মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ডিজেএমসি মাধ্যমিক বিদ্যালয়টিতে বিভিন্ন অনিয়মের কারণে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকেরা। প্রায় ২৪ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে একটি মাত্র এ প্লাস পেয়েছিল এই প্রতিষ্ঠান। এর পরে আর কোন শিক্ষার্থী এ প্লাসের মুখ দেখতে পাননি। অভিভাবকরা বলছেন, শিক্ষকদের উদাসীনতার কারণে এমন অবস্থা। অভিযোগ রয়েছে, শিক্ষকরা জোর করে স্কুলে প্রাইভেট পড়ান এবং তাদের কাছে প্রাইভেট না পড়লেই পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেয়ার ভয় দেখান।বেশ কয়েকজন অভিভাবক জানান, প্রতিষ্ঠানটিতে একসময় ছাত্র-ছাত্রী ছিল পরিপূর্ণ। দেখতে ভালোও লাগতো। কিন্তু ইদানিং দেখা যাচ্ছে, আস্তে আস্তে শিক্ষার্থীরা অন্য স্কুলে চলে যাচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটা কিভাবে ভালো করা যায় সে বিষয়ে শিক্ষকদের কোন উদ্যোগ নেই। ভালো করে ক্লাস না নেয়ারও অভিযোগ রয়েছে। ক্লাস নিতে গিয়েই বলেন, ‘আমাদের কাছে প্রাইভেট পড়তে হবে, না হলে শিখতে পারবা না।’ শিক্ষার্থীদের একপ্রকার জোর করে তারা প্রাইভেট পড়ায়। আর তাদের কাছে না পড়লেই ফেল করিয়ে দেয়ার ভয় দেখায়। প্রধান শিক্ষক প্রতিষ্ঠানে প্রাইভেট পড়ানোর সুযোগ করে দিয়েছেন, এজন্য তারা পড়াতে পারে। কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি যাতে এই অনিয়ম বন্ধ হয়।নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘শিক্ষকদের কাছে না পড়লে আমাদের ফেল করিয়ে দেয়ার কথা বলে। আমরা ভয়ে স্যারদের কাছে পড়ি। বাইরে পড়লে আমাদের বিভিন্ন কটু কথা বলে। আসলে স্যাররা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ভালোবাসে না। তারা প্রাইভেট নিয়ে ব্যস্ত থাকে। আমাদের আওলাদ স্যার, শাহীন স্যার, সায়েম স্যার প্রাইভেট পড়ান স্কুলে। যে যে ক্লাসের ইংরেজি ও অংক শিক্ষক আছেন, তারা ওই ক্লাসের শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়তে বাধ্য করেন।’ডিজেএমসি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী সাগর আহমেদ বলেন, ‘আমাদের ইংরেজি শিক্ষকের নাম ছিল আওলাদ হোসেন। তার কাছে প্রাইভেট পড়লে পাস, না পড়লে ফেল। আমরা প্রাইভেট বাইরে পড়তাম, এজন্য আমাদের অনেক কথা শুনতে হতো। স্যার ক্লাসেই বলতো যে আলাদাভাবে প্রাইভেট না পড়লে শিখতে পারবা না। দিন দিন স্কুলটা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরকারিভাবে প্রাইভেট পড়ানো নিষেধ। কিন্তু প্রধান শিক্ষক কোন কিছুই বলেন না তাদের।’অভিভাবক মশিউর রহমান বলেন, ‘আমরা জানি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রাইভেট পড়ানো নিষেধ। অথচ দেদারসে শিক্ষকরা আইনকে বৃদ্ধাঙ্গলি দেখিয়ে স্কুলে প্রাইভেট পড়ান। প্রধান শিক্ষক এ বিষয়ে কোন কিছুই বলেন না। আবার শিক্ষার্থীরা বাইরে পড়লেও তাদের ফেল করিয়ে দেওয়ার ভয় দেখান। তাছাড়া দিন দিন এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী হারিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষার মান ভালো না করার কারণে অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চলে যাচ্ছে অধিকাংশ শিক্ষার্থী। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রাইভেটগুলো পড়ানো বন্ধ করা উচিত। শিক্ষকদের মনোযোগী হতে হবে ক্লাসে, তাহলে ভালো ছাত্র বের হবে।’ডিজেএমসি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোঃ শাহিনুজ্জামান বলেন, ‘প্রধান শিক্ষকের অনুমতি সাপেক্ষে আমি কিছু দুর্বল শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত ক্লাস নিই। অভিযোগ উঠলে বন্ধ করে দেবো পড়ানো।’বিষয়টি নিয়ে জানতে ডিজেএমসি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ রফিকুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, ‘আমি একটু পরে গাংনীতে যাব। তখন আপনাকে ডেকে নিয়ে দেখা করব।’গাংনী উপজেলা মাধ্যমিক (ভারপ্রাপ্ত) শিক্ষা অফিসার মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘স্কুলে প্রাইভেট পড়ানোর কোন বিধান নেই। আমি প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলে বিষয়টির খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেব।’ এসআর
Source: সময়ের কন্ঠস্বর