ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশনে টিকিট কালোবাজারি, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়সহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।বুধবার (২৮ মে) সকাল সাড়ে ১১টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত প্রায় চার ঘণ্টাব্যাপী চলে এই অভিযান। এতে তাৎক্ষণিক সুফলও মেলে—দ্রুত টিকিট পেয়ে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা।অভিযান পরিচালনা করেন দুদক ময়মনসিংহ জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক বুলু মিয়া। তাঁর নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি দল স্টেশনের টিকিট কাউন্টার, প্ল্যাটফর্ম ও যাত্রী বিশ্রামাগারসহ বিভিন্ন স্থানে তদারকি চালান। অভিযানে উপস্থিত ছিলেন ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশনের সুপারিন্টেন্ডেন্ট নাজমুল হক খান।অভিযান চলাকালীন সময়ে যাত্রীদের কাছ থেকে উঠে আসে নিয়মিত ভোগান্তির নানা চিত্র। মহুয়া কমিউটার ট্রেনের যাত্রী সুফিয়া খাতুন বলেন, “প্রতিদিন টিকিটের জন্য দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকি। অথচ আজ দুদক কর্মকর্তারা আসার পর দ্রুত টিকিট পেয়েছি। সাধারণত একটি আসন পেতে হলে দুটি টিকিট কিনতে হয়। কিন্তু আজ একটি টিকিটেই একটি সিট পেয়েছি। আমরা চাই, এমন অভিযান নিয়মিত হোক।”এ সময় আরেক যাত্রী শফিকুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “ময়মনসিংহ থেকে মোহনগঞ্জ পর্যন্ত মহুয়া কমিউটার ট্রেনের ভাড়া ৪৫ টাকা। কিন্তু তারা ৫০ টাকা নেয়, বলে ভাঙতি নেই। ৫ টাকা ফেরত চাইলে খারাপ ব্যবহার করে। আবার এক টিকিট কিনলেও সাধারণত সিট পাওয়া যায় না। এটা কোনো নিয়ম হতে পারে না।”অভিযান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন দুদক কর্মকর্তা বুলু মিয়া। তিনি জানান, “ঈদকে সামনে রেখে রেলস্টেশনে যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। আজকের অভিযানে আমরা কিছু অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছি। বুকিং সহকারী রাজীব সরকার ও সোহেল রানা মুঠোফোনে টিকিট কেটে রাখতেন, যাতে নির্দিষ্ট যাত্রীদের তা সরবরাহ করা যায়। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”তিনি আরও জানান, “মহুয়া কমিউটার ট্রেনে টিকিটপ্রতি অতিরিক্ত পাঁচ টাকা নেওয়ার সত্যতা মিলেছে। ট্রেনের এজেন্ট জিল্লুর রহমান যাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন বলেও অভিযোগ এসেছে। তাঁকেও সতর্ক করা হয়েছে। দুদকের এই তৎপরতা অব্যাহত থাকবে।”এ বিষয়ে মহুয়া কমিউটার ট্রেনের বুকিং সহকারী সাইদুল ইসলাম বলেন, “মোহনগঞ্জ রুটের ভাড়া ৪৫ টাকা হলেও মাঝে মাঝে ভাঙতি না থাকায় ৫০ টাকা রাখা হয়। তবে দুদক কোনো অনিয়ম পায়নি, আমাদের শুধু সতর্ক করেছে।”স্টেশন সুপারিন্টেন্ডেন্ট নাজমুল হক খান বলেন, “ময়মনসিংহ স্টেশন থেকে মোট ২৮ জোড়া ট্রেন চলাচল করার কথা থাকলেও বর্তমানে ২৩ জোড়া ট্রেন চলছে। বাকি পাঁচ জোড়া ট্রেন করোনাকালীন সময়ে বন্ধ হয়ে যায়, পাশাপাশি কিছু ট্রেন ইঞ্জিন সংকটের কারণে চলাচল বন্ধ রয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ৪ থেকে ৫ হাজার যাত্রী এ স্টেশন দিয়ে যাতায়াত করেন।”তিনি আরও বলেন, “ই-টিকিটিং চালু হওয়ায় কালোবাজারি আগের মতো নেই। তবে যাত্রীসেবার মান উন্নয়নে আমরা নিরলসভাবে কাজ করছি। কারও গাফিলতি থাকলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দুদকের এ ধরনের অভিযানকে আমরা স্বাগত জানাই।”অভিযানের সময় টিকিট কাউন্টার ও স্টেশনের অন্যান্য অংশে উপস্থিত যাত্রীরা জানান, দুদকের উপস্থিতিতে টিকিটপ্রাপ্তি সহজ হয়েছে। তারা বলেন, এমন অভিযান নিয়মিত হলে যাত্রীসেবার মান অনেকটাই উন্নত হবে এবং দুর্নীতি ও অনিয়ম অনেকটাই কমে আসবে।এদিকে ঈদ ঘনিয়ে আসায় যাত্রীদের চাপ বাড়ছে স্টেশনে। ফলে সময়মতো টিকিট প্রাপ্তি এবং নির্দিষ্ট আসন নিশ্চিত করতে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্টদের আরও দায়িত্বশীল হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন যাত্রীরা।দুদকের কর্মকর্তারা জানান, স্টেশনের অনিয়ম, কালোবাজারি ও যাত্রী হয়রানি রোধে নিয়মিত তদারকি ও অভিযানের অংশ হিসেবেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যাত্রীসেবায় কোন ধরনের দুর্নীতি সহ্য করা হবে না।এইচএ
Source: সময়ের কন্ঠস্বর