তীব্র গরমে স্বস্তি এনে দেওয়া রসালো ফল লিচু এখন কুমিল্লার বাজারে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি বছরের তুলনায় এবার লিচুর দাম যেমন বেশি, তেমনি অপরিপক্ক লিচু দিয়ে ঠকানো হচ্ছে ক্রেতাদের। নগরীর কান্দিরপাড়, ঝাউতলা, চকবাজার এবং পাশ্ববর্তী উপজেলা লাকসামের কয়েকটি বাজার ও সর্ববৃহৎ পাইকারী সবজির বাজার ‘নিমসার বাজার’ ঘুরে দেখা গেছে, এবার সিজনের শুরু থেকেই জেলার বাজারগুলোতে প্রচুর লিচু উঠলেও তার বেশিরভাগই ছিলো অপরিপক্ব। এখন সিজনের মাঝামাঝি সময় এসে লিচুর পরিপক্কতা আসলেও দাম নিয়ে স্বস্তিতে নেই ক্রেতারা৷ এদিকে, সিজনের শুরুতেই এ জেলায় লিচু বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। তবে, সিজনের মাঝামাঝি সময় এখন চললেও, লিচুর দাম কমার কোনো লক্ষণই নেই। সাধারণ মানুষের জন্য রসালো ফল লিচু এখন স্বাদ থাকলে স্বাধ্যের বাইরে। গতকাল বুধবার (২৮ মে) কুমিল্লা নগরীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, নগরীর অন্যতম বাণিজ্যিক ও ব্যস্ততম এলাকা কান্দিরপাড়ে প্রতি শত লিচু বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকায়, যা গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি। সিজনের মাঝামাঝিতে এসেও লিচুর এমন দাম থাকায় ক্ষুদ্ধ ক্রেতারা। প্রশ্ন তুলছেন ভোক্তা অধিদপ্তরের তদারকি নিয়ে। অন্যদিকে, একই দিন লাকসাম উপজেলার বিভিন্ন বাজারে একই আকারের প্রতি শত লিচু ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। আবার, নিমসার বাজারেও খুচরা দরে লিচু প্রতি শ বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৪০০ টাকায়। একই জেলায় একেক বাজারে লিচুর একেক রকম দাম, এটা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন সাধারণ মানুষ। কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার বাইপাস মোড়ে কথা হয় স্কুল শিক্ষক জাকির হোসেনের সঙ্গে। লিচুর ব্যাগ হাতে হাঁটতে হাঁটতে এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, কুমিল্লায় গিয়েছিলাম একটি কাজে। মেয়ে বায়না ধরেছে লিচু খাওয়ার জন্য। কুমিল্লা কান্দিরপাড় থেকে ১০০ লিচু কিনেছি ৫০০ টাকা দিয়ে। এইমাত্র লাকসাম পৌঁছালাম। কিন্তু এখানে এসে লিচুর দাম জানতে চাইলে বিক্রেতারা বললেন একদাম ৩০০ টাকা। একই সাইজের লিচু দুই জায়গায় দুই রকম দাম। জেলা শহরে তো দাম আরো কম হওয়ার কথা। কিন্তু এখানে উল্টো। কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড়ে লিচু কিনতে এসে রুবিনা আক্তার নামের এক গৃহবধূ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “১০০ লিচু কিনতেই আমাকে ৫০০ টাকা দিতে হলো। অথচ দুদিন আগে আমার ভাই নিমসার থেকে ৩৫০ টাকায় ১০০ লিচু এনেছে। এই বাজারে কেউ দেখার নেই, দাম যা খুশি তাই চাইছে।”বিক্রেতারা প্রাথমিকভাবে লিচু রাজশাহী ও দিনাজপুর, ইশ্বরদী থেকে আসার কারণে দাম বেশি বলে দাবি করলেও, অনুসন্ধানে ভিন্ন চিত্র উঠে এসেছে। বেশিরভাগ লিচুই কুমিল্লার আশেপাশের জেলা থেকেই আনা হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক লিচু বিক্রেতা জানান, “কিছু কিছু দোকানদার রাজশাহীর নাম করে দাম বাড়ায়। তবে আসলে ৬০-৭০ শতাংশ লিচুই আশেপাশের জেলার। নিমসার বাজার থেকে এনে শহরে বিক্রি করে। এদিকে, দাম বাড়ার পাশাপাশি লিচুর গুণগত মান নিয়েও ক্রেতাদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা গেছে। শহরের বেশিরভাগ বাজারেই দেখা যাচ্ছে, লিচুর আঁটির উপরের সারিতে বড় ও লালচে লিচু সাজিয়ে রাখা হলেও, নিচের সারিতে ছোট ও প্রায় কাঁচা লিচু রাখা হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে খোসা ভালো দেখা গেলেও ভিতরে ফল রসালো না হয়ে শুকনো বা টক। এছাড়াও, এক আঁটিতে ১০০ লিচু থাকে এমন বলে ক্রেতাকে ব্যাগে ঢুকিয়ে দেওয়া হলেও, পরে বাড়িতে গিয়ে কখনোই ১০০ লিচু পান না বলে অভিযোগ করেছেন বেশ কয়েকজন ক্রেতা। নগরীর কান্দিরপাড়ের এক ফলের দোকানে লিচু কিনে ঠকেছেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে শিক্ষার্থী শাহাদাত হোসেন সৈকত। তিনি বলেন, “বোনের বাড়িতে লিচু কিনে নিয়ে গিয়েছিলাম। দেখে মনে হলো খুব ভালো, তাই ৫০০ টাকা দিয়ে ১০০ লিচু কিনেছিলাম। আমি গুণে নিতে চাইলাম, কিন্তু তারা আমাকে ৫টি লিচু আলাদা দিয়ে বললো গুণে দেখা লাগবে না। ১০০ টা ই আছে ‘ইনশাআল্লাহ’। পরে বাসায় গিয়ে গুণে দেখি লিচু ৮০ টা। ২০ টা লিচু কম মানে ১০০ টাকা গায়েব। ঠকেই গেলাম।”তবে বিক্রেতারা এই অভিযোগ পুরোপুরি মানতে নারাজ। কান্দিরপাড়ের বিক্রেতা জসিম উদ্দিনের দাবি, “আমরা রাজশাহী থেকে লিচু আনি। পরিবহন খরচ বেশী। তাই দামও বেশী। আমরা চেষ্টা করি মান ঠিক রাখতে। আবার অনেক সময় বাগান থেকেই এমন লিচু আসে, আমাদের কিছু করার থাকে না। আর গুণে লিচু বিক্রি করলে আমাদের সময় চলে যায়। আমরা চেষ্টা করি অতিরিক্ত কিছু লিচু দিয়ে ভোক্তাকে খুশী রাখতে। কিন্তু তাও লিচু ঝরে যাওয়ার কারণে কিছু কম হয়।”এদিকে, লিচু বাজারে এমন অনিয়ন্ত্রিত দাম ও মানের অভাব প্রসঙ্গে কুমিল্লা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. কাউসার মিয়া বলেন, “নিমসারের সাথে কুমিল্লা শহরের লিচুর দাম মিলালে হবে না। ওটা পাইকারী বাজার। লিচুর ক্যাটাগরী ভেদে দামের ভিন্নতা থাকতে পারে৷ ভাউচার দেখে দামগুলো নির্ধারণ করা হয়। আপনি যেহেতু বলেছেন, আমরা তারপরেও অভিযান পরিচালনা করবো।”এদিকে, ভোক্তারা বলছেন, কেবল ভোক্তা অধিদপ্তর নয়, বাজার ব্যবস্থাপনা ও স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকেও কঠোর মনিটরিং প্রয়োজন। লিচুর দাম নির্ধারণে একটি সর্বোচ্চ মূল্যসীমা নির্ধারণ করা এবং প্রতারণার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলেছেন সচেতন নাগরিকরা। সাবেক শিক্ষক মো. আবুল হোসেন বলেন, “এখন সবকিছুতেই ভেজাল। ফলও বাদ যাচ্ছে না। লিচুর দাম এমনিতেই সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে, তার ওপর মান নিয়েও ঠকতে হচ্ছে। একসময় বাজারে রেট লিস্ট ঝুলত, এখন তা দেখি না। প্রশাসনের একটু নজরদারি দরকার।”অন্যদিকে, জেলা সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা রেজা শাহবাজ হাদী বলেন, “লিচুর দাম এখনো নির্ধারণ করে দেওয়া হয় নি৷ খুব শীঘ্রই এটা নিয়ে আলোচনা করে নির্ধারণ করে দিবো।”তীব্র গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যখন রসালো ফলের চাহিদা বাড়ছে, তখন কুমিল্লার লিচু বাজারে এই নৈরাজ্য ভোক্তাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। সময় থাকতেই বাজার তদারকি না বাড়ালে পুরো মৌসুমেই এমন বিশৃঙ্খলা চলতে থাকবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।এইচএ

