সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নে নারীদের জন্য বরাদ্দকৃত ভিডব্লিওবি (ভিজিডি) ৫ মাসের চাল বিতরণে অনিয়ম ও অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে ভুক্তভোগীরা (২৭ মে) উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন।সরকার থেকে দুঃস্থ মহিলা উন্নয়ন ভিজিডি কর্মসূচির আওতায় দুস্থ ও অসহায় মানুষের খাদ্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এ কর্মসূচি চালু করা হয়েছে।জানা যায়, সরকারের নিয়মানুযায়ী দুই বছর মেয়াদি (২৪) মাসে ভিজিডি কার্ডধারী সুবিধাভোগীদের সময়সীমা গত ডিসেম্বর মাসে শেষ হয়ে যায়। কিন্তু, অন্তরবর্তী সরকারের এসে নতুন কোনো সুবিধাভোগীদের তালিকা না করায় জানুয়ারি মাস থেকে এপ্রিল পর্যন্ত বিতরণ বন্ধ থাকে। পরবর্তীতে কার্ডের মেয়াদ বৃদ্ধি করায় পূর্বের কার্ডধারীরা একসাথে ৫ মাসের ১শ ৫০ কেজি চাল বরাদ্দ পায়। সে সকল কার্ডধারী সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে চাল দেবার কথা বলে প্রতিটি কার্ডধারীর কাছ থেকে ১১ শ টাকা করে ইউপি সদস্য ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্যরা গ্রহণ করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইউনিয়ন পরিষদের প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে এ অর্থ সংগ্রহ করেন ইউপি সদস্যরা।এ বিষয়ে উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন ইউনিয়নের দবিরগঞ্জ গ্রামের ভুক্তভোগী জাহিদুল ইসলামের স্ত্রী আদুরী খাতুন, নজরুল ইসলামের স্ত্রী রেজেদা খাতুন ও জাহিদুল ইসলামের স্ত্রী সাথী খাতুন।ভুক্তভোগীরা জানান, দীর্ঘদিন ভিজিডি কার্ডের চাল বন্ধ ছিল, পরে চাল এসেছে। চাল নিতে হলে জন প্রতি ১১ শ টাকা করে দাবি করেন ইউপি সদস্য মোক্তার হোসেন। পরে আমরা ১১ শ টাকা দিয়ে ৫ মাসের চাল গ্রহণ করি। পরে জানতে পারি অবৈধভাবে আমাদের কাছ থেকে ১১ শ টাকা করে নিয়েছেন। এজন্য মঙ্গলবার বিকেলে ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি।চৈত্রহাটি গ্রামের চাঁদ আলীর স্ত্রী ভুক্তভোগী মানিয়া খাতুন, মৃত কোরবান আলীর স্ত্রী পিনজিরা খাতুন বলেন, ভিজিডি কার্ডের চাল নিতে আমাদের কাছ থেকে নায়েব আলী মেম্বর ১১ শ টাকা করে নিয়েছেন। আমাদের ওয়ার্ডের মেম্বর যদিও আকবর আলী, কিন্তু টাকা নিয়েছেন নায়েব আলী মেম্বর। আমরা গরীব মানুষ অন্যের কাছ থেকে টাকা ধার করে নিয়ে এসে দিয়ে চাল গ্রহণ করেছি।উনুখা গ্রামের কার্ডধারী সুবিধাভোগী হালিমা খাতুন জানান, দীর্ঘ কয়েক মাস ভিজিডি কার্ডের চাল বন্ধ ছিল। গত সোমবার (১৯ মে) চাল সংগ্রহ করি। পরে বিকেলে আমার স্বামীর কাছ থেকে আকবর আলী মেম্বর ১১ শ টাকা নিয়েছে। অবৈধভাবে আমাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে, পরে জানতে পেরেছি। আমরা এর বিচার চাই।এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগী একাধিক ব্যক্তিরা বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক ছাইদুল ইসলাম মোগল এর নির্দেশে প্রতিটি কার্ডধারী কাছ থেকে ১১ শ টাকা উঠানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। আমরা দুর্নীতিবাজ প্রশাসকের অপসারণের দাবি করছি।ইউপি সদস্য আকবর আলী বলেন, ভিজিডি কার্ডের চাল বিতরণের সময় কারোর কাছ থেকে কোনো প্রকার টাকা সংগ্রহ করা হয়নি। আমার বিরুদ্ধে হয়তো ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।ইউপি সদস্য (প্যানেল চেয়ারম্যান) নওজেশ আলী ওরফে নায়েব আলী বিষয়টি অস্বীকার করে জানান, আমাদের ইউনিয়নে ভিজিডি চাল বিতরণে কারোর কাছ থেকে কোনো প্রকার টাকা নেওয়া হয়নি। তার পরেও কেউ যদি কোনো প্রকার টাকা নিয়ে থাকে, খোঁজ নিয়ে জানানো হবে বলে ফোনের লাইন কেটে দেন।রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক ও উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা ছাইদুল ইসলাম মোগল বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে এমন কোনো ঘটনা যদি ঘটে থাকে, তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু সালেহ্ মোহাম্মদ হাসনাত বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুবর্ণা ইয়াসমিন সুমিকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।এনআই
Source: সময়ের কন্ঠস্বর