চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার ছনখোলা চূড়ামণি এলাকার পাহাড়ি টিলা—যা ছিল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অমূল্য অংশ—আজ তা যেন কাটাছেঁড়ার কবলে পড়ে ম্লান হয়ে গেছে। একসময় সবুজে ছেয়ে থাকা এই পাহাড়ি টিলাগুলোর পেট চিরে মাটি চুরি চলছে দিনের আলোর মতো। এই অবৈধ কার্যক্রমের পেছনে রয়েছে একটি সুপরিকল্পিত সিন্ডিকেট। তারা পাহাড় কাটা থেকে শুরু করে মাটি পরিবহন পর্যন্ত পুরো চক্র নিয়ন্ত্রণ করছে। পাহাড় কাটার সরঞ্জাম, শ্রমিক ও ট্রাকের ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গোপনীয়ভাবে চালানো হচ্ছে। ছনখোলা এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে পাহাড় কেটে মাটি সরবরাহের অভিযোগে শনিবার (২৪ মে) বেলা ১১টায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানে দুই ইটভাটার ম্যানেজারকে মোট দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।অভিযান সূত্রে জানা যায়, ছনখোলার পাহাড়ি টিলার মাটি অবৈধভাবে কেটে ‘এইচএবি’ ও ‘এমবিএফ’ ইটভাটায় সরবরাহ করা হচ্ছিল। স্থানীয়দের অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে রাতের আঁধারে চলছে এই অবৈধ কার্যক্রম, যা পরিবেশ ও কৃষিজমির জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।সরেজমিন দেখা গেছে, ছনখোলা চূড়ামণি এলাকায় পাহাড় কাটা ও মাটি পরিবহনের চিহ্ন স্পষ্ট। পাহাড়ের পেটে বড় বড় গর্ত, পাশ দিয়ে চলছে মাটি ভর্তি ট্রাকের আনাগোনা। স্থানীয়দের মুখে একটাই অভিযোগ, পাহাড় কাটা বন্ধ করতে প্রশাসন যথেষ্ট তৎপর নয়।অভিযান পরিচালনা করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফারিস্তা করিম। সঙ্গে ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সিনিয়র রসায়নবিদ জান্নাতুল ফেরদৌস, স্থানীয় থানা পুলিশের সদস্য ও ভূমি অফিসের কর্মকর্তারা।‘এইচএবি ব্রিকস’ ও ‘এমবিএফ ব্রিকস’ ইটভাটার মালিকানা ও ব্যবসার কার্যক্রম নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে নানা জল্পনা রয়েছে। দুই ইটভাটার ম্যানেজার রাবেত ইসলাম ও মানিক দেবনাথ অভিযানের সময় অভিযুক্ত হন। তারা অভিযোগ অস্বীকার করলেও ভূমি অফিস ও পরিবেশ অধিদপ্তর নিশ্চিত করেছে, তাদের কাছে বৈধ অনুমতি নেই।পাহাড় কাটা শুধু পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর নয়, এটি স্থানীয় কৃষকদের জীবনযাত্রাকেও বিপর্যস্ত করছে। মাটি ক্ষয় ও পাহাড় ধ্বংসের ফলে সেচ ব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে, যা ফসলের উৎপাদনে প্রভাব ফেলছে।স্থানীয় কৃষক ও সাধারণ মানুষ প্রশাসনের পদক্ষেপকে স্বাগত জানালেও তাদের মধ্যে রয়েছে অনেকে, যারা বলছেন, শুধু জরিমানা দিয়ে সমস্যা সমাধান হবে না। মূল সিন্ডিকেট ও রাজনৈতিক ছত্রছায়া না ভেঙে পাহাড় কাটার কাজ বন্ধ হবে না।সাতকানিয়া ও আশপাশের এলাকা দীর্ঘদিন ধরেই পাহাড়ি মাটি কাটা নিয়ে পরিচিত। বিভিন্ন সময়ে প্রশাসন অভিযানে নামলেও অবৈধ কার্যক্রম থেমে যায়নি। স্থানীয়রা বলছেন, পাহাড় কাটার পেছনে রয়েছে প্রভাবশালী সিন্ডিকেট, যার কারণে প্রশাসন কার্যক্রম সীমাবদ্ধ।বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ অনুযায়ী, পাহাড় বা টিলা কাটার ক্ষেত্রে অনুমতি ছাড়া কোন কাজ করা যায় না। প্রশাসন অবৈধ পাহাড় কাটাকে দণ্ডনীয় অপরাধ মনে করে এবং কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত জরিমানার মাধ্যমে বার্তা দিয়েছে এই ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে।সাতকানিয়া উপজেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর যৌথভাবে পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয়দের সচেতনতা বৃদ্ধি ও কঠোর নজরদারি প্রয়োজন বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।সাতকানিয়া ছনখোলা এলাকায় পাহাড় কেটে মাটি সরবরাহের অভিযোগে দুই ইটভাটার ম্যানেজারকে জরিমানা করা হলেও, মূল সিন্ডিকেটের সন্ধান এখনও অধরা। প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত থাকলেও এর দীর্ঘমেয়াদি সাফল্যের জন্য প্রয়োজন সমন্বিত প্রচেষ্টা।সাতকানিয়ার পাহাড়ি টিলা কাটা বন্ধে প্রশাসনের কাজ যতটা কঠোর হওয়া প্রয়োজন, বাস্তবে তা অনেক সময় ঝামেলা ও রাজনৈতিক চাপের মুখে সীমাবদ্ধ থাকে। স্থানীয় সিন্ডিকেট ও কিছু অসৎ কর্মকর্তার শর্তে অভিযান সফল হওয়া কঠিন।স্থানীয়রা প্রশাসনের কাজকে সমর্থন করলেও, তারা আরও জোরালো পদক্ষেপ চাইছেন। তারা বলছেন, জরিমানা শুধু সাময়িক প্রতিবন্ধকতা, মূল সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে শক্তিশালী ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।সাতকানিয়ার পাহাড় কাটা ও মাটি বিক্রির অভিযোগ নতুন নয়। অতীতে বহুবার প্রশাসন অভিযান চালিয়েছে, কিন্তু অধিকাংশ সময় সিন্ডিকেটের জোরে এসব কার্যক্রম অব্যাহত থেকেছে।স্থানীয়দের মতে, পাহাড় কাটার পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক প্রভাব ও অর্থের লেনদেন, যার ফলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও অনেক সময় পিছিয়ে পড়ে।ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করা হলেও অপরাধীরা বড়লোক ও সিন্ডিকেটের ছত্রছায়ায় থেকে যায় বলে অভিযোগ রয়েছে।বিশ্লেষকরা বলছেন, পাহাড় কাটার অবৈধতা বন্ধ করতে দরকার ব্যাপক পরিকল্পনা ও স্থানীয়দের অংশগ্রহণ। শুধুমাত্র অভিযান ও জরিমানা দিয়ে সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।একাধিক দিক থেকে কাজ করতে হবে—সরকারি উদ্যোগ, জনসচেতনতা, স্থানীয় সম্প্রদায়ের সহযোগিতা, এবং কঠোর আইনি ব্যবস্থা।উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফারিস্তা করিম জানান, অনেকদিন ধরেই ওই এলাকায় অবৈধ পাহাড় কাটার খবর পাচ্ছিলেন। নানা পর্যায়ে অনুসন্ধান শেষে শনিবার অভিযান পরিচালনা করা হয়।তিনি বলেন, “আমরা শুনেছি, রাতে পাহাড় কেটে মাটি সরবরাহ হচ্ছে। অভিযোগ পাওয়ার পরই অভিযান চালানো হয়। দুই ইটভাটার ম্যানেজারদের বিরুদ্ধে জরিমানা আরোপ করা হয়েছে।”এনআই

Source: সময়ের কন্ঠস্বর

সম্পর্কিত সংবাদ
শাহজালাল বিমানবন্দরে ফ্লাইট ওঠা-নামা শুরু
শাহজালাল বিমানবন্দরে ফ্লাইট ওঠা-নামা শুরু

ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে।

আমরা নিরপেক্ষ নই ,    জনতার পক্ষে - অন্যায়ের বিপক্ষে ।    গণমাধ্যমের এ সংগ্রামে -    প্রকাশ্যে বলি ও লিখি ।   

NewsClub.in আমাদের ভারতীয় সহযোগী মাধ্যমটি দেখুন