Source: সময়ের কন্ঠস্বর

সম্পর্কিত সংবাদ
২০৩১ সালের পর ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষা কার্যক্রম শুরু
২০৩১ সালের পর ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষা কার্যক্রম শুরু

ঢাকার সরকারি ৭ কলেজের সমন্বয়ে ‌‌‌‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’র শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে ২০৩১ সাল পর্যন্ত সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন Read more

বগুড়ার ১২ থানায় সীমিত পরিসরে কার্যক্রম শুরু
বগুড়ার ১২ থানায় সীমিত পরিসরে কার্যক্রম শুরু

বগুড়া জেলা পুলিশের সকল থানার দাপ্তরিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে এখন থানার বাইরে পুলিশ টহল শুরু করতে পারেনি।

একাত্তরে বয়স ছিল ৮ বছর, এখন তিনি মুক্তিযোদ্ধা
একাত্তরে বয়স ছিল ৮ বছর, এখন তিনি মুক্তিযোদ্ধা

চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলায় জালিয়াতির মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির অভিযোগ উঠেছে মনোয়ার হোসাইন চৌধুরী নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। অথচ মুক্তিযুদ্ধ Read more

আমরা নিরপেক্ষ নই ,    জনতার পক্ষে - অন্যায়ের বিপক্ষে ।    গণমাধ্যমের এ সংগ্রামে -    প্রকাশ্যে বলি ও লিখি ।   

NewsClub.in আমাদের ভারতীয় সহযোগী মাধ্যমটি দেখুন