়া সড়কে অবস্থিত সাদ-সাইফ অ্যাগ্রো খামারের দায়িত্বে থাকা মো. সাইদ বলেন, তাদের খামারে দেড়’শ গরু রয়েছে। এর মধ্যে ১০০ গরু বিক্রি হয়ে গেছে। অর্ধশতাধিক গরু ঢাকার ক্রেতারা নিয়েছেন। দেশের যে কোন স্থানে গরু পৌঁছে দেওয়ার জন্য তারা মাত্র এক হাজার টাকা নেবেন।ক্রেতারা অনলাইনে এবং বরিশালের খামারের গরু কেনায় আগ্রহ দেখাচ্ছে কেন জানতে চাইলে সাইদ বলেন, ‘খামার থেকে গরু কিনলে খাজনা দিতে হয় না। অনেকের রাখার স্থান নেই। তারা কোরবানির আগে পর্যন্ত গরু খামারেই রাখতে পারেন। সবচেয়ে বড় কথা, খামার থেকে কেনা গরুর নিশ্চয়তা রয়েছে। অনেক ক্রেতারা এসেও আগাম কিনে রাখেন।’বরিশাল নগরীর গড়িয়ার পাড় রেইন-ট্রি তলা এলাকার কেমিস্ট এ্যাগ্রো খামারের তত্ত্বাবধায়ক মোর্শেদ আজমল সুজন বলছিলেন, তাদের খামারে দুই’শ গরুর মধ্যে ৮০ ভাগ গরু আগাম বিক্রি হয়েছে। অনলাইনের ক্রেতাই বেশি। কোরবানির আগে গরু ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে। বরিশাল বিভাগীয় প্রাণী সম্পদ দপ্তর থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিভাগের ৬ জেলায় তিন লাখ ৯১ হাজার ১৫৭টি পশুর চাহিদা রয়েছে। আর পশু রয়েছে চার লাখ ৫৭ হাজার ৮৫৮টি।এর মধ্যে গরুর চাহিদা তিন লাখ ২৫ হাজার ৯২৮টি। মহিষ রয়েছে ৯ হাজার ৪৩০টি, ছাগল রয়েছে এক লাখ ১০ হাজার ১৯৩টি, ভেড়া ১২ হাজার ২৮২টি ও অন্যান্য ২৫টি। বরিশাল বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে পশুর চাহিদা রয়েছে পটুয়াখালীতে, এক লাখ ২৮ হাজার ১৮৮টি। পশু রয়েছে এক লাখ ৩৩ হাজার ৩৭১টি। চাহিদার চেয়ে ৫ হাজার ১৮৩টি পশু বেশি থাকবে। বরিশালের চাহিদা এক লাখ ১০ হাজার ৭৭টি।এ জেলায় রয়েছে এক লাখ ৪৭ হাজার ৬৭৪টি। উদ্বৃত্ত থাকবে ৩০ হাজার ৫৯৭টি। ভোলা জেলায় চাহিদা ৯০ হাজার ২৫৩টি। রয়েছে এক লাখ দুই হাজার ৭৭৯টি। উদ্বৃত্ত থাকবে ১২ হাজার ৫২৬টি। বরগুনা জেলার চাহিদা ৩৫ হাজার ৯৯৯টি। রয়েছে ৪২ হাজার ৪৯০টি। বাড়তি থাকবে ৬ হাজার ৪৯১টি। পিরোজপুরের চাহিদা চেয়ে ৪ হাজার ৯৮৫টি পশু বেশি রয়েছে। এ জেলার চাহিদা ১৮ হাজার ৯৪৫টির বিপরীতে রয়েছে ২৩ হাজার ৯৩০টি। সবচেয়ে কম চাহিদা রয়েছে ঝালকাঠি জেলায়। এ জেলার ১২ হাজার ৬৯৫টি চাহিদার বিপরীতে রয়েছে ১৩ হাজার ৬১৪টি। উদ্বৃত্ত থাকবে ৯১৯টি।বিভাগীয় প্রাণী সম্পদ দপ্তরের পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘গত বছরে কোরবানি হওয়া পশু সংখ্যার চেয়ে তিন থেকে পাঁচ ভাগ বাড়তি হিসেব করে চাহিদা তৈরি করা হয়েছে। যে পরিমাণ পশু হিসেবে দেখানো হয়েছে, বাস্তবে তার চেয়ে বেশি পশু রয়েছে। কারণ অনেক গৃহস্থের লালন-পালন করা পশু এ হিসেবে নেই।’তিনি বলেন, ‘বরিশাল বিভাগের পশুর মাংসের স্বাদ বেশি। তাই দেশের অন্যান্য জেলায় বরিশাল বিভাগের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এ বছর বরিশাল বিভাগে ২৯৬টি পশুর হাট বসবে। এর মধ্যে ভোলায় ৯৩টি, বরিশালে ৭০টি, পটুয়াখালীতে ৪৫টি, বরগুনায় ৪০টি, ঝালকাঠিতে ২৮টি ও পিরোজপুরে ২০টি রয়েছে।’এসআর
Source: সময়ের কন্ঠস্বর