মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার শেখরনগর ইউনিয়নের দক্ষিণ হাঁটি এলাকায় একটি সরকারি রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ায় এবং সাধারণ মানুষের চলাচলে বাধা সৃষ্টি করায় স্থানীয় বাসিন্দারা মানববন্ধন করেছেন।বুধবার (২৮ মে) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার দক্ষিণ হাঁটি এলাকায় আয়োজিত এই মানববন্ধনে শতাধিক ভুক্তভোগী অংশ নেন। তারা জানান, দক্ষিণ হাঁটি এলাকার ৪০টি পরিবারের একটি সরকারি রাস্তা, যা ইছামতী শাখা নদীর দিকে যাতায়াতের প্রধান পথ, সেটি ব্যক্তি মালিকানার দাবি তুলে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এতে করে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করা চলাচলের পথ এখন অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে। এই জায়গাটির দাগ নং ১২০২/৮১৯।মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন উৎপল দাস, সুব্রত দাস, যমুনা রানী দাস, নিতাই দাস, মমতা রানী দাস, সন্ধী রানী দাস, খগেন মজুমদার, নিখিল সরকার, দিপ্ত দাস, আব্দুল খালেক, বিলাস মন্ডল, মিতা রাণী দাস, অপূর্ব দাস, গৌরাঙ্গ মজুমদারসহ স্থানীয় অনেকে।মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা দ্রুত রাস্তা পুনরায় উন্মুক্ত করে দেওয়ার দাবি জানান এবং প্রশাসনের কাছে এই বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।ভুক্তভোগী উৎপল দাস (৩৭) বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই এই রাস্তা ব্যবহার করে চলাচল করছি। এটি শুধুমাত্র আমার না, ৪০টি পরিবারের মানুষের চলাচলের প্রধান পথ। এখন মন্টু শীলের দুই ছেলে মঙ্গল বিশ্বাস, ভজন বিশ্বাস বেআইনিভাবে দখল করে বাড়ি নির্মাণের চেষ্টা করছে।’ভুক্তভোগী গৌরাঙ্গ মজুমদার (৮৫) বলেন, ‘এই জায়গাটি আমি ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি। এটি একটি সরকারি হালট ছিল, যেখানে দিয়ে মানুষ সবসময় চলাচল করত। এই হালটের পাশে একটি নলকূপ ছিল, যেখান থেকে দূর-দূরান্তের মানুষ পানি নিয়ে খেত। এই জায়গার পাশেই কর্মকার নামের একজন ব্যক্তি তার জমি বিক্রি করেছিলেন। আমি সেই দলিলের একজন প্রত্যক্ষ সাক্ষী। ওই দলিলেও স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে এই জায়গাটি রাস্তা হিসেবে চিহ্নিত। আমি নিজ চোখে দেখেছি দলিলে রাস্তা লেখা রয়েছে।’তিনি আরো বলেন, ‘কিন্তু এখন এই সরকারি হালট বা রাস্তাটিকে মন্টু শীলের দুই ছেলে মঙ্গল বিশ্বাস, ভজন বিশ্বাস ব্যক্তিমালিকানা সম্পত্তি বলে দাবি করছে, যা একেবারেই অনুচিত ও অবৈধ। এতে আমাদের স্বাভাবিক চলাচলে বড় ধরনের বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। আমি প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি এই জায়গাটি যেন আগের মতোই সরকারি হালট হিসেবে থাকে এবং সরকারিভাবে এখানে একটি স্থায়ী রাস্তা নির্মাণ করে দেওয়া হয়, যাতে এলাকার মানুষ আগের মতো চলাফেরা করতে পারে নির্বিঘ্নে।’অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত মন্টু শীলের ছেলে মঙ্গল বিশ্বাস বলেন, ‘এই জায়গাটি আমাদের বৈধ মালিকানাধীন। নিয়মিত খাজনা প্রদান করা হচ্ছে এবং আমাদের নামে দলিল ও নামজারি রয়েছে। ভুলবশত নকশায় হয়তো হালট হিসেবে উঠেছে, কিন্তু বাস্তবে এটি আমাদের জমি।’এ বিষয়ে শেখরনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেবব্রত সরকার টুটুল বলেন, ‘সিএস, এসএ ও আরএস রেকর্ডে একজন কর্মকারের নামে জমিটি রয়েছে। তবে সিএস ও এসএ নকশায় জায়গাটি হালট হিসেবে চিহ্নিত। আরএস নকশা আমি এখনও দেখিনি, তবে আরএস পর্চায় রাস্তার অস্তিত্ব দেখা যায়। আইনগতভাবে আমি খুব অভিজ্ঞ না, তবে ব্যতিক্রমধর্মী কাগজ এটি। যদি এটি সত্যিই রাস্তা হয়, তাহলে মালিকানা দাবি করলে তা আদালতের মাধ্যমে বাতিল করতে হবে। আবার কেউ যদি মালিক হয়, তা আগে প্রমাণ করতে হবে এবং তারপর রাস্তা বাতিলের দাবি জানাতে হবে।’এসআর
Source: সময়ের কন্ঠস্বর