চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে কামার শিল্পীদের ব্যস্ততা বেড়েছে। পশু কোরবানিতে ব্যবহৃত দা, বটি, চাপাতি ও ছুরি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছে তারা। যেনো দম ফেলার সময় নেই কামারদের। নাওয়া-খাওয়া ভুলে কাজ করছেন কামাররা। কাক ডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করে যাচ্ছেন তারা।জীবননগর উপজেলার উথলী গ্রামের কয়েকজন কামার জানান, লোহার দাম, জ্বালানি সংকট ও অতিরিক্ত পরিশ্রমে তৈরি করা নানান জিনিসপত্র বিক্রি করে লাভ কম হওয়ায় বর্তমানে এই শিল্প বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। তারপরেও অনেকে বাপ দাদার কাছ থেকে পাওয়া অতি পুরনো এই পেশাটাকে মায়ার টানে আঁকড়ে ধরে আছেন। বছরের বেশিরভাগ সময়ই কামারদের আর্থিক টানাপোড়েন ও মলিন মুখ দেখা গেলেও ঈদের আগে মলিন মুখে হাসির ঝিলিক দেখা যায়।কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে কামারদের বানানো লোহার তৈরি জিনিসপত্র নিজেরাই বিভিন্ন হাটবাজারে নিয়ে বিক্রি করেন। আবার বিভিন্ন হাটবাজারের বড় বড় ব্যবসায়ীরা তাদের কাছ থেকে পাইকারী দামে দা, ছুরি, চাকুসহ দৈনন্দিন কাজে ব্যবহৃত জিনিসপত্র দোকানে রেখে খুচরা বিক্রি করেন। জীবননগর পৌর শহরের বাসস্ট্যান্ড মোড়ে সপ্তাহের প্রতিদিন হাট বসে। ওই হাটে এসব পসরার দোকান সাজিয়ে বসেন কামাররা। সেসব পণ্য কিনতে ক্রেতাদের ভিড় চোখে পড়ে। হাটবাজার ছাড়াও ক্রেতারা ভিড় জমাচ্ছেন কামার পট্টিতে। বিক্রিও হচ্ছে কিছুটা চড়া দামে।জীবননগর উপজেলার উথলী গ্রামের অনিল কুমার কামার জানান, পশুর চামড়া ছাড়ানো ছুরি ১০০ টাকা থেকে ২০০ টাকা, দা ২০০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা, বটি ২৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা, পশু জবাইয়ের ছুরি ৩০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা, চাপাতি ৫০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।কামার শিল্পীরা বলেন, কোরবানির ঈদ উপলক্ষে কয়লার দাম ও শ্রমিকের দাম বেড়ে গেছে। তবে ক্রেতারা বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে দা, চাপাতি ও ছুরির দাম বেশি নেয়া হচ্ছে।’শিয়ালমারী বাজারে মুনিরা জুয়েল নামে একজন মহিলা ক্রেতা বলেন, ‘কোরবানীর কাজে ব্যবহার করতে জবাই করার ছুরিসহ ৪টি জিনিস রিপেয়ারিং করার জন্য এসেছি।’ আনোয়ার হোসেন নামে এক ক্রেতা জানান, ‘আমি একটি চাপাতি ৬০০ টাকায় কিনেছি।’বাজারের কয়েকজন ক্রেতা জানায়, ‘কোরবানির ঈদের সময় কসাই পাওয়া মুশকিল হয়ে পড়ে। তাই একটা নতুন বটি কিনেছি, আর পুরনো চাপাতি, দা শাণ দিয়ে নিচ্ছি, নিজেরাই কাজে লেগে যাব।’উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে ঘুরে দেখা গেছে, ঈদ যতই এগিয়ে আসছে দা/ছুরি কিনতে গ্রাহকদের আনাগোনাও বাড়ছে। কামারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কোরবানির ঈদ উপলক্ষে বেচাকেনা দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। তবে ঈদের দুদিন আগে থেকে রাত-দিন বেচাকেনা হবে। কোরবানির ঈদ উপলক্ষে কয়লা ও শ্রমিকের মূল্য বেড়ে গেছে। দুই মাস আগেও প্রতি বস্তা কয়লার দাম ছিল ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা। সেই কয়লা এখন ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এ কারণে চাপাতি, ছুরি ও দার দাম একটু বেশি নিচ্ছেন।উপজেলার আন্দুলবাড়ীয়া, রায়পুর, মনোহরপুরসহ বিভিন্ন বাজার ও কামার পাড়া ঘুরে দেখা যায়, লাল আগুনের লোহায় পিটুনিতে সরগরম হয়ে উঠেছে কামার পল্লীর দোকানগুলো। টুং, টাং শব্দের ছন্দে তালমিলিয়ে চলছে হাতুড়ি আর ছেনির কলাকৌশল।কামার শিল্পের সাথে জড়িত মিনা কামার জানায়, ‘ঈদুল আজহার আর মাত্র কয়েকদিন বাকি আছে। আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে আমাদেরকে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করতে হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘জীবননগর উপজেলা ছাড়াও দুরদুরান্তের ব্যবসায়ীরা পাইকারী মালামাল এখান থেকে নিয়ে যান। ঈদে বিপুল চাহিদার জোগান দিতে এক মাস আগে থেকেই কাজ শুরু করেছেন তারা।’ পৌর এলাকার পাথিলা গ্রামের বিকাশ কামার জানায়, ‘কাজের ব্যস্ততায় নিশ্বাস ফেলার সময় নেই। এ ব্যস্ততা থাকবে ঈদুল আজহার আগ পর্যন্ত।’এআই
Source: সময়ের কন্ঠস্বর